চট্টগ্রামের অাওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রার্থীরা কি ভাবছেন?
অালী অাদনান
প্রকাশিত : ০৬:০০ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
সবকিছু ঠিক থাকলে অাগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রথম দিকে নানা সংশয়, সন্দেহ, উৎকন্ঠা থাকলেও অবশেষে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ঘটতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সব দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দানের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে, অাওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিসহ সব দল নির্বাচন অনুষ্ঠানে অাগ্রহী। শেষ দিনে দাখিল হয়েছে তিন হাজার ৫৬টি মনোনয়নপত্র সারা দেশে। সে হিসেবে ৩০০ অাসনে গড়ে ১০ জন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে চাচ্ছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম। রাজনৈতিক মেরুকরণ ও অান্দোলন সংগ্রামের দিক থেকে ঢাকার পরেই চট্টগ্রামকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। চট্টগ্রামের ১৬টি অাসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ১৭৮ জন প্রার্থী। অাওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে গিয়ে এখানে চৌদ্দ দলের শরীক তরিকত ফেডারেশের প্রধান নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারীর নিজ অাসন যেমন অাছে তেমনি অাছে বিএনপি থেকে সমর্থন দেওয়া এলডিপি প্রধান কর্নেল ( অব.) অলি অাহমদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রধান মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক এর নিজ অাসন। জাসদ- এর মাঈনুদ্দীন খান বাদলও চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সব সময় অালোচনায় থাকেন এমন বেশ কয়েকজন প্রার্থীও চট্টগ্রামে অাওয়ামী লীগ বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় অাছেন। তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন, নির্বাচনকে কীভাবে নিচ্ছেন তা জানতেই একুশে টেলিভিশন অনলাইন তাদের মুখোমুখি হয়।
দেশের প্রত্যেকটি অাসনই প্রেস্টিজিয়াস অাসন: মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল
চট্টগ্রামের নির্বাচনে রাজনীতিতে নতুন মুখ ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। কেন্দ্রীয় অাওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক প্রথমবারের মতো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসন থেকে। দেশে প্রথমবারের মতো যে ছয়টি অাসনে ইভিএম ব্যববহৃত হচ্ছে তার মধ্যে একটি হলো এই অাসন। একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে তিনি ( ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, যারা (বিএনপিকে ইঙ্গিত করে) অভিযোগ করছেন, ইভিএমে ভোট নেওয়া উচিৎ হবে না কিংবা ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, তাদের সময় রাজনীতি ছিল প্রযুক্তি বিমুখতার রাজনীতি। তাদের সময় বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। বেগম জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন, ইন্টারনেট সংযোগ হলে নাকি বাংলাদেশ থেকে তথ্য বিদেশে চলে যাবে। এভাবে তারা জনগণকে প্রযুক্তির সুফল থেকে দূরে রেখেছিল। একইভাবে প্রযুক্তিকে তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। একটি লাইসেন্স দিয়ে তারা কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন টেলিযোগাযোগ খাতে। কিন্তু আপনারা জানেন, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি খাত উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এর আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে, নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার। আমরা বলতে চাই, প্রযুক্তি বিমুখতা আমাদের প্রগতিকে থামিয়ে দেবে। প্রযুক্তিকে প্রমোট করতে পারলে আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
এক প্রশ্নের জবাবে এই তরুণ প্রার্থী বলেন, চট্টগ্রাম-৯ আসন ছাড়াও বাংলাদেশের প্রত্যেকটি আসনই প্রেস্টিজিয়াস আসন। তাই নির্দিষ্ট কোনো আসনকে প্রেস্টিজিয়াস বলাটা যুক্তিযুক্ত নয়। তবে আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন, চট্টগ্রাম-৯ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হবে। ইভিএমে ভোটগ্রহণের প্রস্তাব আমরাই দিয়েছিলাম, তাই আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী চান বাংলাদেশের গণতন্ত্র যেন সুসংহত হয়। আরও শক্তিশালী হয়। এটার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য আমার নেত্রীর মাধ্যমে আমরা নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, নির্বাচনে সীমিত পরিসরে হলেও যেন ইভিএম পদ্ধতি আনা হয়।
অনিশ্চয়তার কারণে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে: অামীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
বিএনপির প্রথম সারির পরিচিত মুখ আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর) আসন থেকে। তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের মানুষের একটিই আশঙ্কা, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে যে কাজটি করেছে, সেটির পুনরাবৃত্তি করবে কি না। কারণ নির্বাচনে সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এটি জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। জনগণ তার মালিকানা ফিরে পাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ। তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর প্রস্তুত রয়েছে। মানুষ বাকস্বাধীনতা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও জীবনের নিরাপত্তার পক্ষে অবস্থান নেবে। এই অবস্থানের বিরুদ্ধে যারা থাকবে তাদেরকে জনগণ প্রত্যাখান করবে, প্রতিবাদ করবে, প্রয়োজনে প্রতিরোধ করবে।
বিভিন্ন আসনে বিএনপির অতিরিক্ত প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে খসরু বলেন, অতিরিক্ত যে নামগুলো দেওয়া হয়েছে এটা শুধু সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। কোনো কারণে যদি অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তাই নামগুলো দেওয়া হয়েছে। নমিনেশন দেওয়া হয়েছে একজনকে। এখানে কোনো বিভ্রান্তি নেই।
ইভিএমে নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, ইভিএম সম্পর্কে তো সবার জানাই আছে। জনগণকে বাইরে ভোটচুরির যে প্রক্রিয়া তার পরিপ্রেক্ষিতে ইভিএম এসেছে। চট্টগ্রামেও একটি আসনে (চট্টগ্রাম-৯) ইভিএমের ব্যবহার হবে। কিন্তু চট্টগ্রামবাসী সেটি মেনে নেবে না। ইতোমধ্যে ওই এলাকায় বিতর্ক শুরু হয়েছে। ইভিএমে নির্বাচন মানুষও গ্রহণ করবে না, এর মাধ্যমে যে ভোটচুরির চেষ্টা চলছে তা জনগণ টের পেয়েছে। এটা কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য অাওয়ামী লীগকে অাবারও ক্ষমতায় অানতে হবে: এমএ লতিফ
আওয়ামী লীগ নেতা এম এ লতিফ চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন এবং বাস্তবায়নও করেছেন। এছাড়া অনেকগুলো অগ্রগতির পথে। আরও কিছু উদ্যোগ আগামীতে বাস্তবায়িত হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। আমরা আশা করি চট্টগ্রামের মানুষ নৌকার বিজয়ের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে। ভোট প্রদান করবে। শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনবে।
এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি: অাবদুল্লাহ অাল নোমান
বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) অাসন থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে তিনি বলেন, নির্বাচনে এখনো লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। নির্বাচন কমিশন এখনও সরকারের পদলেহী আচরণ করছে। নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানাবো, তারা যেন দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়। আমরা আচরণবিধি মেনে চলছি। গায়েবি মামলা দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে গায়েবি মামলায় নির্যাতন বন্ধ ঠেকিয়ে দেওয়া হবে।
বিরোধীদলের অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই: মঈনউদ্দিন খান বাদল
জাসদ একাংশের নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল চট্টগ্রাম -৮ ( বোয়ালখালী চাঁন্দগাঁও) অাসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে এই প্রার্থী বলেন, অব্যশই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়েছে। আমরা যারা এমপি আছি, কোনো উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করছি না। সরকারি কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছি না। বিরোধী দলগুলো যেসব অভিযোগ করছে এসবের কোনো ভিত্তি নেই।
দেশের স্বার্থে সুষ্ঠ ভোট হওয়া উচিৎ : মোরশেদ খান
বিএনপি নেতা এম মোরশেদ খান চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম গত দুইবার ভোট দিতে পারেনি, আশা করি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা ভোটাধিকার পাবে। দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের সু্ষ্ঠ ভোট হওয়া উচিৎ। সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
অা অা// এসএইচ/