ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সে যে মানে না মানা... 

পার্থ সারথী দাস 

প্রকাশিত : ১০:১১ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

টিন এজ। জীবনের সূচীপাতা। অন্যমনস্কতা, নতুন কিছু জানার কৌতুহল, নিয়মনীতি ভেঙে বাঁধন ছেড়ার ইচ্ছে জাগে মনে বিশেষ করে এই টিনএজটাতে। টিনএজকে নিয়ে এক কবি লিখেছিলেন ‘‘গ্রীষ্মের দুপুরে চড়ুই পাখিরা যেমন মনের আনন্দে ধুলোর মধ্যে লুটোপুটি খায়, টিন এজাররাও এদের চেয়ে কম নয়।” আসলেই খুব সুন্দর উপমা। এই সময়ে মনে জাগে হাজারো প্রশ্ন আর আজব যতো জিজ্ঞাসা। মুক্ত আকাশে ডানা মেলা পাখির মতো টিনএজারদের কল্পনাগুলোও যেনো ঘুরে বেড়ায় । এ সময়টাকে তারা বারণ বা নিষেদ মানতে চায় না, এ যেনো বাঁধ ভেঙে দাও.... বাঁধ ভেঙে দাও.... এমনটা অবস্থা।     

আর যে সকল টিন এজাররা এই বয়সে একটু বেশী পাকা হয়ে যায়, তাদের অভিভাবকরা সারাক্ষণই চিন্তায় থাকেন ছেলেমেয়ে কখন কি-না-কি কাণ্ড করে বসে। বয়েসটা বয়োসন্ধিকাল - না কৈশোর না যৌবন। আর এই সময়টাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশ কঠিনই হয়ে পড়ে। এই বয়সে ছেলেদের কণ্ঠস্বর পাল্টে যায়। চেহারায় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। অস্পষ্ট গোঁফ স্পষ্ট হতে শুরেু করে। মেয়েদেরও আসে শারীরিক পরিবর্তন । পাশাপাশি কারনে-অকারণে বারে বারে ওড়না ছিটকে পড়ে যাওয়া আবার গুছিয়ে নেয়া সম্ভবত: এই বয়েসেরই দোষ।

টিনএজারদের কাছে প্রেমটা বড় রোমান্টিক। নিজের অজান্তে কখন কিভাবে যে প্রেম এসে মনের মধ্যে ঠাঁই করে নেয় তা তারা হয়তো নিজেও জানে না। আর তাই প্রেমিক-প্রেমিকারা হাতে হাত রেখে ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় নীল আকাশে কখনও বা চলে যায় পরীর দেশে। প্রজাপতি হয়ে উড়ে উড়ে ফুলে ফুলে বসে। পড়ার টেবিলে বসে পাশের বাড়ির মনি-রাজুর দিকে মন চলে যাওয়া বেশি কিছু নয়। স্কুল-কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রেমিক-বন্ধুর সাথে আড্ডা দেয় অনেক টিনএজাররা। আর এ আড্ডায় উঠে আসে কতনা স্বপ্নের কথা, বাস্তবতা কম অবাস্তব আর আজগুবি সব প্ল্যান। বিশেষ করে প্রেম-ভালোবাসার বিষয়টি অধিক স্থান পায়। নিরলস আর দ্বিধাহীন সে গল্প।

আমাদের দেশে টিনএজাররা বেড়ে উঠছে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে। টিনএজে কেউবা রাত জেগে পড়া তৈরী করছে, কেউবা সমাজ সেবায়, কেউবা সুন্দর ভবিষ্যতের কল্পনা করছে, আর কেউবা তাস পেটাচ্ছে রাত জেগে। কেউবা নেশায় আসক্ত হয়ে বিপদগামী হচ্ছে। কেউবা ফেইসবুক আর ইন্টারনেট এ আসক্ত হয়ে বিপথে যাচ্ছে, জীবনকে সুন্দরভাবে সাজানোর এই সময়টাতে অনেকেই লেখাপড়া বাদ দিয়ে জীবন ও জীবিকার তাগিদে খেটে খেটে ঘাম ঝরাচ্ছে। কেউ কউ ছিনতাই করছে, ছিটকে চোরের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। কেউবা বখাটে হয়ে উঠছে, মেয়েদের উত্যক্ত করছে । এমনি আরও কতভাবে টিনএজাররা বেড়ে উঠছে সুখ-দুখ, আনন্দ-বেদনার মধ্য দিয়ে।

সবমিলিয়ে বলা যায়, আমাদের দেশে টিনএজাররা বেড়ে উঠছেনা ঠিক যেভাবে বেড়ে ওঠার কথা। এ সকল টিনএজারদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে বিশেষ করে অভিভাবকদের। কারণ এ বয়সটাতে বিপথে যাবার সম্ভাবনা খুব বেশী থাকে। তারা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, সে নজরটুকু রাখলে হয়তো অনেক অনাকাঙ্খিত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

টিনএজাররা ফুল বাগানের ফোটার আশায় ফুলের একেকটা কলি। এই কলিগুলোকে ফুটতে দিতে হবে। ফুটে যেনো সৌরভ ছড়ায় চারিদিকে। শুভ কামনা সকল টিনএজারদের।

এসি