ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

পতাকা বিক্রির মধ্যে আনন্দ খুঁজে পান ইকবাল

প্রকাশিত : ০১:৪৪ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০১:৪৯ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার

বাবা মারা গেছেন ছোট বেলায়। মা কাজ করতেন মানুষের বাড়ীতে। তিন বোন ও দুই বোনের সংসার। এর মধ্যে ইকবাল শেখ সবার ছোট। বাবার মৃত্যুর পর ভাতের জন্য লড়াই পরিবারের সদস্যদের দিশেহারা করে দিয়েছে। প্রতিদিন পানিতে ভাত মেখে লবন মিশিয়ে খেতে দিতেন মা। খেতে খুব কষ্ট হতো। কিন্তু উপায় নেই। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, মাকে কখনো কষ্ট দিবেন না ইকবাল।

আর তাই ঠিক যখন বই-খাতা নিয়ে ইকবালের স্কুলে যাওয়ার কথা, তখনই শুরু হলো বেঁচে থাকার কঠিন লড়াই। যখন যা পেয়েছেন তাই করেছেন। হেটে হেটে চা বিক্রী করা, হোটেলে কাজ করা, ভ্যানগাড়ীতে খেলনা বিক্রী করা সহ অনেক পেশা বদল করেছেন ইকবাল। তবে যখনই ডিসেম্বর মাস আসে ইকবাল হাতে তুলে নেয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। উদ্দেশ্য একটাই। মাকে ভালোবেসে, দেশ প্রেমবোধ থেকে পরিবারের সদস্যদের মুখে ভাত তুলে দেওয়া। সারাদিন পতাকা বিক্রি করে দৈনিক যা আয় হয় তা নিয়ে তুলে দেন মায়ের হাতে।
ইকবাল শেখ আজ সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পতাকা বিক্রি করছিলো। কথা হয় তার সঙ্গে। গায়ে পুরানো সাদা র্শাট। কুচকানো প্যান্ট। শরীরে অযত্নের ছাপ হলেও চেহারায় একটা মায়া ও আত্মবিশ্বাস ফুটে আছে।কথা বলতে বলতে পতাকা বিক্রি করেছিলেন।

ইকবাল শেখের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায়। মা ভাই বোনেরা গ্রামে থাকেন। ছোট বোনদের বিয়ে দিতে হবে। দুই ভাই পড়ে স্কুলে। মাথার উপর অনেক দায়িত্ব। ইকবাল থাকেন গাজীপুর। সকালে পান্তা ভাত খেয়ে ঢাকায় চলে আসেন। গভীর রাতে আবার ফিরে যান গাজীপুর।
সারাদিনে কয়টা পতাকা বিক্রী হয় জানতে চাইলে ইকবাল জানান, ঠিক নেই। তবে এবার অন্য বছরের তুলনায় কম মনে হচ্ছে। বড় পতাকা কিনেন সত্তর আশি টাকায়, বিক্রি করেন দেড়শ টাকা। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে একশ টাকা। হাত পতাকা দশ টাকা করে বিক্রি করছেন। এছাড়া বাংলাদেশের মানচিত্র সংবলিত ব্যাজ বিক্রি করছেন দশ টাকা করে। ছোট বাচ্চরা এমন ব্যাজ বেশী কিনে।

ইকবাল ধারনা করছেন আগামী কয়েকদিন পতাকা ভালো বিক্রি হবে। পতাকা বিক্রির টাকা নিয়ে ফিরে যাবেন গ্রামে।

দেশ সম্পর্কে ইকবালের জানা শোনা কতটুকু সেই কৌতুহল থেকে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়- ডিসেম্বর মাসে কী হয়েছিল? স্বাভাবিক ভঙ্গীতে তার উত্তর, ‘দেশ স্বাধীন হয়েছিল।’

ইকবাল শেখ লজ্জিত মুখে জানায়, তার বাবা বঙ্গবন্ধুকে খুব ভালোবাসত। তাই ছেলের নামে যোগ করে দিয়েছেন শেখ। এটা নিয়ে অনেকে তখন হাসাহাসি করত। তবে ইকবাল শেখ এটা নিয়ে গর্ব করে।
ইকবাল শেখের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ভোট কাকে দিবে? এতোক্ষণের লাজুক ছেলেটি এবার পাল্টে গেল।

দৃঢ় কণ্ঠে বলল, ‘নৌকায়’।

প্রতিবেদককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইকবাল শেখ জানায়, আমাদের এলাকায় এবার অনেক কাজ হয়েছে। নৌকায় ভোট দিলে আরও অনেক কাজ হবে। 

আর কয়েকদিন পর মহান বিজয় দিবস। এ দিনে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় লাভ করেছিল। কিন্তু এখনো ইকবাল শেখরা যুদ্ধ করছে মায়ের মুখে, পরিবারের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে। এ যুদ্ধে বিজয় লাভ করতেই হবে।
আ আ//