ঢাকা, শনিবার   ১১ জানুয়ারি ২০২৫,   পৌষ ২৮ ১৪৩১

চীনে মায়ের গর্ভস্থ শিশুর জিন পাল্টে দেওয়ার দাবি

প্রকাশিত : ০৯:০৯ এএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবী এই প্রথম একটি মানব-সন্তান পেয়েছে বলে দাবি করেছেন এক চীনা বিজ্ঞানী। তবে, এই দাবির সত্যতা নিয়ে দেখা দিয়েছে ঘোর সন্দেহ।

মায়ের পেটে ভ্রূণ অবস্থায় রেখেই জেনেটিকেলি বা জিনগত কিছু পরিবর্তন ঘটিয়েছেন বলে দাবি করেছেন অধ্যাপক হি জনকুই। কিন্তু এই ধরণের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই নিষিদ্ধ।

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম

বংশ পরম্পরায় যে সব রোগ আমরা বহন করে থাকি ভ্রূণের জেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়ে তা ঠেকানো সম্ভব। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানব-ভ্রূণের জেনেটিক পরিবর্তন আনার এই বিষয়টি ব্যক্তি তথা পুরো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতির কারণ হতে পারে। ইংল্যান্ডসহ পৃথিবীর নানা দেশে ‘জেনেটিকেলি মডিফায়েড’ শিশু জন্ম দেওয়াকে নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে।

তবে এই বিষয়ে বিজ্ঞানীদের অবশ্যই বিভিন্ন গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে বলা হয়, গবেষণা শেষে এ সংক্রান্ত সব আলামতকে একেবারে নষ্ট করে দিতে হবে।

ডিজাইনার বেবি

অধ্যাপক হি, মানব শিশুকে মায়ের গর্ভে ভ্রুণাবস্থায় রেখেই জেনেটিকেলি কিছু পরিবর্তন এনেছেন বলে যিনি দাবি করেছেন, তিনি মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। দক্ষিণ চীনের শেনজেন শহরে তার গবেষণাগার রয়েছে।

অধ্যাপক হি বলেছেন, জমজ দুই মেয়ে শিশুর, জিন-সম্পাদনার ক্ষেত্রে তিনি জিন এডিট করার যন্ত্র ব্যবহার করেছেন। জমজ এই দুই শিশুর নাম তিনি বলেছেন, লুলু ও নানা।

এক ভিডিওতে অধ্যাপক হি দাবি করেছেন, সিসিআর-৫ নামে ক্ষতিকর একটি জিনকে তিনি লুলু ও নানার জিন থেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

সিসিআর-৫ জিন থেকে সরিয়ে নেওয়ায় এই দুই জমজ শিশু এইচআইভি প্রতিরোধক ক্ষমতা নিয়ে জন্মাবে বলে দাবি করা হয়।

বিজ্ঞানী হি বলছেন, যে সব শিশুরা রোগ-বালাইয়ে ভুগবে না তেমন ধরনের ‘ডিজাইনার বেবি’ সৃষ্টি করাই তার কাজ।

প্রকাশিত ভিডিওতে তিনি এটিও বলেছেন, ‘আমার কাজ হয়তো বিতর্কিত হিসেবে দেখা হতে পারে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, পরিবারগুলোর এই প্রযুক্তি প্রয়োজন। আর এ জন্যই সমালোচনা মেনে নিতেও আমার কোনও সমস্যা নেই।’

চিকিৎসায় নিরাময়যোগ্য

জিন পরিবর্তনের মাধ্যমে ‘ডিজাইনার বেবি’ সৃষ্টির প্রকল্পের সঙ্গে যে সব প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশিত হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে একটি হাসপাতালের নামও। তবে এই হাসপাতালটি জিন পরিবর্তনের ঘটনা অস্বীকার করেছে।

শেনজেনে অবস্থিত সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বলেছে, তারা এই ধরণের কোনও প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানতো না। তবে এই বিষয়ে জানতে এখন তারা একটি তদন্ত শুরু করেছে।

অন্যান্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, অধ্যাপক হি-র দাবি সত্য হয়ে থাকলে, তিনি যা করেছেন সেটি অন্যায্য। এমনকি তার এই কার্যক্রমকে ‘বৈজ্ঞানিক অসদাচরণ’ বলেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

অধ্যাপক হি’র কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করে লন্ডনের কিংস কলেজের স্টেম সেল বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. ডুস্কো ইলিক বলেছেন, ‘এই ধরণের কাজকে যদি নৈতিক বলে আখ্যা দেওয়া হয়, তাহলে তা হবে সারা দুনিয়ার প্রচলিত নৈতিক ধারণা থেকে একেবারেই ভিন্ন’।

ড. ডুস্কোর মতে, এইচআইভি চিকিৎসায় নিরাময়যোগ্য রোগ। অতএব, বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিশু এই রোগ পেলেও বিশেষ চিন্তার কারণ নেই।

অতীব ঝুঁকিপূর্ণ

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির নৈতিকতা বিষয়ক অধ্যাপক জুলিয়ান সাবুলেস্চু বলেছেন, ‘এই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে তা হবে একটা অত্যন্ত বীভৎস বিষয়’।

জিন-এডিটিং এর কাজ এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। তাই এই পরিস্থিতিতে এ ধরণের উদ্যোগ জীবনের প্রারম্ভে বা শেষে কখনও হয়তো জেনেটিক সমস্যার কারণ হতে পারে। এমনকি এর ফলে ক্যানসারেরও আশঙ্কা থাকে।

তাই বলা হচ্ছে, জিন সম্পাদনার মাধ্যমে যে শিশু-দ্বয়কে রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত করা হলো বলে মনে করা হচ্ছে, উল্টো এর ফলে এই শিশুরা আরও অধিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

হিউমেন জেনেটিক বিশেষজ্ঞ ড. ইয়াল্দা জামশিদি বলেছেন, জিন পরিবর্তনের যে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়েছে তা নিয়ে আমরা এখনও অত্যন্ত কম জানি।

তাই ড. জামশিদির মতে, কেবল বিজ্ঞানীদের জ্ঞান বাড়ানোর জন্য যদি মানব জিনের ওপর এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় সেটি হবে নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।

সূত্র: বিবিসি

একে//