ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

১৩ ডিসেম্বর : মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস

প্রকাশিত : ০৮:৫১ এএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:৫০ এএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

আজ ১৩ ডিসেম্বর। মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার মুক্তিকামী দামালছেলেদের প্রতিরোধের মুখে পাক হানাদাররা মানিকগঞ্জের মাটি থেকে পালিয়ে যায়। পরের দিন ১৪ ডিসেম্বর সকালে দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে তৎকালীন এমএলএ মাজাহারুল হক চাঁন মিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে লাল সবুজের পাতাকা উত্তোলন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে মানিকগঞ্জে শহীদ হন ৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধা আর আহত হন অনেকে। এ সময় হত্যা করা হয় স্বাধীনতাকামী প্রায় কয়েক হাজার মানুষকে। এই মুক্তিযুদ্ধে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা খেতাব পান। খেতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে স্কোয়াড্রন লিডার (অবঃ) বদরুল আলম (বীর প্রতীক), ইব্রাহীম খান (বীর প্রতীক), শহীদ মাহফুজুর রহমান (বীর প্রতিক) এবং মোহাম্মদ আতাহার আলী খান (বীর প্রতীক)।
একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্রাক-ডাউনের খবর পাওয়ার পর পরই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য মানিকগঞ্জে তৎকালীন এমএলএ খন্দকার মাজাহারুল হক চাঁন মিয়াকে চেয়ারম্যান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন মো. মোসলেম উদ্দিন খান হাবু মিয়া, ক্যাপ্টেন ( অবঃ) আবদুল হালিম চৌধুরী, খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, সৈয়দ আনোয়ার আলী চৌধুরী, মীর আবুল খায়ের ঘটু, মফিজুল ইসলাম খান কামাল। ২৫ মার্চ রাতে মানিকগঞ্জের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি শুরু হয়। মুক্তিকামী মানুষ ট্রেজারি থেকে ছিনিয়ে নেয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ। পরদিন থেকে ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর আলুর গুদামের পেছনে শুরু হয় অস্ত্র প্রশিক্ষণ। ওই দিনই জেলা কমান্ড কাউন্সিল সদস্যরা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য শপথ গ্রহণ করেন।
২৫ মার্চ মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে আরিচা ফেরিঘাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হেলিকপ্টারে করে বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা মানিকগঞ্জ শহরে ঢুকে পড়ে। ভারত থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে।
পাকবাহিনী, আল-বদর, আল-শামস, রাজাকারদের আক্রমণ, ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা ২টি ব্যানারে কাজ করেন। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সব কাজই অস্থায়ী সরকারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব চলঠিলো।
১৭ জুলাই ঘিওর থানা আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা পাক সেনাদের আহত করে হস্তগত করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ। ১৮ আগস্ট পাকবাহিনী হরিরামপুর থানায় প্রবেশ করলে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পিছপা হতে বাধ্য হয়। ১৩ অক্টোবর সিও অফিসে সংরক্ষিত পাকবাহিনী ক্যাম্প দখলের জন্য মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করলে পাকবাহিনী পরাজিত হয়। এখানে পাকবাহিনীর ৭০টি রাইফেল ৩টি এলএমজি ও ৭ বাক্সগুলি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতের আসে। পাকবাহিনীর ক্যাম্প দখলের পর সেখানকার ওয়্যারলেস অফিস পুড়িয়ে দেয়ার সময় আগুনে পুড়ে শাহাদাৎ বরণ করেন মুক্তিয়োদ্ধা মাহফুজুর রহমান আর পানু আহত হয় মোল্লা।
মানিকগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তান বাহিনীর বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়েছে।

ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী গ্রামে ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর হানাদার বাহিনী হামলা চালিয়ে তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমান এবং শিক্ষানুরাগী তেরশ্রী গ্রামের জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরীসহ ৪৩ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
এসএ/