এইডসের লক্ষণ ও সুরক্ষা
ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ
প্রকাশিত : ০৬:১০ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
ঘাতক ব্যাধি এইডস পুরোপুরি নিরাময়ের উপায় এখনও পাওয়া যায়নি। তাই জনমনে এ রোগ নিয়ে নানা ভীতি কাজ করে। একই সঙ্গে এই রোগ নিয়ে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নানা রকম ভ্রান্ত ধারণাও প্রচলিত আছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা অনেক কম। অনেকে জানেনই না, এই রোগের লক্ষণ কী কী? কীভাবে এইডস প্রতিরোধ করা যায়। সমাজের প্রত্যেক মানুষের উচিত, এইডস আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ করা। এইডস আক্রান্ত রোগীকে অবহেলা না করে তার প্রতি স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা দেওয়া, যেন মানসিকভাবে তিনি একটু শান্তি পেতে পারেন।
এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত হলে শরীরের ওজন অনেক কমে যাবে, অনেক বেশি ক্লান্ত লাগবে, দীর্ঘদিন ধরে জ্বর থাকবে, মুখে বা গলায় ঘা হতে পারে। বমি বমি ভাব, এক মাসের বেশি সময় ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। মাথা, চোখ এবং মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এ ছাড়া শরীর ম্যাজম্যাজ করতে পারে, ত্বকের ওপরে ফুসকুড়ি ও ঘা হতে পারে। ঠোঁট ও যৌনাঙ্গের চারপাশে ধীরে ধীরে ফোসকা ও ঘা হবে এবং ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়বে।
এইডস প্রতিরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে মানুষ নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারেন। এসবের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো নারী বা পুরুষের সঙ্গে দৈহিক মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে। যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার, অন্য মানুষের দাড়ি কামানোর ব্লেড, ক্ষুর ব্যবহার করা যাবে না। মাদক গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা অবশ্যই বর্জন করতে হবে। এইডস আক্রান্ত নারীদের গর্ভধারণ করা উচিত নয়। কেননা, তাতে সন্তানের এইডস নিয়ে জন্মগ্রহণের প্রবল আশঙ্কা থাকবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসার মাধ্যমে বর্তমানে এইডস আক্রান্ত নারীরা এইডসবিহীন সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন। তাই সন্তান নিতে চাইলে আগে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
কোনো কারণে রক্ত গ্রহণ করতে হলে বা দিতে হলে আগে এইচআইভি পরীক্ষা করে নিতে হবে। সুচ ও সিরিঞ্জ একবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যন্ত্রপাতি ভালোভাবে পরিস্কার ও জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে বোধগম্য ও সহজ ভাষায় এইডস সম্পর্কিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যেন এইডস সম্পর্কে শিশুরা কৈশোরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সঠিক জ্ঞান পায়। পেশাদার রক্তদাতাদের রক্ত প্রদানে বাধা দিতে হবে। আইন প্রণয়ন করে রক্ত বেচাকেনা বন্ধ করার পাশাপাশি সুস্থ মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করতে হবে। রেডিও, টেলিভিশন, নাটক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিনোদনের মাধ্যমে এইডস সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে।
এইডস কখনও বলে-কয়ে হয় না। অন্য কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারলে আপনিও শিকার হতে পারেন। অথচ সামান্য সতর্কতা ও এই রোগ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান আপনাকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিতে পারে। তাই অজ্ঞতা নয়। আসুন, এইডস সম্পর্কে জানি এবং নিজেকে ও আপনজনকে সুরক্ষিত রাখি।
লেখক: ডিন, মেডিসিন অনুষদ
অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
এসি