ঢাকা, শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১

একজন ‘মিরাজ’ ওয়ে ওঠার গল্প

প্রকাশিত : ০৬:৩৬ পিএম, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৬:৩৭ পিএম, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার

গল্পটা হয়তো বাংলাদেশের আর আট-দশটা পরিবারের মতোই। টানাটানির সংসার। গাড়িচালক বাবা চাইতেন ছেলে পড়ালেখা করুক। বড় হোক। কিন্তু রূপসাপাড়ের তরুণের জীবনের চিন্তা ছিল অন্য। একেবারেই অল্প বয়সে বল-ব্যাট হাতে তুলে নিয়েছিল সে। ক্রিকেট বিলাসিতা মনে করে বাবা তা পছন্দ করতেন না। কখনও কখনও বেদম মারধরও করেছেন ছেলেকে। কিন্তু এখন সেই মেহেদী হাসান মিরাজকে বাবাসহ পুরো বিশ্ব বলছে ম্যাজিক বয়।

হাফপ্যান্ট ছেড়ে ফুলপ্যান্ট ধরার বয়স থেকেই মিরপুর স্টেডিয়ামের চেনা চৌহদ্দিতে মেহেদী হাসান মিরাজের আনাগোনা। দুটি যুব বিশ্বকাপে খেলেছেন। বছরের বেশির ভাগ সময় একাডেমির ছাত্রাবাসই ছিল ঘরবাড়ি। তাই এই অঞ্চলে যাদের নিয়মিত যাতায়াত, তাদের অনেকের কাছেই মিরাজের শৈশবের কচি মুখটিই স্পষ্ট। সেই মিরাজকেই বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বাদ এনে দেওয়ার নায়ক হিসেবে দেখাটা আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই পালাবদলের প্রতিচ্ছবি!

আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ২০১৩ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। সাত ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৪-৩ ব্যবধানে স্বাগতিকদের হারিয়ে দেশে ফিরেছিল মেহেদী হাসান মিরাজের দল। তাদের অভিনন্দন জানাতেই মিরপুরে এসেছিলেন বোর্ড সভাপতি। সভাপতির বক্তৃতা শেষে সতীর্থরা ঠেলেঠুলে দাঁড় করিয়ে দিল মিরাজকে। লজ্জামাখা কণ্ঠে মিরাজ বোর্ড সভাপতিকে বলেছিলেন, অনূর্ধ্ব- ১৯ দলের ক্রিকেটারদের জন্য কোনো বেতন কাঠামো কিংবা ম্যাচ ফির ব্যবস্থা করা যায় কি না। আর কাল, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের জাতীয় দলকেই দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজে প্রথমবারের মতো হারানোর পর; টেস্টে প্রথম কোনো দলকে ইনিংস ব্যবধানে হারানোর কীর্তির নায়ক হয়ে যখন মাইক্রোফোনের সামনে এলেন, তত দিনে সেই লাজুক কিশোর থেকে বেশ পরিণত তরুণ হয়ে গেছেন মিরাজ।

টেস্ট অভিষেকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্মরণীয় কীর্তির পর ধীরে ধীরে নিজেকে করে তুলেছেন বাংলাদেশ দলের অপরিহার্য একজন সদস্য। শুরুটা সাদা পোশাকে হলেও আস্তে আস্তে রঙিন বলেও প্রমাণ করেছেন নিজের কার্যকারিতা।

সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিস্ময়বালক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন মিরাজ, আর কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচসেরার পুরস্কার নেওয়ার মাঝে খেলা হয়ে গেছে ১৮টি টেস্ট, ঝুলিতে ৮৪ শিকার। তবু শুরুর সেই মুহূর্তটাই এখনো জ্বলজ্বলে মিরাজের কাছে, ‘দুটিই ভালো হয়েছে। প্রথমটা, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে; সেটা ছিল আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ওইটাই এগিয়ে থাকবে। এখন তো অভিজ্ঞতার দিক থেকে আরো পরিপক্ব হয়েছি, বুঝতে পারছি কোন উইকেটে কী হবে। তাই ওইটাকেই (ইংল্যান্ড) এগিয়ে রাখব, যদিও এইটাও কম না।’

আজ জীবন বদলে গেছে মিরাজের। প্রধানমন্ত্রী বাড়ি করে দিয়েছেন, সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কঠিন যাত্রাপথে একে একে মানিয়ে নিয়েছেন মিরাজ। মিরাজ ভবিষ্যতে কত দূর যাবেন, তা নিয়ে অধিনায়ক সাকিবের মন্তব্য ‘আমার কাছে মনে হয়, সে যদি তার মাথা ঠাণ্ডা রাখে, পরিকল্পনাটা সহজ রাখে, তাহলে ও আরো ভালো বোলিং করতে পারবে।’

আরকে//