ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মাহবুবুল আলম চেয়ারম্যান এর স্বরণসভা অনুষ্ঠিত 

প্রকাশিত : ০৮:২৮ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন সময়ে মুজিব বাহিনী নামে পরিচিত ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স বা বিএলএফ’- চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানার ডেপুটি কমান্ডার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, প্রয়াত মাহবুবুল আলম চেয়ারম্যানের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্বরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।    

মঙ্গলবার বিকেলে সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এবি হাই স্কুল মাঠে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মাহফুজুর রহমান মিতা (এম পি)। সভাপতিত্ব করেন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিকুল ইসলাম।   

সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, ‘জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মাহবুবুল আলম চেয়ারম্যান ছিলেন একজন নিবেদিত দেশপ্রেমিক ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। তিনি আজীবন দেশ ও জাতিকে দিয়ে গেছেন। আজীবন তিনি নিলিপ্তভাবে এলাকার মানুষের জন্যে কাজ করে গেছেন। তাঁর জীবনব্যাপী বিপ্লবী আদর্শ থেকে নতুন প্রজন্মের কাছে শিক্ষণীয়। তাঁর মতো বীরযোদ্ধাকে আমি সম্মান জানাই।   

তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় মাহবুবুল আলম বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দিক্ষিত হয়ে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পরেছিলেন। তাদের নেতৃত্বে সন্দ্বীপ হানাদার মুক্ত হয়।’ 

মুক্তিযোদ্ধা বেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন, সরকারি এবি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি সাহেদুর রহমান ফাহাদ, সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মাহফুজুর রহমান সুমন, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সন্দ্বীপ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাইন উদ্দিন মিশন। এতে উপজেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। 

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ সন্দ্বীপ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে সর্বপ্রথম সন্দ্বীপ টাউনের কোর্ট প্রাঙ্গণে যে ক’জন মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন তাঁর মধ্যে মাহবুবুল আলম ছিলেন অন্যতম। এই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন, কমান্ডার রফিকুল ইসলাম, মো. মশিউর রহমান জগলু, আলী হায়দার চৌধুরী বাবলু।

১৯৭১ সালের জুন মাসে সন্দ্বীপ থেকে ১১জন তরুণ যুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের দেরাদুনে যান। সেখান থেকে প্রায় দুই মাস যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে সন্দ্বীপে প্রবেশ করেন তারা। এরপর স্থানীয় ৬৩৫ জন তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেন এবং জনমত সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। সেই সময় তিনি বিএলএফের সন্দ্বীপ ‘মধ্য জোনের’ দায়িত্তপ্রাপ্ত ছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি দক্ষিণ সন্দ্বীপ থেকে উত্তর সন্দ্বীপ জাওয়ার সময় রাজকারদের হাতে ধরাও পরেছিলেন।

এছাড়া সন্দ্বীপকে শত্রু মুক্ত করতে পরিকল্পনা অনুযায়ী মিলিশিয়া বাহিনীর সাথে প্রায় ৩ ঘণ্টা সম্মুখ যুদ্ধ হয়। সেসময় সন্দ্বীপ থেকে বাইরে যোগাযোগ বন্ধ করতেই আমরা টিন্ডটির যন্ত্রপাতি সরিয়ে ফেলেন তারা। এই সম্মুখ যুদ্ধে অনেকে যোগ দেন।

সন্দ্বীপ থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. রফিকুল ইসলাম, হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টু, আলী হায়দার চৌধুরী বাবলু, মাহবুবুল আলম  মো. শাহাজান (মগধরা), সুদাংশু লাল দাস (হরিশপুর), আজিজ উল্ল্যা প্রকাশ আজিজ ডাক্তার (মাইটভাঙ্গা), শফিউল্লা (সারিকাইত), মাইটভাঙ্গা শিবের বাড়ির অমিয় কর্মকার, কাজী সুফিয়ান (সারিকাইত), ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের শামসুল আলম খাদেম ও জয়নাল চৌধুরি, এবিএম ছিদ্দিকুর রহমান,শ্যামল কান্তি দাস, মো. ইব্রাহীম, মো. কামাল পাশা, মো. মশিউর রহমান জগলু, মৃণাল কান্তি, নাজমুল হোসেন বাবুল প্রমুখ। বিএলএফ ও এফএফ বাহিনীর মিলিত আক্রমণে সন্দ্বীপ ৩ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯৭৩ সালে নেমস্তির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর তিনি ৬৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।   

কেআই/এসি