ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ : ইতিহাসে এই দিন

প্রকাশিত : ০৯:০৬ এএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

আজ ১৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে দেশের বিভিন্ন স্থান হানাদারমুক্ত হয়েছিল। এক নজরে দেখে নি কোথায় কোথায় হানাদারমুক্ত হয়।
বগুড়া :

আজকের এই দিনে পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে এ্যাডওয়ার্ড পার্কে ওড়ে বিজয়ের পতাকা। এর আগে হানাদার বাহিনী বগুড়া শহরের দখল নিতে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কয়েক দফা আক্রমণ চালায়। কিন্তু মুক্তি সেনারা বীরত্বের সঙ্গে ওই আক্রমণ প্রতিহত করেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

এদিনেই মুক্ত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামকে স্মরণীয় করে রাখতে বীরশ্রেষ্ঠের শহীদ হওয়ার স্থানে মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর নাম রাখা হয়েছে শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (বীরশ্রেষ্ঠ) সেতু, মহানন্দা নদীর অপর প্রান্তে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ যোদ্ধাদের নাম ফলক, সোনামসজিদে গণকবর এবং সোনামসজিদ প্রাঙ্গণে করা হয়েছে ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের সমাধিসৌধ।
জয়পুরহাট :

১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পাক হানাদারদের হটিয়ে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে শত শত মুক্তিযোদ্ধা ভোরের আকাশ রাঙিয়ে ওঠার আগেই শীতের কুয়াশা ছিন্নভিন্ন করে ফাঁকা গুলি বর্ষণ ও উল্লাসের মধ্য দিয়ে জয়পুরহাটের ডাকবাংলোতে প্রবেশ করেন। পাকিস্তানি সৈন্য বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদররা তখন পালিয়ে বগুড়া ও ঘোড়াঘাটের দিকে ছুটে যায় জীবন বাঁচাতে। জয়পুরহাটের ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে প্রথম স্বাধীনতার বিজয় কেতন সোনালি বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খন্দকার আসাদুজ্জামান বাবলু (বাঘা বাবলু)।
সিরাজগঞ্জ :

৯ ডিসেম্বর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সমবেত করে সিরাজগঞ্জ মুক্ত করার জন্য মুক্তি বাহিনী শপথ গ্রহণ করে। মুক্তিবাহিনীর নিজস্ব রণকৌশলে চারিদিক থেকে একযোগে আক্রমণ শুরু করে সিরাজগঞ্জ মুক্ত করার জন্যে। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সমবেত করার জন্য সিরাজগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন ভুলু ও আমিনুল ইসলাম চৌধুরী (মুজিব বাহিনীর গেরিলা) উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে ১৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী রেলযোগে ঈশ্বরদী অভিমুখে পালিয়ে যায়। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে হাজার হাজার জনতা ও বিজয়ী মুক্তিবাহিনী জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে সিরাজগঞ্জ শহর দখল করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসটি পালনে আজ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

সুজানগর (পাবনা) :

১৯৭১ সালের আজকের এইদিনে পাকসেনারা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত হলে এখানে স্বাধীনতার পতাকা উড়ানো হয়।
পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) :

১৯৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচবিবির আকাশে উড়িয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকা। খুব সকালে খন্দকার আসাদুজ্জামান বাবলুর নেতৃত্বে দেড়শ’ মুক্তিযোদ্ধার একটি দল ভারত থেকে আসেন সীমান্ত ঘেঁষা এ উপজেলার ভূঁইডোবা গ্রামে। অবরুদ্ধ গ্রামবাসীরা মুক্তির আনন্দে উদ্বেল চিত্তে বরণ করেন মুক্তিযোদ্ধাদের। এই দলটি সকাল ১০টার দিকে সদরে আসে। উপজেলায় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে দেন আসাদুজ্জামান বাবলু।
তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) :

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুর রহমান খান সেনা মিয়ার নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা সদরের তিন দিক থেকে পাক হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। দীর্ঘ চার ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলির পর পাক হানাদার ও তাদের দোসররা ওই রাতেই তাড়াইল বাজারের দক্ষিণ দিক দিয়ে নরসুন্দা নদী পার হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পরদিন ১৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিকামী জনতা তাড়াইল উপজেলা সদরে উত্তোলন করে বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা।

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) :

মুজিব বাহিনীর প্রধান ডা. মোসলেমউদ্দিনের নেতৃত্বে ১১ জনের একটি দল ১৩ ডিসেম্বর শেষ রাতে উপজেলার পাকবাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমণ করে। এ সময় তারা পালিয়ে যায়। পরদিন ১৪ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় মোরেলগঞ্জকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মুজিব বাহিনীর সদস্যরা।
এসএ/