শীতে রোগ-ব্যাধি বাড়ার কারণ : ডা. মো. কামরুল হাসান জায়গীরদার
প্রকাশিত : ০৭:১৬ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১২:১৪ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার
অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান জায়গীরদার
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভৌগোলিক কারণে আবহাওয়া ও পরিবেশও পরিবর্তন হয়ে থাকে। শীতকালে শুকনো আবহাওয়ায় সাধারণত বায়ুবাহিত ও ফুসফুসের রোগ বেশি হয়। এসময় সর্দি-কাশি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত অ্যালার্জিক একজিমা, পচড়া রোগ, শিশুদের নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে।
শীতকালে কীভাবে সুস্থ্ থাকা সম্ভব, কী করলে রোগ-ব্যাধি আক্রমণ করবে কম–সেসব বিষয়ে একুশে টিভি অনলাইনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান জায়গীরদার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
একুশে টিভি অনলাইন: শীতকালে মানুষের কী কী ধরনের রোগ হয় সাধারণত ?
অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান জায়গীরদার: শীতের কারণে মানুষের সাধারণ সর্দি-কাশি, অ্যাজমা বা হাঁপানি বাড়ে, ব্রঙ্কাইটিস বাড়ে, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে কিছু ভাইরাস জ্বর দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে যাদের ব্যাথা জাতীয় রোগ আছে, বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি গিটে গিটে ব্যাথা বেড়ে যায়৷ ঠাণ্ডার কারণে এই রোগগুলো বেশি দেখা যায়৷ টনসিল ফুলে যায়, সাইনোসাইটিজ হয়, যেটা ছোট বাচ্চাদের বেশি দেখা যায়৷ স্কিনের কিছু রোগ বাড়ে৷ অ্যালার্জি কুলকানি হয়৷ চামরা শুষ্ক হয়ে যায় ঠোঁট, মুখ,ও পা ফাটা রোগ বেড়ে যায়৷
একুশে টিভি অনলাইন: এই রোগগুলো শীতকালেই কেন বেশি হয় ?
অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান জায়গীরদার : যেহেতু আর্দ্রতা পরিবর্তন হয়, বাতাসে ধুলা-বালি বেশি উড়ে, তাই শীতকালে এসব রোগ বেশি হয় ৷ আর ঠাণ্ডা লাগলে তো যে কারো কাশি বা অ্যাজমা হতেই পারে৷ এগুলো তো ঠাণ্ডার রোগ৷ ঠাণ্ডার সময়ই বেশি হয়৷ গরমকালে যে হয় না, তা নয়৷ তবে শীতকালেই বেশি হয়৷ শীতে মাসলগুলো স্টিফ হয়ে যায়৷ মাংসগুলো খিচে আসে ঠাণ্ডার জন্য৷ একারণে ব্যথাগুলো আরও বেড়ে যায়৷
যেহেতু আর্দ্রতা পরিবর্তন হয়, বাতাসে ধুলা-বালি বেশি উড়ে, তাই শীতকালে রোগ বেশি হয়। সব বয়সী রোগীদের সব রোগ দেখা দিতে পারে। কিন্তু ছোট বাচ্চা বা বয়স্ক যারা, তাদের রোগটা বেশি হয়৷ যাদের বয়স ৬০-৭০ বছর তাদের সহ্য ক্ষমতা কমে আসে৷ ফলে তারা আক্রান্ত হন বেশি৷ বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয়৷
একুশে টিভি অনলাইন: এই রোগগুলো থেকে দূরে থাকতে করণীয় কী?
অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান জায়গীরদার: প্রথম কথা হলো, শীতকে প্রতিরোধ করতে হবে৷ ভালো গরম কাপড় পরতে হবে৷ বিশেষ করে বাচ্চাদের ভালো গরম কাপড় পরাতে হবে৷ মাথা ঢাকতে হবে, কানে শীত বেশি লাগে, কান ঢেকে রাখতে হবে৷ খেয়াল রাখতে হবে, ঠাণ্ডা যেন না খায়, কুসুম কুসুম গরম পানি খেতে হবে৷ যে শীতে মানুষের মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। শীতকালে মানুষ মোটা কাপড় পরিধান করে। যা অনেক সময় অপরিষ্কার,অপরিছন্ন থাকে। ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে থাকে ও নিজেও অপরিচ্ছন্ন থাকার কারণে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়, যেমন পাঁচড়া, খুজলি সোরিয়াসিস, অ্যাকজিমা,ব্রণ। কিছু চর্মরোগ আছে, যেগুলো সাধারণত শরীরের বাইরের পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে। আবার কিছু কিছু চর্মরোগ আছে, যেগুলো শরীরের ভেতরের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। এসব চর্মরোগের মধ্যে স্কেবিস, অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস ও নাইকেন্স সিমপ্লেক্স কনিকাস অন্যতম। চর্মরোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। চর্মরোগের চিকিৎসা গ্রহণে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। তবে কিছু কিছু চর্মরোগ রয়েছে, যেগুলো পরিপূর্ণ চিকিৎসা নেওয়ার পরও ভালো হয় না। কিন্তু চর্মরোগ হওয়ার পর অনেক দিন পর্যন্ত চিকিৎসা গ্রহণ করা না হলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিছু কিছু চর্মরোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবা গ্রহণের কারণে লিভার ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রোগীর সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শমতো চলা উচিত।
তবে পাঁচড়া জাতীয় চর্মরোগের লক্ষণ হলো আঙ্গুলের মাঝখানে, কব্জিতে, কোমরের চারদিকে, যৌনাঙ্গের আশপাশে, শরীরের অন্যান্য অংশেও ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা যায়।
একুশে টিভি অনলাইন : আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান জায়গীরদার: একুশে টিভি পরিবারকেও ধন্যবাদ।
এসএইচ/