শুল্ক বৈষম্যে মালয়েশিয়ায় রফতানিতে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ
প্রকাশিত : ০২:০৭ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার
শুল্ক বৈষম্যের কারণে এশিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত মালয়েশিয়ায় পণ্য রফতানিতে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। দেশটিতে আসিয়ানভুক্ত থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো ফ্রুট ড্রিংক ও বেভারেজ পণ্যগুলো রফতানি করছে শূন্য শুল্কে। অথচ বাংলাদেশের প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে একই পণ্য রফতানিতে গুণতে হচ্ছে ৩০ শতাংশ রফতানি শুল্ক। রফতানিতে অতিরিক্ত এ শুল্ক দিতে গিয়ে অন্যান্য দেশের তুলনায় রফতানি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় ২০টি ব্যাটারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান রহিমআফরোজ। কয়েক বছর ধরে গাড়ি ও মোটরসাইকেলে ব্যবহূত অটোমেটিভ ব্যাটারি মালয়েশিয়ায় রফতানি করছে প্রতিষ্ঠানটি। মালয়েশিয়ার বাজারে ব্যাটারি রফতানি ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক ও সেলস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স (এসএসটি) হিসেবে আরো ১০ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়ে। যেখানে চীন ও ভারত থেকে আসা ব্যাটারি মালয়েশিয়ার বাজারে ঢুকছে শূন্য শতাংশ শুল্কে।
রহিমআফরোজ গ্রুপের হেড অব করপোরেট শহিদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ২৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধের পরও গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য মালয়েশিয়ায় রফতানি করেছে রহিমআফরোজ। যেখানে চীন ও ভারত থেকে যাওয়া ব্যাটারির জন্য কোনো শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে না। শুল্ক বাধার পাশাপাশি গত অর্থবছরে হঠাৎ করেই ১০ শতাংশ এসএসটি আরোপ করে মালয়েশিয়া সরকার। এর প্রভাবে ব্যাটারির দাম বেড়ে যায় এবং ব্যবসা হারায় রহিমআফরোজ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মাত্র ৫২ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি।
তিনি বলেন, শুল্ক বাধার বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসও বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।
জানা গেছে, বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী এ ভোক্তাশ্রেণীকে লক্ষ্য করে ২০১০ সাল থেকে দেশটিতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানি করে আসছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।
মালয়েশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্য, চিংড়ি, কাঁকড়া, পাট ও পাটজাত পণ্য, মসলা, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, আলু, শাক-সবজি, সিরামিক টেবিলওয়্যার, হিমায়িত মাছ, তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার, টেক্সটাইল ও হালাল খাদ্যপণ্য রফতানি হচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের কারণে প্রাণ ও স্কয়ার গ্রুপের ভোগ্যপণ্যের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, প্রাণের খাদ্যপণ্যের বিশাল চাহিদা রয়েছে মালয়েশিয়ায়। বিস্কুট, চানাচুর, মসলা, বিভিন্ন ফলের জুস প্রক্রিয়া করে আমাদের প্রতিষ্ঠান রফতানি করে। প্রতি বছরই প্রায় ২০ শতাংশ হারে পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। তবে শুল্ক বাধার কারণে আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে।
তবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি ও দুই দেশের বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে বাংলাদেশকে এফটিএর জন্য ২০১২ সালে প্রস্তাব দিয়েছিল মালয়েশিয়া। দীর্ঘ এ সময়েও দেশটির সঙ্গে এফটিএতে লাভ-ক্ষতির হিসাব চূড়ান্ত হয়নি।
এর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালয়েশিয়া সফরের সময়েও দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক এফটিএ সইয়ের আহ্বান জানান। সে সময় এফটিএর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্পবিষয়ক মন্ত্রী দাতো মুস্তফা মোহাম্মদ বাংলাদেশ সফরের সময়ও এফটিএ স্বাক্ষরের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিএমসিসিআই) সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশী ৩৩০টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু এটা আসলে কাজে আসছে না।
কারণ এর অধিকাংশ পণ্যই আমরা উৎপাদন করি না। বাংলাদেশ থেকে সিরামিক পণ্য রফতানি হয়। যেটির ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। পোশাক পণ্যের মধ্যে বেশি যাচ্ছে টি-শার্ট ও শার্ট। এটিও শুল্কমুক্ত নয়। একইভাবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানি করছে প্রাণ ও স্কয়ার। যারা আবার আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ওইসব দেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। ভারত ও চীনের সঙ্গে মালয়েশিয়ার এফটিএ রয়েছে। সে কারণে ওইসব দেশের পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে। মালয়েশিয়া এফটিএর জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এফটিএ করলে লাভ না লোকসান সে বিষয়ে এত বছরেও সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) রাজিবুল আহসান এ প্রসঙ্গে বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের একটি সম্ভাবনাময় বাজার। মালয়েশিয়াকে আসিয়ান বাণিজ্য অঞ্চলের একটি করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে আসিয়ানভুক্ত অন্যান্য দেশে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। শুল্কের বিষয়টি নিয়ে দূতাবাস কাজ করছে।
আরকে//