ঢাকা, শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১

আমজাদ হোসেনের বিখ্যাত সব কর্ম

প্রকাশিত : ০৯:০৩ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

আমজাদ হোসেন, বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের কিংবদন্তী।শিল্পগুণে তিনি একাধারে বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও অভিনয়শিল্পী হিসেবে সমাদৃত। তার নির্মিত ছবিগুলো খুব সহজেই দর্শক হৃদয়কে করেছে আকৃষ্ট।যা কালজয়ী হিসেবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনকে করেছে সমৃদ্ধ।

আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় জনপ্রিয়তা পাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’ ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ইত্যাদি।

মুক্তিযুদ্ধ পূর্বকালীন যেই সিনেমা স্বাধীনতা আন্দোলনে গণজোয়ার এনেছিল, সেই কালজয়ী সিনেমা ‘জীবন থেকে নেয়া’র কাহিনীকার, সংলাপ রচয়িতা ছিলেন আমজাদ হোসেন। গ্রাম-বাংলার ভালোবাসার ছবি হিসেবে যেই ছবিটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত, সেই ‘সুজন সখী’রও কাহিনীকার, সংলাপ রচয়িতা তিনি। পৌরাণিক কাহিনী নিয়ে নির্মিত জনপ্রিয় ছবি ‘বেহুলা’র সংলাপ রচয়িত হয়েছে তার হাত ধরেই। এছাড়া ধারাপাত, আনোয়ারা, আবার তোরা মানুষ হ, জয়যাত্রা, আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসার মত জনপ্রিয় ছবিগুলোর কাহিনীকার তিনি। অভিনেতা আমজাদ হোসেন ও বেশ জনপ্রিয়। জীবন থেকে নেয়ার আলোচিত চরিত্র ‘মধু ভাই’ রূপে অনবদ্য অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয়ে তিনি গেঁথে আছেন। এছাড়া হারানো দিন, আগুন নিয়ে খেলা, বেহুলা, প্রাণের মানুষ, প্রেমী ও প্রেমী সহ অনেক সিনেমাতে তিনি অভিনয় করেছেন। এক সময়কার বাংলাদেশীদের ঈদ বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘জব্বার আলী’র নাম ভূমিকায় তিনিই অভিনয় করেছেন। গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী সিনেমার সেই কালজয়ী গানগুলির সৃষ্টিদাতা তিনি।

আগুন নিয়ে খেলা (১৯৬৭) ও দুই ভাই (১৯৬৮) এই ছবি দুটি তিনি যৌথভাবে নির্মাণ করেন। প্রথম এককভাবে পরিচালনায় আসেন ১৯৭৬ সালে ‘নয়ন মনি’ সিনেমা দিয়ে। এটি তিনি নির্মাণ করেন নিজের লেখা উপন্যাস ‘নিরক্ষর স্বর্গে’ অবলম্বনে। ফারুক, ববিতা, আনোয়ার হোসেন, সুলতানা জামান, আনোয়ারা, রওশন জামিল, সৈয়দ হাসান ইমাম, এটিএম শামসুজ্জামান অভিনীত এই ছবিটি ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়। বছর শেষে চারটি শাখায় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে। তিনি নিজেও জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হন।

১৯৭৮ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালনা করেন বিখ্যাত সিনেমা ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’। নিজের লেখা ‘ধ্রুপদী এখন ট্রেনে’ উপন্যাস অবলম্বনে তিনি সিনেমাটি নির্মাণ করেন। ববিতা, ফারুক, আনোয়ারা, রওশন জামিল, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, তারানা হালিম, রোজি আফসারী, এটিএম শামসুজ্জামান অভিনীত ছবিটি সেই সময় দারুণ ব্যবসাসফল হয়। সাথে কালজয়ী ছবি হিসেবে এটি স্থান করে নেয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে। গোলাপী এখন ট্রেনে সেই সময় ১১ টি শাখায় পুরস্কার পেয়ে ভীষণ আলোচিত হয়, তিনি নিজেই পাঁচটি পুরস্কার পেয়ে সবাইকে চমকে দেন।

১৯৭৯ সালে নির্মাণ করেন বিখ্যাত সিনেমা ‘সুন্দরী’। ববিতা, ইলিয়াস কাঞ্চন, আনোয়ারা, সাইফুদ্দিন অভিনীত এই ছবিটি ৭ টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পায়। তিনি নিজে পান ২ টি জাতীয় পুরস্কার। ১৯৮০ সালে ববিতা, আলমগীর, রোজিনা, আনোয়ারাকে নিয়ে নির্মাণ করেন জনপ্রিয় সিনেমা ‘কসাই’। এই ছবিটি ৪ টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পায়।

১৯৮১ সালে নির্মাণ করেন দারুণ ব্যবসাসফল ছবি ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’। অভিনয় করেছিলেন বুলবুল আহমেদ, ববিতা, আনোয়ারা। ১৯৮২ সালে রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, আনোয়ারা নিয়ে নির্মাণ করেন আরেক বিখ্যাত সিনেমা ‘দুই পয়সার আলতা’। ছবিটি ৪ টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পায়।

১৯৮৪ সালে নির্মাণ করেন নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা ছবি ‘ভাত দে’। ইতিহাস বিখ্যাত এই ছবিটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম সারিতে নাম লিখে নিয়েছে। শাবানার ইচ্ছা ছিলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবার। মূলত তার এই আকাঙ্খার কথা শুনেই আমজাদ হোসেন একমাস খেটে স্ক্রীপ্টটি তৈরী করেন। শাবানা ঠিকই সে বছর শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। শাবানা, আলমগীর, আনোয়ারা, রাজীব অভিনীত এই ছবিটি দারুণ ব্যবসা করে। ১০ টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে। তিনি নিজেই পান ৪ টি পুরস্কার।

এরপর একে একে নির্মাণ করেন সখিনার যুদ্ধ (১৯৮৪), হীরামতি (১৯৮৮), গোলাপী এখন ঢাকায় (১৯৯৫), আদরের সন্তান (১৯৯৫), সুন্দরী বধূ (২০০২), প্রাণের মানুষ (২০০৩), কাল সকালে (২০০৫) ও গোলাপী এখন বিলাতে (২০১০)। মাঝে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কাশীনাথ’ এর অনুপ্রেরণায় নির্মিত ছবি ‘বড় বাড়ীর মেয়ে’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন।

আমজাদ হোসেন একাধিক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস লিখেছেন। সেইখান থেকে তৌকির আহমেদ বানিয়েছেন ‘জয়যাত্রা’। যেটার জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন। তিনিই লিখেছেন জীবন থেকে নেয়া, আবার তোরা মানুষ হ। এমনকি তার পুত্র সোহেল আরমানের প্রথম চলচ্চিত্র “এই তো প্রেম” মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। অথচ আমজাদ হোসেন নিজে কোন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেননি। তার মত একজন প্রথিতযশার পরিচালকের কাছ থেকে যা হতাশাজনক। তিনি যদি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র বানাতেন, তবে সেটা নিশ্চিত কালজয়ী মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র হিসেবে স্থান পেতো।

আমজাদ হোসেন অর্জন করছেন সর্বোচ্চ ১৩ টি জাতীয় পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার সহ আরো বহু পুরস্কার।

আরকে//