বিভীষিকাময় ৫৩৬ খৃস্টাব্দ
প্রকাশিত : ১১:২৩ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার
আজকের এই দিনে আমরা অনেকেই ভাল আছি, আবার অনেকেই ভাল নেই, কারো দুঃখের সীমা নেই, পার করছেন কঠিন থেকে কঠিনতম সময়। তারপরও আমরা অনেক সৌভাগ্যবান, আমরা ৫৩৬ খৃষ্টাব্দে আমরা পৃথিবীতে ছিলাম না।
বছরটা সুনির্দিষ্ট না হলেও সময়টা ছিল সবচেয়ে খারাপ। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত যত খারাপ সময় গেছে সেই সময়টা ছিল সবচেয়ে খারাপ, মানুষের বেঁচে থাকার সবচেয়ে কঠিন সময়। এই বিষয়ে মতামত দিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যযুগ বিষয়ক ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতত্ত্ববিদ মাইকেল ম্যাককরমি ।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পৃথিবীতে সূর্যের আলো এসে পৌছাতে পারেনি টানা দেড় বছর। সমান হয়ে গিয়েছিল দিন রাত। রহস্যময় কুয়াশায় ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কিছু অংশ ঢেকে গিয়েছিল অন্ধকারে।
মাইকেল ম্যাকরমিক বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী সায়েন্সে এসব কথাই লিখেছেন । ৫৩৬ খৃষ্টাব্দের গ্রীস্মে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ২৩০০ বছরের ইতিহাসে ওই দশকটাই পৃথিবী ছিল সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা। চীনে গ্রীষ্মকালেও তুষারপাত হয়েছিল। শস্যহানি হয়েছিল। খাবারের অভাবে থাকতে হয়েছিল লোকজনকে।
এসব তথ্য আইরিশ ক্রনিকলের রেকর্ডে আছে। উল্লেখ আছে "৫৩৬ থেকে ৫৩৯ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত রুটির মারাত্মক অভাব দেখা দিয়েছিল।"
তারপর ৫৪১ খৃস্টাব্দে মিশরের পেলসিয়াম বন্দরে দ্রুত সংক্রামক ব্যাধি প্লেগ আক্রমণ করে। এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক জনগোষ্ঠী বিনাশ হয়ে যায়। রোমান সাম্রাজ্যের পতনও ত্বরান্বিত হয় ।
অন্ধকার এক সময়
ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে পৃথিবীতে প্রচণ্ড এক অন্ধকার নেমে এসেছিল, ইতিহাসবিদরা জানতেন বহুকাল আগে থেকেই। সেই যুগ কেই বলা হয় অন্ধকার যুগ। কেন তৈরি হয়েছিল মেঘের মতো কুয়াশার চাদর, কী কারণে এই অন্ধকার নেমে এসেছিল, সেটা থেকে গেছে রহস্য হিসেবেই ।
মানব ইতিহাস নিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বিজ্ঞানী গবেষণা করছেন সেই রহস্যের একটা ব্যাখ্যা তারা দিয়েছেন। তারা এই গবেষণাটি চালিয়েছেন সুইস হিমশৈল থেকে কিছু বরফ নিয়ে । বলছেন, ৫৩৬ খৃস্টাব্দের সময়কার বরফে দুটো আণুবীক্ষণিক কণা পাওয়া গেছে যা আসলে আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাত থেকে সৃষ্ট ছাই। সেসময় আইসল্যান্ড কিম্বা উত্তর আমেরিকার আগ্নেয়গিরিতে আকস্মিকভাবে বড় রকমের অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটেছিল। অগ্নুৎপাতের ছাই ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো উত্তর গোলার্ধে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, সেই ছাই বাতাসে করে প্রথমে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ইউরোপে জুড়ে এবং আরো পরে ছড়িয়ে পড়ে এশিয়ায়। সাথে করে নিয়ে আসে তীব্র ঠাণ্ডা। তারপর ঘটে আরো বড় দুটো অগ্ন্যুৎপাতের মত ঘটনা, যা ঘটেছিল ৫৪০ এবং ৫৪৭ খৃস্টাব্দে।
ফিরে এলো কীভাবে স্বাভাবিক অবস্থায়
পরপর ঘটে যাওয়া বড় ধরনের দুটো আঘাত- প্লেগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অর্থনৈতিক দুরবস্থা - এসব প্রায় ৬৪০ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত অর্থাৎ এক শতাব্দী কাল স্থায়ী হয়েছিল এটা । মধ্যযুগীয় অর্থনীতি তখন মন্দাবস্থা কাটিয়ে ওঠতে শুরু করে তার ইঙ্গিত দেয় ওই বরফ থেকে পাওয়া তথ্য।
বিজ্ঞানীরা হিমশৈলতে তখন প্রচুর পরিমাণে বাতাসে বয়ে আসা সীসার স্তর দেখতে পান। এথেকে বোঝা যায় যে তখন খনি থেকে রুপার উত্তোলন বেড়ে গিয়েছিল। এটা কমে গিয়েছিল ৫০০ শতাব্দীতে ।
ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাইল হারপার মধ্যযুগ এবং রোমান সাম্রাজ্যের ওপর গবেষণা করেন ।
তিনি বলছেন, মানব সৃষ্ট দূষণ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যযয়ের যে ইতিহাস বরফের গায়ে জমাট বেঁধে আছে তা থেকে পাওয়া যায় নতুন তথ্য- দেখা যায় কী কী কারণে পতন হয়েছিল রোমান সাম্রাজ্যের।
এসি