ইটিভিতে আজ তথ্যচিত্র ‘ঢাকার গণহত্যা’
প্রকাশিত : ১২:৩৮ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৬:৩০ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
আজ ১৪ ডিসেম্বর। একুশে টেলিভিশনে রাত সাড়ে ৯টায় সম্প্রচার হবে তথ্যচিত্র ‘ঢাকার গণহত্যা’। এটি নির্মাণ করেছেন রঞ্জন মল্লিক।
পরিচালক রঞ্জন মল্লিক এক সাক্ষাতকারে তার নির্মিত তথ্যচিত্রের কথা বলতে গিয়ে দর্শকদের কাছে কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন। যা নিচে দেওয়া হলো :
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানি সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের নামে প্রহসনের সৃষ্টি করে। ২৫ মার্চ নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাঙালি নিধনের নীল নকসা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান চলে যান। রাত ১১.৩০ মিনিট, ঢাকার নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অতর্কিত আক্রমণ চালায়। প্রথমেই তারা ছাত্র আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণ করে। জগন্নাথ হল, রোকেয়া হল, কলা-ভবন, ইকবাল হল বর্তমান সার্জেন্ট জহিরুল হক হল সহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
এ সময় জগন্নাথ হলের দেওয়াল ভেঙ্গে বিকট শব্দে সামরিক কনভয় প্রবেশ করে। আকাশে সার্চ লাইট জ্বালিয়ে প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু করে। হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জ্যোর্তিময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য সহ হলের ৬৬ জন ছাত্র শিক্ষক কর্মচারিকে হত্যা করে। তা ছাড়া নাম না জানা অনেকেই সেই রাতে আহত ও নিহত হন।
আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত একটি দেশের সেনাবাহিনী সেই দেশেরই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে আক্রমণ চালাতে পারে- এমন নজির বোধ হয় স্মরণকালের ইতিহাসে কোথাও নেই। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিশ্বকে হতবাক করে দিয়ে সেই জঘন্যতম লজ্জাজনক কাজটি করেছিলো। পাকসেনারা রোকেয়া হল আক্রমন করে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলো।
তিনশত বছরের পুরানো মন্দির শ্রী শ্রী রমনা কালিবাড়ি। এ মন্দিরটির উচ্চতা ছিলো ১২০ ফিট। বহুদূর থেকে মন্দিরের চূড়া দেখা যেত। মন্দিরের চারিদিকে জনবসতি ছিল। ২৭ মার্চ গভীর রাতে পাকসেনারা মন্দিও আক্রমণ করে। মন্দিরের পুরোহিত শ্রী পরমানন্দ গিরি সহ ৬০/৬৫ জনকে হত্যা করে।
১৯৭১ সালে মীরপুর ছিলো শহর সংলগ্ন গ্রামাঞ্চল। স্বাধীনতার পর এখানে দশটি বধ্যভূমির সন্ধান মেলে। কালাপানি বধ্যভূমি, রাইন খোলা বধ্যভূমি, শিরনির টেক বধ্যভূমি, সারেং বাড়ি বধ্যভূমি, গোলার টেক বধ্যভূমি, বাংলা কলেজের আম বাগান বধ্যভূমি, আলোকদি বধ্যভূমি, মুসলিম বাজার বধ্যভূমি, শিয়াল বাড়ি বধ্যভূমি ও জল্লাদ খানা বধ্যভূমি।
বুদ্ধিজীবী হত্যার একটি ডায়েরি পাওয়া যায়, ৯ জানুয়ারি ১৯৭২ পূর্বদেশ পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়। ঐ ডায়েরিতে লিখা ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন শিক্ষক, শিক্ষিকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকের নাম। এবং শিক্ষকরা কোয়াটারের কত নম্বর বাড়িতে থাকেন তাও উল্লেখ ছিল। ডায়রিতে আরো লিখা ছিলো জল্লাদ বাহিনীর অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মঈনউদ্দিন, কমান্ডার শওকত ইমরান, সিটি বদর বাহিনীর প্রধান শামসুল হকের নাম।
মানুষ হত্যা করে শহরময় অতংক সৃষ্টি ছিলো পাক সেনাবাহিনীর প্রধান কাজ। পুরানো ঢাকার শাঁখারি পট্টির অপ্রশস্ত রাস্তার উভয় প্রান্তে খান সেনারা অবরোধ করে ঘরে ঘরে হানা দেয়। এ সময় তারা নির্বিচারে নারী পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে।
১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর রায়ের বাজার বধ্যভূমি আবিস্কৃত হয়। সেদিন রায়র বাজারের বিভিন্ন গর্ত থেকে প্রচুর সংখ্যক লাশ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে অধ্যাপক, ডাক্তার,সাংবাদিক,সাহিত্যিকেরই লাশ ছিলো বেশি।
মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ইনস্টিটিউট ছিলো আর এক নির্যাতন আর হত্যা কেন্দ্র। আল-বদর বাহিনীর এই হেড কোয়াটারে অসংখ্য মানুষকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে পরিচিত শত শত অধ্যাপক, চিকিৎসক ও ডাক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এখানে ডেকে এনে হত্যা করা হতো। হত্যার পর অধিকাংশ লাশেরই চোখ উপরানো থাকতো।
পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হত্যাকান্ডের সামান্যচিত্রই তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে। ঢাকা শহরের সবগুলো গণহত্যার চিত্র তুলে ধরা হলে হয়তো দেখা যাবে ঢাকাতেই লক্ষ লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই নির্মম হত্যাকান্ড জাতি কখনো ভুলবে না। আন্তর্জাতিক আদালতে গণমানুষের হত্যার বিচার অবশ্যই আমরা চাইবো।
এসএ/