ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

একজন নারী কীভাবে বুঝবেন তার পুরুষ সঙ্গী একজন নিপীড়ক? 

প্রকাশিত : ১২:০২ এএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১২:১৪ এএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার

তিনি সব সময়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কী করছেন বা কার সঙ্গে আছেন। আপনি যদি এসব কথার জবাব না দেন, তাহলে তিনি ক্ষেপে উঠছেন। তিনি আপনাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন যাতে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা এড়াতে হলে আপনার কী করা উচিত।

যদি এরকম কোন বন্ধু বা আত্মীয়দের সঙ্গে আপনার এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তাহলে সম্ভাবনা আছে যে, আপনি হয়তো একজন নিপীড়ক পুরুষের পাল্লায় পড়েছেন, যে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।

এটাই মনে করেন মেক্সিকোর মনোবিজ্ঞানী টেরে ডিয়াজ সেন্ড্রা। কিভাবে নিপীড়ক বা নির্যাতনকারী সঙ্গীকে চেনা যায়। এ বিষয়ে তিনি একটি বই লিখেছেন।

এটা হয়তো এই শতাব্দীতে অদ্ভুত শোনাতে পারে, যখন আমরা লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে রয়েছি। কিন্তু আমি বলবো, এই রোগীরা তাদের তাদের আধিপত্যবাদী,নিয়ন্ত্রণকারী আচরণের মধ্যে আটকে রয়েছে। বিবিসি মুন্ডো সার্ভিসকে তিনি বলছেন।

‘কিন্তু এটা ঘটছে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে।’

পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞ টেরা ব্যাখ্যা করেছেন, কর্তৃত্ববাদী আচরণ কী? কীভাবে সেটি সনাক্ত করতে হয় এবং কীভাবে তা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হয়।

মনোবিজ্ঞানী টেরে ডিয়াজ সেন্ড্রা বলছেন, প্রত্যেক নারীকেই তার নিপীড়ক পুরুষ সঙ্গী সম্পর্কে সতর্ক হওয়া উচিত

কর্তৃত্ববাদী বা নিপীড়ক সঙ্গী বলতে কি বোঝায়?

এমন একজন ব্যক্তি, যিনি রূঢ়, নিষ্ঠুর বা অমার্জিত এবং অসম্মানজনক আচরণ করে থাকেন।

আমরা সবাই কোন না কোন সময় কর্তৃত্ববাদী আচরণ করে থাকি, কিন্তু একজন নিপীড়ক হিসাবে তাকেই বুঝতে হবে, যিনি কিছু অতিরিক্ত কিছু সুবিধা ব্যবহার করে। অন্য কোন ব্যক্তিকে তার ইচ্ছা,আগ্রহ, চাহিদা বা প্রয়োজনের কাছে নত হতে বাধ্য করে।

একজন নিপীড়কের কৌশল কী হতে পারে?

সাধারণভাবে বলতে গেলে আসক্তি, অন্যায় সুযোগ নেওয়া বা ভীতি দেখানো যার মধ্যে হুমকি দেওয়ার মতো আচরণও রয়েছে।

সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনাগুলোর একটিকে বলা হয় ‘বিপথগামী নিপীড়ক’-এটি এমন এক ধরণের মানসিক আচরণগত ক্রুটি,যাদের আচরণে নিজেদের নিয়ে অত্যন্ত গর্ব প্রকাশ পেয়ে থাকে।

তারা তাদের সঙ্গীকে পুরোপুরি অকার্যকর, নিশ্চুপ, বোধহীন করে ফেলে যতক্ষণ পর্যন্ত সেই মেয়েটি নিজেই বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, আসলে তারই দোষ। কেউ তার কথা শুনতে চায় না এবং তার অন্যকোন জীবনযাপনের ক্ষমতাও নেই।

এরাই হচ্ছে চরম ধরণের নিপীড়ক।

নিপীড়ক সঙ্গীর কিছু বৈশিষ্ট্য

সঙ্গী বা সম্পর্কের পেছনে তিনি কোন সময় দিতে চান না

অন্যদের প্রতি তার আচরণ অসম্মানজনক

সবসময় তিনি প্রধান চরিত্রে বা মনোযোগের কেন্দ্রে থাকতে চান

অন্যদের আবেগ বা অনুভূতির কোন মূল্য তার কাছে নেই

তিনি হচ্ছেন কর্তৃত্ববাদী এবং অধিকার খাটাতে চান

নিজের কাজ বা প্রতিক্রিয়ার জন্য তিনি কোন দায়িত্ব নিতে চান না

তার মতো না হলেই তার নিজের সঙ্গীসহ অন্যদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে থাকেন

তিনি অনেক সময় এমন কৌতুক বা বিদ্রূপ করে থাকেন, তা যেন একটি খারাপ আচরণের ওপরের অংশের মতো

তিনি নিজের সন্তুষ্টি আর যৌন চাহিদার ওপর বেশি গুরুত্ব দেন

মিথ্যা কথা বলেন

অন্যদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে জয় পাওয়ার চেষ্টা করেন

অনেক সময় তাকে বেশ আকর্ষণীয় বা মজাদার বলে মনে হয়

মেয়েদের মধ্যেও কি নিপীড়ক আছে?

অনেক সময় নিপীড়ন নির্ভর করে কে কোন অবস্থায় রয়েছে - তার ওপর।

তবে সামাজিক অনেক কারণে নারীরা অন্য অনেক মানুষকে কেন্দ্র করে যেন একটি উপগ্রহের মতো জীবনযাপন করেন। যেমন সন্তান এবং সঙ্গীকে ঘিরে তাদের জীবনযাত্রা চলে। অন্যদিকে পুরুষরা মূলত তাদের জীবনে নিজেকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

তবে নারীরাও নিপীড়ক হতে পারেন। তিনি হয়তো তার সঙ্গীকে আবেগ তাড়িতভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে পারেন অথবা হয়তো সন্তানদের ক্ষেত্রে দেখা সাক্ষাতে বিধি-নিষেধ দিতে পারেন।

এমনকি খারাপ আচরণ বা সঙ্গীকে ছোট করে তোলার জন্য জন্য আরও কিছু উপায় ব্যবহার করতে পারেন বা অন্য ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করে তুলতে পারেন।

নিপীড়ন করা কি জন্মগত?

সোজা কথায় বলতে হলে, এখানে বেশ কিছু বিষয় জড়িত রয়েছে।

অনেক মানুষ আছে, যারা নিপীড়ক হিসাবে জন্ম নেননি, কিন্তু তাদের আবেগপ্রবণ এবং রাগী ব্যক্তিত্ব রয়েছে। তাদের ধৈর্য কম থাকে,আগে থেকেই কোন কিছু ধারণা করে নেন এবং সহজ তৃপ্তি খোঁজেন।

এ ধরণের মানুষজন সহজেই প্রতিক্রিয়া দেখান হয়তো অনিচ্ছাকৃত হলেও সেরকম আচরণ অনেক সময় অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

অনেক সময় ছেলেদের ‘পুরুষ’ হতে শেখানো হয়। অনেক সংস্কৃতি এটা স্বাভাবিক একটি আচরণ, যার ফলে অনেকের মধ্যে একটি উঁচু মানসিকতা তৈরি হয়, এবং চরম বিপথগামী নিপীড়ক তৈরি করে।

সুতরাং, নারীরাও নিপীড়ক তৈরি করছে?

এক্ষেত্রে নারীরা এর মধ্যে জড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয় তারা নিপীড়ক তৈরি করে না।

আমরা এমন একটি পিতৃতান্ত্রিক বিশ্বে বাস করি, যেখানে অনেক পরিস্থিতিতে মানুষ কর্তৃত্ব, দখল বা নিপীড়নের ব্যাপারগুলো স্বাভাবিক বা চাপিয়ে রাখতে চেষ্টা করে।

যখন একজন নারী দৃঢ়, সরাসরি এবং খানিকটা উষ্ণ হয়ে ওঠেন, তখন তাকে ‘পাগলাটে’ যৌনতার দিক থেকে হতাশ বলে মনে করা হয়।

কিন্তু একজন পুরুষের মধ্যে এসব লক্ষণ দেখা গেলে তাকে বলা হয় শক্ত চরিত্র।

নিপীড়করা কি পাল্টাতে পারে?

তারা যদি চায় তাহলে অবশ্যই পারে। কিন্তু এটা খুবই কঠিন, কারণ যারা বাড়তি সুযোগ সুবিধা পেয়ে আসছে, তারা কেউ সেটি হারাতে চায় না।

আপনার যদি এমন কারো সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে থাকে, যার মধ্যে এ রকম নিজেকে বড় ভাবার রোগ আছে এবং এসব নিপীড়কের বৈশিষ্ট্য দেখতে পান, তাহলে তার উচিত সেই সম্পর্ক থেকে পালানো।

তবে হয়তো অনেক সময় দেখা যাবে যে, অনেক পুরুষ বলছে তারা কখনো বুঝতে পারেনি যে, তারা অন্যদের সাথে লড়াই করছে। অন্যদের পাল্টানোর চেষ্টা বাদ দিয়ে এরকম ব্যক্তিরা হয়তো নিজেদের পাল্টে নিতে পারে।

আপনি পুরুষদের কী বলবেন?

পুরুষদের ক্ষেত্রে এজন্য বড় মূল্য চোকাতে হতে পারে। অনেক সম্পর্কের বদলের ক্ষেত্রে নারীরা অনেক বেশি সহানুভূতি এবং মানসিক সমর্থন পেয়ে থাকেন।

বিচ্ছেদের কারণে পুরুষরা অনেক বেশি শারীরিক এবং মানসিক ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তারা নিশ্চিত হতে পারে না যে, তারা যা সেজন্য তাদের কেউ আর ভালোবাসবে কিনা। অনেক পুরুষ মনে করে, তাদের শক্তিশালী হওয়া উচিত এবং সবকিছু রক্ষা করা উচিত। তাকে পেশার ক্ষেত্রেও সফল হওয়া উচিত।

কিন্তু তাদেরও কষ্ট আছে। কিন্তু তারা মনে করে এটা নিয়ে কোন কথা বলা তাদের উচিত না। কারণ তাহলে তাদের হয়তো দুর্বল বলে মনে করা হতে পারে। কিন্তু যে পুরুষরা এই ধাপ পার হয়ে আসতে পারে তাদের জন্য বিশাল মুক্তি অপেক্ষা করছে।

নারীদের জন্য পরামর্শ কী?

প্রেম খুব চমৎকার একটি ব্যাপার কিন্তু আমাদের সবারই সেটা খোঁজা উচিত। কিন্তু অনেক নারী মনে করেন। প্রেম হচ্ছে একমাত্র জিনিস সেজন্য তারা ব্যক্তিত্বের অন্য কিছুকে আর গুরুত্ব দেন না।

তাদের সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, তাদের উচিত ভালো প্রেমকে স্বাগত জানানো আর খারাপ প্রেমকে বিদায় জানানো। প্রেমকেই জীবনের একমাত্র বিষয় বলে ভাবা উচিত না। (সূত্রঃ বিবিসি বাংলা)

কেআই/এসি