অফিসে বসে কাজ, বাড়ছে হাড়ের সমস্যা
সহজে সমাধানের উপায়
প্রকাশিত : ০১:৪১ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৫:৫৭ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ রবিবার
কর্মব্যস্ত যুগে বেশির ভাগ সময়টাই কেটে যায় একনাগাড়ে বসে কাজ করতে করতে। সকালের অফিসে এসে চেয়ার হাঁকিয়ে বসা থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে টিভি-র চ্যানেলে চোখ বা ছোটখাটো ঘরোয়া আড্ডা— বসে থাকার বিরাম নেই। তার উপর শীতের ঠান্ডায় ঘন ঘন বাইরে বেরতে চান না অনেকেই। আবার গরম কালে ঘর ও অফিসের এসি ছেড়ে বাইরে বোরনোও হয় না।
এই দীর্ঘ বসে থাকার সূত্র ধরেই শরীরে বাসা বাঁধে ব্যথা–বেদনা৷ কম্পিউটারের সঙ্গত পেলে তো কথাই নেই৷ বলছিলেন ভারতের অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সেনগুপ্ত ৷ আসলে বসে থাকলে শরীরের বেশির ভাগ ভার কোমরে এসে পড়ে৷ ভারের চাপে ক্লান্ত হয় পেশী। শুরু হয় ব্যথা৷
বসে থাকার ফলে ওজন ও ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়ায় সেই বাড়তি চাপও গিয়ে পড়ে হাঁটু–কোমরে৷ আবার ওজন কমানোর আশায় ভুলভাল ডায়েটিং শুরু করলে অপুষ্টির হাত ধরে হাড় নরম হতে শুরু করে বিপদ বাড়ায়৷ সুতরাং নিয়ম না মেনে ভুল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হলে কিন্তু হাড়ের ক্ষতি হবে অচিরেই। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়েবে হাড়ের সমস্যাও।
সাধারণত যে সব কারণে সমস্যায় পড়ি আমরা—
*গায়ে পর্যাপ্ত রোদ না লাগলে ভিটামিন ডি–র অভাব হয়ে ব্যথা বাড়তে পারে৷
*দিনের শেষে আরাম কেদারায় গা এলিয়ে বসে টিভি দেখা বা আড্ডা মারার বদভ্যাস আছে অনেকেরই৷ কিন্তু এতে কোমর–হাঁটু–ঘাড়ের যথেষ্ট সর্বনাশ হয়৷
*নিয়ম মেনে কম্পিউটারে কাজ করলে ঠিক আছে৷ কিন্তু তা হয় না প্রায়শই৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে টেবিলের এক ধারে থাকে মনিটর, মুখের সামনে কি বোর্ড৷ ফলে কাজ করার সময় ঘাড় বেঁকে থাকে৷ তারই ফল, ঘাড়ে শক্ত ভাব, ব্যথা৷
*কি বোর্ডে আঙুল চালাতে চালাতে আঙুল ব্যথা হয়, কব্জির স্নায়ুতে চাপ পড়ে কব্জি ব্যথা থেকে কারপাল টানেল সিনড্রোম পর্যন্ত হতে পারে৷ কনুই বা কাঁধ ব্যথাও হয় অনেকের৷
*সাধারণ চেয়ারে বসে কাজ করলে ভাল সাপোর্ট থাকে না বলে বাড়ে কোমর ব্যথা৷
*চেয়ার–টেবিলের উচ্চতা ঠিক না থাকলে ঘাড়ে–কোমরে সমস্যা হতে পারে৷
*হাড়ের ক্যালসিয়াম কমাতে ধূমপান, মদ, ফাস্টফুড, নরম পানীয়র জুড়ি নেই৷ অথচ বসে কাজ করতে করতে একঘেয়ে লাগলে এ সব খাওয়া চলে ভাল মতো৷ এতে আরও বিপদ বাড়ে৷
সমাধান
*টানা ঘণ্টা খানেক কাজের পর ৫–৭ মিনিট ছুটি নিন৷ দু’–একটা স্ট্রেচিং করুন৷ একটু ঘুরে আসুন৷ বসার ধরন মাঝে মাঝে পাল্টান৷ কোমরের কাছে কুশন রাখুন৷
*হাঁটু ব্যথা এড়াতে চেয়ারে বসে পা টেবিলের নীচে রাখা অবস্থায় প্রতি ঘণ্টায় অন্তত এক মিনিট থাইয়ের পেশি শক্ত ও ঢিলে করুন৷
*কাজ করতে করতে ঘাড় শক্ত লাগলে চেয়ারে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকুন মিনিট খানেক৷ মাথা ডাইনে–বাঁয়ে ঘোরান দু’–চার বার৷
*আঙুল ও কব্জি ব্যথা করলে মাঝে মাঝে বিশ্রাম দিন৷ অবসর পেলে হাত মুঠো করুন, খুলুন৷ হাত মুঠো করে কব্জিকে বিভিন্ন দিকে ঘোরান৷
বাড়ি ফিরে
*কব্জি ব্যথা হলে গরম পানিতে ডুবিয়ে হাত মুঠো করুন ও ছাড়ুন।
*ব্যথা–বেদনা কম রাখতে পাতলা তুলোর তোশকে মোটামুটি ২ ইঞ্চি মতো উচ্চতার তুলোর বালিশে ঘুমোন৷ ৬ মাস–এক বছর অন্তর বালিশ বদলান৷
*টিভি এমন জায়গায় রাখুন যাতে চিত হয়ে শুয়ে দেখা যায়৷
*রোজ ২০–৩০ মিনিট হাঁটুন ও মিনিট ২০ হাঁটু, কোমর, ঘাড়, কাঁধ ও হাতের ব্যায়াম করুন৷
কী খাবেন, কী খাবেন না
*ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার যেমন, ডিম, দুধ, দই, ছানা, চিজ, মাংস, ছোট মাছ, কাঁকড়া, খেজুর, নাসপাতির সঙ্গে পর্যাপ্ত ভাত, রুটি, ডাল, শাকসব্জি খান৷
*মধ্যবয়সী মহিলারা দিনে একটা করে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাবেন৷
*চা–কফি–কোলা কম খান, জল খান শরীর বুঝে।
*মদ ও সিগারেটে ছেড়ে দিন।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার
এমএইচ/