ওয়ার্কার্স পার্টির ইশতেহার ঘোষণা
প্রকাশিত : ০৪:৩৫ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে।
এ ইশতেহারে রাষ্ট্র, প্রশাসন ও অর্থনীতির সর্বস্তরে দুর্নীতি রোধ, ব্যাংক জালিয়াতি, অর্থ পাচার ও ঋণ খেলাপি রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বেকার যুবকদের নিবন্ধিত করে কর্মসংস্থান সাপেক্ষে বেকার ভাতা প্রদান করাসহ ১৩ দফা লক্ষ্য তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে ২১ দফা কর্মসূচি দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর তোপখানা রোডে অবস্থিত ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয় চত্বরে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলন করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এ ইশতেহার উপস্থাপন করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।
তিনি নির্বাচনি ইশতেহারে পার্টির ১৩ দফা লক্ষ্যে ঘোষণা করেন-
এক. রাজনীতিকে দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে রক্ষা করতে রাজনীতি ও নির্বাচন ব্যবস্থার পরিপূর্ণ সংস্কার করা।
দুই. উন্নয়নের পাশাপাশি ধনী-দরিদ্রের ও গ্রাম-শহরের বৈষম্য যৌক্তিকহারে কমিয়ে আনা, দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চলসহ অধিক দারিদ্রপীড়িত এলাকাগুলোর জন্যে বিশেষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সকল জেলায় অর্থনৈতিক জোন তৈরি করা ও জেলাভিত্তিক বাজেটের গণদাবি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া এবং সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করা।
তিন. রাষ্ট্র, প্রশাসন ও অর্থনীতির সর্বস্তরে দুর্নীতি রোধ, ব্যাংক জালিয়াতি, অর্থ পাচার ও ঋণ খেলাপি রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ব্যাংক ব্যবস্থাকে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা।
চার. বেকার যুবকদের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত বেকারদের কর্মসংস্থান সাপেক্ষে বেকার ভাতা প্রদান করা। চাকরির বয়সসীমা ৩৫ বছর করা, যুবকদের মাদকাসক্তি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ পরিহারে উদ্বুদ্ধ করা।
পাঁচ. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি ব্যবস্থা, ছাত্রাবাসগুলোতে মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি কমিয়ে সাধারণ মানুষের সামর্থের মধ্যে আনা, গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত বৃত্তির ব্যবস্থা করা, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধুনিকীকরণ, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা, শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ করা, নিয়োগসহ শিক্ষক্ষেত্রে দুর্নীতির অবসান করা, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকল রোধের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া ও সর্বোপরি ২০১০ সালের শিক্ষানীতির বাস্তাবায়ন করা, বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ সাধন ও অপসংস্কৃতি রোধের কার্যকর ব্যবস্থা করা।
ছয়. ধর্মীয় ও জাতিগত সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদকে প্রতিরোধ করা। স্ব স্ব ধর্ম পালনের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা, কোনো অজুহাত ছাড়া শত্রু-সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইনের বাস্তাবায়নের ব্যবস্থা করা।
সাত. শহর ও গ্রামের কর্মজীবী নারীর কর্মসংস্থান করা, মজুরি বৈষম্য দূর করা। নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন নিপীড়ন, যৌতুকের অত্যাচার ও বাল্যবিবাহ রোধ করা এবং জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ করা ও সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। শিশুদের রাজনীতি ও সহিংসতায় ব্যবহার করার বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করা।
আট. জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মূল (বেসিক) মজুরি বৃদ্ধি করে মজুরির হার নির্ধারণ করা, শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ আজীবন আয়ের সমান ও উচ্চতর আদালতের নির্দেশনানুসারে গঠিত কমিটির প্রস্তাবিত অন্যূন ১৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন করা।
নয়. কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায়সঙ্গত মূল্য নিশ্চিত করা, কৃষিপণ্য ও প্রাণীসম্পদ রফতানির জন্য অবকাঠামো গঠন করা, কৃষি উপকরণ সুলভ ও সহজলভ্য করা, কৃষি ঋণের দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ করা, খেতমজুরদের সারা বছরের কাজ নিশ্চিত করা ও কৃষকের অভিযোগ বিচারে কৃষি আদালত প্রতিষ্ঠা করা।
দশ. ডিজিটাল ব্যবস্থাকে সর্বগ্রাহী ও ডিজিটাল ডিভাইড বা ডিজিটাল বৈষম্য (কম্পিউটার প্রশিক্ষিত ও কম্পিউটির অশিক্ষিত জনসংখ্যার ব্যবধান) কমানো ও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।
এগারো. শিল্পায়নের ক্ষেত্রে সংবিধানের ১৩ ধারাকে ভিত্তি করে রাষ্ট্রীয় মালিকানা, সমবায় ও ব্যক্তি মালিকানার ভারসাম্য রক্ষা করা, পরিবেশ রক্ষার বিষয়কে অগ্রাধিকার প্রদান করা।
বারো. বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনাহীনতা ও ব্যক্তি স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করা। গ্যাস সম্পদ আহরণে বাপেক্সকে আরও সক্ষম করে তোলা।
তেরো. পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১৩ দফা লক্ষ্য তুলে ধরার সময় ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমাদের দলের সদস্যরা ঐক্যের ধারায় ১৪ দলীয় জোটের সমঝোতার ভিত্তিতে যেমন ‘নৌকা’ প্রতীকে নির্বাচন করছে, তেমনি পার্টি প্রতীক ‘হাতুড়ি’ নিয়েও নির্বাচনে লড়াই করছে।
এসি