ইশতেহারে ঐক্যফ্রন্টের ১৪ প্রতিশ্রুতি
প্রকাশিত : ১১:৫৫ এএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০১:১৮ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ১৪ টি প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সোমবার ঢাকার পূর্বানী হোটেলে বিরোধী দলগুলোর জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।
এ সময় মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সুব্রত চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না, ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কাদের সিদ্দিকী, রেজা কিবরিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৪ টি ইশতেহার:
১) প্রতিহিংসা বা জিঘাংসা নয়, জাতীয় ঐক্যই লক্ষ্য
*গত ১০ বছরের মামলা, গুম, খুন, বিচারবর্হিভূত হত্যা তদন্তে শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী, আইনজীবীদের সমন্বয়ে সর্বদলীয় সত্যানুসন্ধান ও বিভেদ নিরসন কমিশন গঠন করা হবে। খোলামনে আলোচনা করে ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।
*সকল জাতীয় বীরদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
*একদলীয় শাসনের যাতে পুন:জন্ম না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে।
২) নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা
*বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড ও গুম পুরোপুরি বন্ধ করা হবে।
*ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করা হবে।
*রিমান্ডের নামে নির্যাতন বা সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার বন্ধ করা হবে।
*সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।
*যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান থাকবে।
৩) ক্ষমতার ভারসাম্য
*নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান তৈরি ও নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দেয়া।
*সংসদে উচ্চকক্ষ তৈরি করা হবে।
*আলোচনার মাধ্যমে ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হবে।
*সংসদে বিরোধী দলকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
*দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না।
*সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হবে
*প্রাদেশিক সরকার পরীক্ষার জন্য সর্বদলীয় জাতীয় কমিশন গঠন করা হবে।
৪) ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ
*উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব থাকবে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের হাতে।
*জেলা পরিষদের সদস্যরা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন।
*পৌর এলাকায় সিটি গভর্নমেন্ট চালু হবে।
*প্রশাসনিক কাঠামো প্রাদেশিক পর্যায়ে বিন্যস্ত করা হবে।
৫) দুর্নীতি দমন ও সুশাসন
*বর্তমান সরকারের আমলের দুর্নীতির তদন্ত করে জড়িতদের বিচার করা হবে।
*ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে।
*দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হবে।
*দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারে সরকারের অনুমতির বিধান বাতিল হবে।
*বর্তমান কোন উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করা হবে না।
*ব্যাংকিং ও শেয়ারবাজারে লুটপাটে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
*ভিনদেশীয় সাংস্কৃতি আগ্রাসন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৬) কর্মসংস্থান ও শিক্ষা
*পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী ছাড়া সরকারি চাকরিতে প্রবেশের কোন বয়সসীমা থাকবে না।
*বেকার ভাতা চালু করা হবে।
*তিন বছরের মধ্যে সরকারি সব শূন্য পদ পূরণ করা হবে।
*ওয়ার্ক পারমিটবিহীন সকল বিদেশী নাগরিকের চাকুরি বন্ধ করা হবে।
*মোবাইলে ইন্টারনেট খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে।
*পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হবে।
*বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ব্যয় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে।
*মাদ্রাসা শিক্ষায় কারিগরি শিক্ষা দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থান করা হবে।
৭) স্বাস্থ্য
*হাসপাতালগুলোর শয্যা বৃদ্ধি করা হবে এবং সকল জেলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হবে।
*ওষুধের অপপ্রয়োগ রোধে চিকিৎসকদের সকল ব্যবস্থাপত্র নিরীক্ষা এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীর মৃত্যুর খতিয়ান পরীক্ষা করে জানানো হবে।
*স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে ন্যায়পাল থাকবেন।
*ঔষধ ও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার খরচ কমানো হবে।
*প্রবাসী কর্মীদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে দেশে আনা এবং বাড়িতে পৌছে দেওয়া হবে।
*সকল নাগরিককে স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হবে।
৮) জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন
*দুই বছরের মধ্যে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি ১২ হাজার টাকা করা হবে।
*সকল খাতের শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে।
*দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং চালু করা হবে।
*স্বাস্থ্যবীমার মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রিমিয়াম দিয়ে সবাই স্বাস্থ্য সুবিধা পাবেন।
*কর্মজীবী নারীদের জন্য পর্যাপ্ত ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হবে।
*মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ও সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।
*ভেজাল ও রাসায়নিকমুক্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা হবে।
৯) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি
*প্রথম বছর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে না।
*একশো মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর মূল্য আগামী পাঁচ বছরে বাড়বে না।
*ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ও সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বাণিজ্যিক দামের পরিবর্তে আবাসিক হারে হবে।
১০) প্রবাসী কল্যাণ
*প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে।
*ইউরোপ, জাপানসহ নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা হবে।
*মধ্যপ্রাচ্যে মারা যাওয়া প্রবাসী কর্মীদের মৃতদেহ সরকারি খরচে দেশে এসে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
১১) নিরাপদ সড়ক ও পরিবহন
*নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার হবে।
*ট্রাফিক জ্যাম নিরসনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
*পরিবহন নীতি গ্রহণ করা হবে।
*গণপরিবহন ও রেলখাতকে গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রসারণ করা হবে।
১২) প্রতিরক্ষা ও পুলিশ
*অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিরক্ষাবাহিনীর জন্য যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনা হবে।
*পুলিশ বাহিনীর ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি করা হবে।
*জাতিসংঘ বাহিনীতে পুলিশ সদস্যদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
১৩) পররাষ্ট্র নীতি
*সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়।
*সমতার ভিত্তিতে ভারতের সাথে সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করা হবে।
*চীনের `ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড` এর লাভজনক প্রকল্পে বাংলাদেশ যুক্ত হবে।
*তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ দ্বিপাক্ষিক সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করা হবে।
১৪) জলবায়ু পরির্ব্তন
*বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধ করতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
*জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি ঠেকাতে আরো বেশি আন্তর্জাতিক সাহায্য নিশ্চিত ও সেটার ব্যবহার করা হবে।