ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

আইএস’র কোন ভবিষ্যৎ আছে?

প্রকাশিত : ১০:৩২ এএম, ২৮ নভেম্বর ২০১৮ বুধবার

২০১৭ সালের জুলাই মাসে ইরাকের সরকারি বাহিনী মসুল ফের নিজেদের দখলে নেয়। চার বছর আগে ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা সিরিয়া এবং ইরাকের এক বড় অংশ জুড়ে স্বঘোষিত "খেলাফত" প্রতিষ্ঠা করে। এর ফলে লাখ লাখ মানুষ নৃশংসভাবে নিহত হয়। এখন মাত্র শতকরা এক শতাংশ এলাকা তাদের দখলে আছে। ত্রাস সৃষ্টিকারী এই ইসলামিক স্টেটের ভবিষ্যৎ আসলে কি?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত মিত্র অর্থাৎ সিরিয়ার কুর্দি এবং আরব যোদ্ধারা তাদের লড়াই শেষ করছে যেখানে ইসলামিক স্টেটের সর্বশেষ ঘাঁটি ছিল। স্থানটি ছিল সিরিয়ার পূর্বের একটি অঞ্চল। যদিও মার্কিন সেনাবাহিনী সর্তক করে বলেছে, জিহাদিরা তাদের শয়তানি কার্যক্রমের শেষ প্রচেষ্টায় রয়েছে কিন্তু তারা এখনো পরাজিত হয় নি।

১৫শ থেকে দুই হাজার জঙ্গি সিরিয়ার হাজিন শহরের মধ্যে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, মধ্য ইউফেরাত নদীর উপকূলের এই অঞ্চলে তারা এক বছরের বেশি সময় ধরে তীব্র লড়াই প্রত্যক্ষ করেছে।

ইসলামিক স্টেটের খেলাফত হারানোর কারণ:
ইরাকে নিরাপত্তা বাহিনীকে দুই দিক থেকে সাহায্য করা হয়। ইরাকে এবং সিরিয়া থেকে আইএস হঠানোর যে প্রচারণা শুরু হয়েছিল সেটা ছিল রক্তাক্ত। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয় এবং লাখ লাখ মানুষকে ঘর ছাড়া হতে হয়।
সিরিয়াতে প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের সৈন্যরা জিহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তাদের সাহায্য করে রাশিয়ার বিমানবাহিনীর হামলা, সঙ্গে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা। এর মধ্যে মার্কিন সমর্থিত একটি বহুজাতিক জোট কুর্দিদের সমর্থন দেয়।

যারা সিরিয়ার ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস জোট এবং কিছু বিদ্রোহী গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণ করতো। ইরাকে নিরাপত্তা বাহিনীকে দুই দিক থেকে সাহায্য করা হয়। একদিকে ছিল মার্কিন জোট অপর দিকে ছিল প্যারামিলিটারি ফোর্স যাদের সমর্থন দিয়েছে ইরানের মিশিয়ারা। রাশিয়া এসবের সাথে যোগ দেয় ২০১৫ সালে। ঐ সাথে প্রথম রাশিয়া আইএসকে "সন্ত্রাসী" আখ্যা দিয়ে বিমান হামলা শুরু করে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ বছরের অগাস্টে প্রতিবেদনে বলেন, তারা এক লক্ষ একুশ হাজার "সন্ত্রাসী ঘাটি" ধ্বংস করেছে। এবং ইসলামিক স্টেটের ৫ হাজার দুইশ সদস্যকে মারতে সক্ষম হয়েছে।

ইসলামিক স্টেটের ভবিষ্যৎ?
মার্কিন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সিরিয়াতে এখনো ১৪ হাজার জঙ্গি রয়েছে আর ইরাকে রয়েছে ১৭ হাজার একশ। যদিও কোন অঞ্চল তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই।

এদিকে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছে, তিন থেকে চার হাজার জঙ্গি রয়েছে লিবিয়াতে। আফগানিস্তানে রয়েছে চার হাজার জঙ্গি। সংস্থাটি বলছে আইএসের উপস্থিতি রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে, পশ্চিম আফ্রিকাতে, মিশরের সিনাই উপত্যকায়, ইয়েমেনে, সোমালিয়া এবং দ্যা সাহেল এ। ইরাক এবং সিরিয়াতে অনেক জঙ্গি তাদের কৌশল বদল করেছে।

নিজেদের নেটওয়ার্ক পুনর্গঠন করার জন্য তারা বোমা বিস্ফারণ, হত্যা , অপহরণের মত কাছে ফিরে গেছে। ইউরোপ এবং অন্যান্য স্থানে কিছু ব্যক্তি এই গ্রুপের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একক ভাবে হামলা চালিয়েছে।

কৌশলহত গোয়েন্দা সংস্থা সৌফান গ্রুপ ২০১৭ সালের অক্টোবরে এক গবেষণা করে। সেখানে দেখা যায় বিশ্বের ৩৩ টি থেকে আসা প্রায় পাঁচ হাজার ৬শ আইএস যোদ্ধা নিজ দেশে ফিরে গেছে। সবচেয়ে বড় সংখ্যা ৯শ জন ফিরে গেছে তুরস্কে। এক হাজার দুইশ জন ফিরে গেছে ইউরোপিয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে।

এরমধ্যে যুক্তরাজ্যে গেছে ৪২৫জন। জার্মানি এবং ফ্রান্সে গেছে ৩শ জন করে ফিরে গেছে। শত শত বিদেশী যোদ্ধা যারা এসডিএফ এর কাছে ধরা পরেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে তারা যেন তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় এবং বিচারের আওতায় আনে।

আরকে//