ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

সময়ের শপথ, সময়ের মূল্য

প্রকাশিত : ১০:৩৩ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৮ শনিবার

 

এ পৃথিবীতে মানুষের আয়ুষ্কাল খুবই সামান্য। এই সামান্য মুহূর্তকে যারা ভালোভাবে কাজে লাগায় তারাই কেবল শ্রেষ্ঠ মানুষ। তারা সহজেই জীবনে সফলতা লাভ করতে পারে। আর যারা হেলায় সময় অতিবাহিত করে তাদের জন্য অপেক্ষা করে দু:খ। তাদের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।

কবি সুইনবার্গ বলেন, ‘Life is a vision of a watch between a sleep and sleep. অর্থাৎ দুই প্রান্তেই ঘুম, ঘুমের মতো অন্ধকার, মাঝে একটু বেঁচে থাকাই হলো জীবন।

বাংলার লোক কবিদের কন্ঠেও উচ্চারিত হয়েছে এরকমই উক্তি, ‘এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা, মাঝখানে চর’ অর্থাৎ এপারে জন্ম ওপারে মৃত্যু মাঝখানে সীমাবদ্ধ জীবন। জীবনের এই সীমাবদ্ধতার জন্যই সময় এত বেশি মূল্যবান।

জনৈক ইংরেজী কবি বলেন, ‘Time and tide wait for none’. অর্থাৎ সময় এবং স্রোত কারো জন্যই অপেক্ষা করেনা।’

বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিদের দিকে তাকালে দেখা যায় তারা কেউই সময়ের মূল্য সম্পর্কে উদাসীন ছিলেন না। তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই ছিল কর্মচঞ্চল ও কর্মবহুল।

সময়ের মূল্য সম্পর্কে অবগত থাকাই হলো সময়ানুবর্তিতা। তাই প্রত্যেকের উচিত সময়ানুবর্তিতা মেনে জীবন পরিচালনা করা।

এদিকে বিদায় হজের ভাষণে হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘হে মানুষ! প্রত্যেককেই শেষ বিচারের দিনে সকল কাজের হিসাব দিতে হবে। অতএব সাবধান হও।’ অর্থাৎ মানুষ কিভাবে তাদের জীবন পরিচালনা করেছে তার হিসাব দিতে হবে।

অপরদিকে পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে যে, ‘আর একটু ঘুম, আর একটু তন্দ্রা, বিছানায় আর একটু গড়াগড়ি। এসব কিছু দরিদ্র ও অভাব দস্যুর মত তোমার অন্তরে হানা দেবে।’ (হিতোপদেশ ২৪:৩৩ ও ৩৪)

ভগবত গীতায় বলা হয়েছে, ‘মানুষের অধিকার শুধু কর্মে। ফলে তার অধিকার নাই। কাজ কর। নিজেকে কর্মফলের ধারক মনে করো না। আবার নিজেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে দিও না।’ (সংখ্যা যোগ-৩৭:৩৮)

 

তিরমিজী শরীফে বলা আছে শেষ বিচারের দিনে মানুষকে পাঁচটি বিষয়ের হিসেব দিতে হবে।

১) সময় কীভাবে ব্যয় করেছে?

২) মানসিক ও দৈহিক শক্তি কীভাবে ব্যয় করেছে?

৩) সম্পদ কীভাবে অর্জন করেছে?

৪) কীভাবে সম্পদ ব্যয় করেছে?

৫) যা সত্য বলে জেনেছে, তা কতটুকু অনুসরণ করেছে।

 

হযরত মোহাম্মদ (সো.) বলেছেন ৫টি অবস্থানে জীবনে অতীব মূল্যবান মনে কর।

১) বার্ধক্য আসার পূর্বে যৌবন কালকে।

২) রোগে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে।

৩) দারিদ্রতা আসার পূর্বে স্বচ্ছলতাকে।

৪) ব্যস্ততার পূর্বে অবসরকে।

৫) মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে।

এ থেকে বুঝা যায় জীবনের সবক্ষেত্রেই সময়ের মূল্য দিতে হবে।

সময়ের কাজ সময়ে করা বা সময়কে মূল্য দেওয়া নিয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদীস শরীফের বিভিন্ন স্থানে সতর্ক করা হয়েছে।

সূরা আসরে বলা হয়েছে, ‘সময়ের শপথ। নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তবে তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্য ও ধৈর্য ধরার উপদেশ দেয়।’

বিশিষ্ট সূফি সাধক শামস তাবরেজী বলেন, অনেকদিন এ সূরার মর্মবাণী উপলব্ধি করার চেষ্টা করছিলাম। একদিন বাজারে শুনতে পেলাম একজনের চিৎকার। তিনি বলছেন, হে লোক সকল আমার মূলধন পানি হয়ে যাচ্ছে। সামনে গিয়ে দেখি তিনি একজন বরফ ব্যবসায়ী। অর্থাৎ তার বরফ দ্রুত গলে পানি হয়ে যাচ্ছে। এভাবে তার মূলধনও হারিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের জীবনে সময়ের মূল্য দিয়ে আল্লাহর নির্দেশিত পথে না চলতে পারলেও সময় কিন্তু শেষ হয়ে যাবে। পরে শত চেষ্টা করেও সময় ফিরে পাওয়া যাবে না।  

পৃথিবীর বিখ্যাত, প্রতিষ্ঠিত, কালজয়ী মানুষদের দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা কেউই সময়ের অপচয় করেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যাকে গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলা হয় সেই আব্রাহাম লিংকন থেকে শুরু করে বিশ্ববিখ্যাত সবাই সময়ের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন।

আমেরিকার অন্যতম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মাত্র ৪৪ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তিনি মূলত আমেরিকায় এসেছিলেন অভিবাসী হয়ে। যিনি একাধারে অভিবাসী ও নিগ্রোও ছিলেন। আমেরিকানরা যাদেরকে অপছন্দ করেন তাদের সবগুণই তার মধ্যে ছিল। কিন্তু ওবামা তার নিরলস পরিশ্রম ও সময়ের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে তারা স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেন।

আরকে//