ইসরাত জাহান এর স্বাস্থ্য পরামর্শ
সুস্বাস্থ্যের জন্য ভোজ্যতেল কতটুকু প্রয়োজন বা ক্ষতিকর?
প্রকাশিত : ০৬:১০ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৬:২১ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ রবিবার
ইসরাত জাহান
ইসরাত জাহান। ডায়াটেশিয়ান ও নিউট্রিশিয়ানিস্ট। রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কাজ করছেন সচেতনা সৃষ্টির জন্য। নিয়মিত লিখছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনে। আজ লিখেছেন ভোজ্য তেলের প্রয়োজনীয়তা ও ক্ষতিকর দিক নিয়ে।
সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন পরিমাণ মতো তেল: শরীরের জন্য প্রয়োজন খাদ্য। খাদ্যকে সুস্বাদু করতে ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেটাতে আমরা খাবারের সাথে ভোজ্য তেল ব্যবহার করে থাকি। ভোজ্য তেল কতোটুকু ব্যবহার করব, কে কতোটুকু তেল খাবারের সাথে গ্রহণ করতে পারবে তা নিয়ে রয়েছে নিয়ম কানুন। তেল একেবারে না খাওয়া যেমন ঠিক নয় তেমনি অতিরিক্ত তেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আসুন, আজ আমরা ভোজ্য তেলের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলাপ করি।
কে কতোটুকু তেল খাবে তা নির্ভর করবে তার বয়স ও পরিশ্রমের উপর। আমরা ( পুষ্টিবিদ) বলে থাকি মানুষ তার প্রয়োজনীয় ক্যালরির ২৫% নিবে তেল থেকে। তবে সেটা সাধারন স্বাস্থ্যের জন্য। যারা অতিরিক্ত ওজনে ভুগছে তাদের ক্ষেত্রে ডায়েটেশিয়ানদের পরামর্শ অনুযায়ী তেলের পরিমাণ কমবে। আবার যাদের ওজন অতিরিক্ত কম তাদের ক্ষেত্রে বাড়বে। আবার এই ক্যালরি তেল, প্রোটিন বা কার্বোহাইড্রেট থেকে নিতে পারেন। যদি আপনি মোটা হতে চান। সেই তেল রান্না তেল হতে পারে আবার খাবার থেকেও অনেক তেল আসে।
ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয় সয়াবিন তেল। এখন অনেকে রাইস বার্ণ অয়েল ব্যবহার করছে। আবার অনেকে অলিভ অয়েলও ব্যবহার করে। যদিও বা স্বাদ ও ঘ্রাণ আলাদা হওয়ার কারণে অলিভ অয়েল ব্যবহারের পরিমাণটা খুব কম। একজন পূর্ণ বয়ষ্ক সুস্থ ব্যক্তির জন্য দৈনিক পাঁচ থেকে ছয় চামচ তেল গ্রহণ যথেষ্ট। শিশুদের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় বলি একচামচ তেল বেশী দেওয়ার জন্য। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে যদি ওজন বেশী থাকে তাহলে চার থেকে পাঁচ চা চামচ তেল খেতে পারেন। গর্ভবতী নারীরা স্বাভাবিক পরিমাণেই তেল গ্রহণ করবে তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন সয়াবিন তেল হয়। অনেকে ডালডা, ঘি এসব ব্যবহার করে থাকে। ওগুলো কম খাওয়া ভাল। হার্ট বা লিভারের রোগ আছে এমন ক্ষেত্রে এমন রোগী অবশ্যই কম তেলের খাবার খেতে হবে। সেটা স্বাভাবিক রান্না করা খাবার বা তেল জাতীয় খাবার যাই হোক না কেন।
অনেকে হুট করে তেল খাওয়া বন্ধ করে দেন। বা তেল ছাড়া তরকারী খাওয়া শুরু করেন। এতে কিন্তু শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। কারণ, আমাদের শরীরের প্রযোজনীয় ভিটামিনগুলো দু`ভাগে বিভক্ত। একটা হচ্ছে পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিন আরেকটা হচ্ছে চর্বিতে দ্রবীভূত ভিটামিন। চর্বিতে দ্রবীভূত ভিটামিন- `এ`, `ডি`, `ই`, `কে` শোষণ হয় তেল দিয়ে। যদি আপনি মিষ্টিকুমড়া তেল ছাড়া ভর্তা বা রান্না করেন তাহলে তা শরীরে শোষণ হতে যতোক্ষণ সময় লাগবে তেল দিয়ে রান্না বা ভর্তা করলে তার চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি শোষণ হবে।
♦ পোড়া তেল বা ডুবো তেলে হতে পারে ক্যান্সার: ডুবো তেলে রান্না করা যে কোন তেলই আমরা একবার ব্যবহার করব। তেলটা যখন আমরা গরম করব বা রান্নার নিয়ম জানাটা কিন্তু খুব জরুরী। ডুবো তেলে রান্না করলে প্রথমে লো হিটে বা অল্প আঁচে গরম করতে হয়। এটা স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু প্রথমেই যদি বেশী তাপ দেওয়া হয় তাহলে এটা ট্রান্সফ্যাট হয়ে যায়। এই ট্রান্সফ্যাট আমাদের শরীরে ক্যান্সারের সেল তৈরী করে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের পাকস্থলীর ক্যান্সার, লিভারের ক্যান্সার, গলব্লাডারের যে সমস্যাগুলো হচ্ছে তার জন্য দায়ী পোড়া তেলের খাবার, অতিরিক্ত ডুবো তেলে রান্না করা খাবার বা একই তেলে বারবার রান্না করা খাবার।
বাজারে যেসব দোকানে বাণিজ্যিক ভাবে খাবার বিক্রী করে খেয়াল করলে দেখবেন সেগুলোর পোড়াতেলগুলো সব কালো রং। তার মানে এটা বারবার ব্যবহার করা হয়েছে। একটা জিনিশের রং পরিবর্তন হওয়া মানে ক্যামিকেল কম্পোজিশনটা পরিবর্তন হয়ে যায়। ক্যামিকেল কম্পোজিশন পরিবর্তন হওয়া মানে তার পুষ্টিগুণ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। অবশ্যই তা আমাদের স্বাস্থ্যসম্মত না।
পোড়া তেল বা একই তেলে বারবার রান্না হয়েছে এমন তেলে রান্না করা খাবার যখন খাবেন তখন দেখবেন, আপনি যখন খাচ্ছেন তখন সেটি গলা থেকে জ্বলতে জ্বলতে গলা থেকে নামবে। যখন সেটা পাকস্থলীতে যাবে তখন দেখবেন পেটে গ্যাস হবে। আমরা অনেক সময় সিঙ্গারা, সমুচা, চানাচুর খাওয়ার পর বলি, আমার বুক জ্বলছে, আমার গ্যাস হচ্ছে, ঢেঁকুর উঠছে, ঢেঁকুর উঠছে, শরীরটা ঝিমঝিম করছে, অনেক সময় মাথা ঘুরায় - এ ধরনের সমস্যাগুলো হতে পারে। অনেক সময় মাথা ঘুরায়। পেট ব্যাথা হতে পারে, ডায়রিয়া বা আমাশয় হতে পারে। এটা হচ্ছে তাৎক্ষণিক সমস্যা। এগুলো হচ্ছে তাৎক্ষণিক সমস্যা।
কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাগুলো ভয়াবহ। ভেজাল তেল, পোড়া তেল, একই তেলে বারবার রান্না করা খাবার খেলে আমাদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে। খারাপ কোলস্টেরল আমাদের শরীরে তৈরী হচ্ছে। যেটা হার্টে প্রেসার তৈরী করছে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশী। আমাদের যে হার্ট ফেইলিউর হয়, লিভার কোলস্টেরল বাড়তে থাকে।
তাই রান্না করার সময় পরিমাণ মতো তেল দিতে হবে যাতে। আমরা পুষ্টিবিদরা সবসময় ডুবো তেলে ভাজা পোড়া খাবার কম খাওয়ার জন্য বলি । তেল কম খেলে শরীরে ট্রান্সফ্যাট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
আ আ// আরকে//