ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

এফবিআই ও কানাডার পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন

নাইকো দুর্নীতিতে খালেদা ও তারেক জড়িত

প্রকাশিত : ১০:৫৪ এএম, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৩:২৫ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার

নাইকো দুর্নীতিতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- এফবিআই ও কানাডার রয়্যাল মাউন্টেড পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে।

তদন্তে উঠে এসেছে কিভাবে কাশেম শরিফের অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন হাত হয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কাছে পৌঁছায় ঘুষের টাকা। তদন্ত প্রতিবেদন দুটি এরইমধ্যে বাংলাদেশের আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আগামী ১২ই ডিসেম্বর এই মামলায় তাদের সাক্ষ্য দেবার কথা রয়েছে।

পূর্ব ছাতক গ্যাসক্ষেত্র অনিয়মের মাধ্যমে কানাডার কোম্পানি নাইকোর হাতে তুলে দেয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। পরের বছর খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দাখিল করা হয় অভিযোগপত্র।

সেই সময়ই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুরোধে নাইকো কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- এফবিআই। সংস্থাটির আন্তর্জাতিক অর্থপাচার ও সম্পদ উদ্ধার বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা ডেবরা লাপ্রিভেট গ্রিফিথ তদন্তের দায়িত্ব পান। ২০০৮-২০১১ সাল পর্যন্ত তদন্ত করেন তিনি।

মার্কিন প্রসিকিউটরকে দেয়া এফবিআই কর্মকর্তা ডেবরা লাপ্রিভেট গ্রিফিথের সাক্ষ্যে বলা হয়, ২০০৩ সালের শেষ দিকে বাপেক্স-নাইকো যৌথচুক্তি  হয়। এসময় নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কর্মকর্তা কাশেম শরীফের একাউন্টে প্রায় সাড়ে ২৯ লাখ মার্কিন ডলার জমা হয়। এরপর মধ্যস্থতাকারীদের হাত হয়ে প্রায় ৫লাখ ডলার যায় তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দীন আল মামুনের হাতে। যার বড় একটি অংশ তারেক রহমান পেয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

২০০৩ সালে নাইকো-বাপেক্স চুক্তিতে খালেদা জিয়ার সম্মতির বিষয়টিও তদন্তে উঠে আসে। প্রতিবেদন বলছে, নাইকোর কাছ থেকে সরাসরি ঘুষের টাকা নিয়েছেন তৎকালীয় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেনও।

এছাড়াও রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা কেভিন ডুগান তার সাক্ষ্যে জানিয়েছেন, ২০০৬ সালে আল মামুনের ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্টে ১ কোটি আট লাখ টাকা জমা হয়। যে অ্যাকাউন্টে তারেক রহমানের সম্পৃক্ততা ছিলো।

কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কানাডার আদালতে অর্থপাচার এবং ঘুষ প্রদানের মামলায় নাইকো দোষী সাব্যস্ত হয়।

আগামী ১২ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের আদালতে এই মামলায় এফবিআই ও  কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের কর্মকর্তাদেও সাক্ষ্য দেবার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের একটি অগ্রবর্তী দল বাংলাদেশ পরিদর্শনও করেছে।

মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই ও কানাডিয়ার পুলিশ নাইকো দুর্নীতি মামলায় ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ পেয়েছে বলে জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কানাডায় নিবন্ধিত নাইকো নামে একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশের কয়েকটি গ্যাস ফিল্ড লিজ নেওয়ার জন্য চেষ্টা করে আসছিল। ২০০২ সাল পর্যন্ত পূর্ব ছাতক গ্যাস ফিল্ড একটি ভার্জিন গ্যাস ফিল্ড অর্থাৎ গ্যাসে পূর্ণ ছিল বলে বাপেক্স এবং আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অভিমত দিয়েছিল। কিন্তু নাইকো নানা অসৎ পন্থা অবলম্বন করে আমাদের দেশের তৎকালীন ক্ষমতাসীন কিছু ব্যক্তি, বিশেষ করে হাওয়া ভবনকে প্রভাবিত করে এই পূর্ব ছাতক গ্যাস ফিল্ডটি লিজ নেয় এবং একটি পরিত্যক্ত গ্যাস ফিল্ড হিসেবে এটাকে তখন তাদের হাতে দেওয়া হয়। আসলে এই গ্যাস ফিল্ড কখনো পরিত্যক্ত ছিল না।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুরোধের পর ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে নাইকো দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন এফবিআই’র আন্তর্জাতিক অর্থ পাচার ও সম্পদ উদ্ধার বিশেষজ্ঞ স্পেশাল এজেন্ট ডেবরা লাপ্রেভোটে গ্রিফিত। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি চারবার বাংলাদেশ সফর করেন। ওই সময় ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেশন কমিটি অ্যাগেইন্সট গ্রিয়েভাস অফেন্সেস (এনসিসিএজিও)-এর সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশি তদন্তকারীদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। তদন্ত কাজে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড ও কানাডা থেকে নথি সংগ্রহ করেছেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন—সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক এমপি এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরিফ।

টিআর/