ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১

সিপিবির ৩০ দফা ইশতেহার ঘোষণা

প্রকাশিত : ১১:২৪ পিএম, ১ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি। ইশতেহারে দলটি উল্লেখ করেছে ক্ষমতায় গেলে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংবিধান, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার করবে। শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।

সেলিম বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত জনগণ যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। সেই স্বপ্ন হল ‘ভিশন মুক্তিযুদ্ধ-৭১’। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাদের অক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। এমনকি এই দুটি দলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক কাঠামো দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। যারাই ক্ষমতায় এসেছে, ক্রমান্বয়ে তারা আরও কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছে।’

জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে হলে বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং দ্বি-দলীয় রাজনীতির বৃত্ত ছিন্ন করে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন সেলিম।

সিপিবির ৩০ দফা ইশতেহারে যা আছে-

# ক্ষমতায় যেতে পারলে সিপিবি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংবিধান, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার করবে। গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে।

# ভোটে জিতলে নির্বাচনি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাবে সিপিবি। নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার করে চালু করা হবে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা। আর নির্বাচনের সময় ‘রুটিন কাজ’ এর জন্য ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ এর বিধান সংবিধানে যুক্ত করা হবে।

# বিতর্কিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ‘  মৌলিক অধিকার খর্কারী সব কালা কানুন’ বাতিল করা হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করে ‘কার্যকর গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করবে সিপিবি।

# বিকল্প অর্থনৈতিক নীতি ও ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস করা, ঘুষ-দুর্নীতি-লুটেপাটের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা হবে বাম এ দলটির লক্ষ্য।

# সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদ রুখতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করবে সিপিবি। ‘মাফিয়া-গডফাদারদের’ দমন এবং অপরাধী চক্রের দেশি-বিদেশি অর্থ ও শক্তির উৎসগুলোর মূল উৎপাটন করা এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-দুর্বৃত্তায়ন ও মাফিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে সিপিবির অন্যতম লক্ষ্য।

# টেলিকম খাতে শৃঙ্খলা আনতে অভিন্ন কলরেট চালু, ইন্টারনেট মূল্য নির্ধারণ, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধ করার পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়াইফাই জোন তৈরি করা, ‘ই-গভারনেন্স’ চালু করা, সাইবার ক্রাইম বন্ধ করা, ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্ত নিশ্চিত করাসহ তথ্য-প্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সার্বজনীন করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইশতেহারে।

# জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বিষয়টিও সিবিরি ইশতেহারে এসেছে। এ লক্ষ্যে তারা রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সুন্দরবন এলাকায় শিল্প-কারখানা নির্মাণ বন্ধ করবে। মৃতপ্রায় নদ-নদী পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেবে। ‘পরিবেশ আদালতের’ মাধ্যমে পরিবেশ বিনষ্টকারীদের বিচারের আওতায় আনবে।

# ক্ষমতায় গেলে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে বিকল্প জ্বালানি নীতির বাস্তবায়ন করবে সিপিবি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করা হবে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও যানজট রোধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা, পানি উন্নয়ন ও বন্যা সমস্যার সমাধান করার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার কথাও ইশতেহারে আছে।

 

# ইশতেহারে বলা হয়েছে, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে সিপিবির অন্যতম লক্ষ্য। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ‘ঝুলে থাকা’ সমস্যার সমাধান করা হবে।

# পাকিস্তানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়, আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের ফেরত পাঠানো, ভারত থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, সীমান্তে হত্যা বন্ধ ও বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করা, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দিয়ে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সিপিবি।

ইশতেহার ঘোষণা করে সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, “লুটপাটের ‘ব্যবস্থা বদল’ করে বিকল্প রাজনৈতিক কর্মসূচি ও প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করতে সিপিবি বদ্ধপরিকর।”

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘কাস্তে’ মার্কায় সিপিবির মনোনিত প্রার্থীদের এবং বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্য প্রার্থীদের ‘মই’ ও ‘কোদাল’ মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অন্যদের মধ্যে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতন ও অনিরুদ্ধ দাস অঞ্জন, কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

কেআই/ এসএইচ/