নির্মাতা আমজাদকে নিয়ে ববিতার স্মৃতিচারণ
প্রকাশিত : ১০:৪৫ এএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১০:৪৭ এএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার
চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের মৃত্যুতে ঢালিউডে যেন শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে অভিনেতা ও অভিনেত্রী থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত সবাই শোক প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে অনেকেই তার সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন স্মৃতি প্রকাশ করেছেন।
এই কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকারের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে তারই সহকর্মী ববিতা বলেন, খুব ছোটবেলা থেকেই আমজাদ হোসেনকে চিনতাম। জহির রায়হান আমার দুলাভাই। তার সহকারী ছিলেন আমজাদ ভাই। সেই সূত্রে পারিবারিক সম্পর্ক আমাদের। এবার দেশে ফিরে আমরা তিন বোন তাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তখন তাকে দেখে মনের মধ্যে কেমন যেন ভয় ধরে গিয়েছিল, বেশি দিন বাঁচবেন বলে মনে হয়নি। কিন্তু কাউকে বলিনি কথাটা। দোয়া করেছি, তিনি যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।
তিনি বলেন, আমজাদ হোসেনের মতো মেধাবী মানুষ আর দ্বিতীয়টি পাব না। কোন গুণটি ছিল না তার! গীতিকার, গল্পকার থেকে শুরু করে অভিনেতা, পরিচালক—সব দিক থেকেই সফল তিনি। আমি খুব ভাগ্যবতী, এমন নির্মাতার বেশির ভাগ ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম।
ববিতা বলেন, আমজাদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। কোনটা রেখে কোনটা বলব! ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’র শুটিং করতে ঢাকা থেকে জামালপুর যাচ্ছিলাম। হাজার মানুষের ভিড়ে তিনি কাগজ-কলম নিয়ে বসে গেলেন। লিখে ফেললেন কালজয়ী গান ‘হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ’। আমি তাকিয়ে ছিলাম অপলক। কিভাবে পারেন মুহূর্তের মধ্যে এমন অসাধারণ সব কথা সৃষ্টি করতে! তিনি খুব সহজ-সরল জীবন যাপন করতেন।
একবার ট্রেনে করে আমরা কোথায় যেন যাচ্ছিলাম। কেউ কেউ ফার্স্ট ক্লাসে আর কেউ সেকেন্ড ক্লাসে যাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমন সময় তিনি এসে বললেন, ‘কিসের ক্লাস! বাংলাদেশে কোনো ক্লাস নেই। সবাই সমান। আমরা একসঙ্গেই বসব সবাই।’ খ্যাতির চূড়ায় অবস্থান করা একজন মানুষ অবলীলায় যখন এমন কথা বলতে পারেন, তাকে সম্মান না জানিয়ে কি উপায় আছে?
আমজাদ হোসেনের সিনেমায় গ্রামবাংলার রূপ যতটা ফুটে উঠেছে আর কোনো পরিচালক সেটা দেখাতে পারেননি। তার ছবি যেমন বিভিন্ন উৎসবে পুরস্কৃত হতো ঠিক তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও সফল হতো। এটা অন্য পরিচালকদের দ্বারা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
সত্তর ও আশির দশকে একটা কথা প্রচলিত ছিল ইন্ডাস্ট্রিতে। আর সেটা হলো, আমজাদ হোসেন, ববিতা, আনোয়ারা, ফারুক আর রওশন জামিল যে ছবিতে আছে সে ছবি বছরের শ্রেষ্ঠ ছবি। মুক্তির আগেই শেষ হয়ে যেত হল বুকিং। সে কি মারমার কাটকাট ব্যবসা। পরিচালক হিসেবে আমি যেমন তার ভক্ত ছিলাম ঠিক তেমনি ছিলাম গানের ভক্তও। পরিশেষে আমি তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
উল্লেখ্য, কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী এবং লেখক আমজাদ হোসেন শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মারা যান। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমজাদ হোসেনকে।
এমএইচ/