‘শীতে চর্মরোগ বেশি হয় যেসব কারণে’
প্রকাশিত : ০৪:৫৪ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:০১ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার
মো. কামরুল হাসান জায়গীরদার
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে যেমন পরিবর্তন আসে তেমননি রোগের পরিবর্তন দেখা মেলে। শীত আসলেও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে রোগীরা হাজির হয়। তার মধ্যে রয়েছে স্কেবিস, অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস ও নাইকেন্স সিমপ্লেক্স কনিকাস অন্যতম। শীতে চর্মরোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। চর্মরোগের চিকিৎসা গ্রহণে মোটেও অবহেলা করা উচিৎ নয়। কিছু কিছু চর্মরোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবা গ্রহণের না করলে লিভার ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ক্ষেত্রে রোগীর সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শমতো চলা উচিৎ বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান জায়গীরদার। সম্প্রতি তিনি একুশে টিভি অনলাইনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকার এমত প্রকাশ করেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
একুশে টিভি অনলাইন: শীতকালে আপনাদের কাছে রোগীরা কি ধরনের সমস্যা নিয়ে আসে?
অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান জায়গীরদার: শীতকালে বাতাসে জলীয়বাস্পের পরিমান কমে যায়। ফলে মানুষের শরীরে যে স্বাভাবিক জলীয় উপদান আছে। তা বাতাস চুষে নেয়। ফলে চামড়ার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। চামড়া শুষ্ক হয়ে যায়। আমাদের শরীরে তৈলগ্রন্থি আছে। বাতাসের যখন আমাদের শরীর থেকে জলীয় উৎপাদন চুষে নেয় তখন চামড়ার মধ্যে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা দেয়। এই পরিবর্তন চামড়ার উপরে বা ভিতরে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। যেমন মুখমন্ডল, হাতে, পায়ে, শরীরের চামড়া পরিবর্তন হয়। চামড়া শুকিয়ে যায়। একটি উদাহরণ দিলে বুঝা যাবে। শীতকালে ধান ক্ষেতে জমিতে পানির অভাব দেখা দিলে যেমন ফেটে চৌচির হয় য়ায়। তেমনি আমাদের শরীরে শরীরে জলীয় উপদান কমে গেলে নানা সমস্যা দেখা যায়।
আমাদের হাত পা,ঠোঁট ফেটে যাচ্ছে। আমাদের শরীরটা খসখসে হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। শরীরের মধ্যে চুলকানি দেখা দেয়। শুষ্ক ত্বকে চুলকানি বেড়ে যায়। এই চুলকানি কিন্তু নখ দিয়ে চুলকানো ঠিক নয়। হাতের তালু দিয়ে চুলকানো ভালো। এগুলো দূর করতে আমাদের গোসলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। গ্লিসারিন মিশ্রিত সাবান ব্যবহার করতে হবে। গোসলের পরিমান টা কমিয়ে আনতে হবে। অনেক সময় ধরে গোসল না করে আমরা ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে করতে হবে। এবং শরীর ভেজা থাকতে থাকতে শরীরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। বাজারে বিভিন্ন নামে ময়েশ্চারাইজার যাওয়া যায়। শীতে আমাদের ঠোঁট ফেটে যায়। এটা একটি বড় সমস্যা। এ অবস্থায় অনেকেই জিহবা বের করে বার বার ঠোঁট ভেজাতে থাকে। এটা করা উচিৎ নয়। ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে গ্লিসারিন বা লিপজেল লাগিয়ে রাখতে পারেন। এটা বার বার করে লাগাতে হবে। তাহলে ভালো ফল আসবে।
অনেকে পা ফাঁটা নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। শীতকাল আসলেই পা ফাঁটা দেখা দেয়। পা ফাঁটা প্রতিরোধে করতে হলে পায়ে যাতে শীত না লাগে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শীতে মোজা ব্যবহার করতে পারেন। লক্ষ্য রাখতে হবে মোজা যাতে মোটা হয়। ফাঁটা জায়গায় আমরা বিভিন্ন ধরনের গ্লিসারিন,ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকি।
একুশে টিভি অনলাইন: গরমকালের তুলনায় শীতকালে রোগ ব্যাধি বেশি হওয়ার কারণ কি?
অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান জায়গীরদার: বিভিন্ন কারণে শীতকালে রোগ ব্যাধি বেশি হয়ে থাকে। শীতকালে বাতাসের জলীয়বাস্পের পরিমান কম থাকে। এছাড়া আমরা শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে গরম কাপড় পড়ে থাকি। শীতকালে ধোরাবালি পরিমানও বেশি থাকে। ফলে এলার্জি জাতীয় রোগ বেশি দেখা যায়। শীতকালে আবহওয়া পরিবর্তনের কারণেও আরও কিছু রোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে চর্ম রোগ। স্কেবিস, অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস ও নাইকেন্স সিমপ্লেক্স কনিকাস অন্যতম। এগুলো শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য বেশি দেখা যেতে পারে।
এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে গ্লিসারিন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে আক্রান্ত স্থান যাতে ভেজা ভেজা থাকে। স্যাঁত স্যাঁতে আবহাওয়ার কারণে শীতকালে বেশি রোগ দেখা যায়।
একুশে টিভি অনলাইন: শীতকালে চর্ম রোগ বেশি দেখা যায় এর কারণে কি?
অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান জায়গীরদার: শীতকালে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যে কারণে চর্ম রোগ বেশি দেখা দেয়। আমি যেসব চর্ম রোগের কথা বললাম এটা বাচ্চাদের ও বয়স্কদের বেশি দেখা দেয়। শীতে বাচ্চাদের সাইনোসাইটিস রোগ দেখা দিতে পারে। বয়স্কদের আর্থ্রাইটিস বা বাতব্যথা দেখা দিতে পারে। আর্থ্রাইটিস বা বাতের সমস্যা শীতে বাড়ে বেশি। আর্থ্রাইটিস রোগীদের শীতে চলাফেরা বা মুভমেন্ট কম হয় বলে ব্যথার প্রকোপ বেড়ে যায়। হালকা চলাফেরায় বরং ব্যথা কম হয়। তা ছাড়া তীব্র ঠাণ্ডায় বাতের কিছু রোগীর হাত-পা নীল (রেনোড ফেনোমেনা) হয়ে যেতে পারে। আর একটা রোগ এটা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ দেখা দিতে পারে ইকথায়োসিস। এটা জন্মগত রোগ। রোগটি শিশুকাল থেকেই লক্ষ্য করা যায়। এরোগে যারা আক্রান্ত হয়, তাদের হাত ও পায়ের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ত্বক ফাটা ফাটা এবং ছোট ছোট গুঁড়িগুঁড়ি মরা চামড়া বা আঁইশ পায়ের সামনের অংশের বা হাতের চামড়ায় লক্ষণীয়ভাবে ফুটে উঠতে দেখা যায়। তবে হাত ও পায়ের ভাঁজযুক্ত স্থানে থাকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। ইকথায়োসিস নামক রোগটি শীত এলেই প্রতি বছর এর ব্যাপকতা বেড়ে যায়। এছাড়া শিশুদের এলার্জির দেখা দেখা দিতে পারে। হতে পারে স্ক্যাবিস বা খোস পাঁচড়া, যা সারকপটিস স্ক্যাবি নামক ক্ষুদ্র মাইট দ্বারা হয়। মাইট উকুনের মতো ছোট জীবাণু। অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। এটা বিভিন্ন কারণে ছড়াতে পারে। আমাদের দেশের মানুষ নিন্মবিত্ত যে কারণে এক বাড়িতে থাকে, একি বিছানা ঘুমাও গাদাগাদি করে। স্কুলে চাপাচাপি করে বসে। ফলে এরোগ দেখা দেয়।
একুশে টিভি অনলাইন: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান জায়গীরদার: একুশে টিভি পরিবারকেও ধন্যবাদ।
এসএইচ/