সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরি (রহ.) ফাউন্ডেশন
আয়েশা হোমিও দাতব্য চিকিৎসালয় এক অনন্য উদ্যোগ
কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক
প্রকাশিত : ০৬:২০ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৬:২২ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার
সমাজের সুবিধা-বঞ্চিত মানুষের কল্যাণের লক্ষে গড়ে উঠেছে আয়েশা হোমিও দাতব্য চিকিৎসালয়। সৈয়দ রশিদ আহমদ জৌনপুরি (রহ.) ফাউন্ডেশনের অধীনে এটি একটি সেবামূলক প্রকল্প।
জনসেবা ও মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে দিয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সেবা দিয়ে আয়েশা হোমিও দাতব্য চিকিৎসালয় এক অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যা মানবসেবাই আশার বাণী জাগাচ্ছে।
রাজধানীর মিরপুরের পূর্ব মণিপুরে অবস্থিত ‘বায়তুর রহিম জামে মসজিদের পাশেই প্রতিষ্ঠিত আয়েশা হোমিও দাতব্য চিকিৎসালয়। যা সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরি (রহ.) ফাউন্ডেশনের অধীনে পরিচালিত হয়। দাতব্য এই চিকিৎসালয় ফাউন্ডেশনের একটি সেবামূলক প্রকল্প।
আয়েশা হোমিও দাতব্য চিকিৎসালয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ডা. হাবিবুর রহমান। মনিপুরের মানুষের কাছে তিনি একজন ত্রাণকর্তার মতো। সবাই এক নামে তাকে চেনে। ২০০৪ সাল থেকে তিনি মসজিদের এক কোনে এই দাতব্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বাবা হুজুরের মসজিদ সংলগ্ন এই প্রতিষ্ঠান পূর্ব মনিপুরের মানুষের কাছে অত্যন্ত পরিচিত ও সমীহের জায়গা।
ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এটি একটি সেবামূলক প্রকল্প। আমি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রোগী দেখি। প্রতিদিন গড়ে ৫০-৫৫ জন রোগী আমার কাছে আসে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু ও নারীর সংখ্যা বেশি। যেহেতু এটি দাতব্য চিকিৎসালয় তাই এখানে বিনামূল্যে রোগীরা সেবা গ্রহণ করে থাকে।
তিনি আরও বলেন, একজন রোগী সুস্থ হওয়া পর্যন্ত এখানে সেবা দেওয়া হয়। এছাড়া ওষুধও সরবরাহ করা হয়।’
এলাকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, বাবা হুজুরের এই প্রতিষ্ঠান থেকে এলাকার লোকজন সেবা নিয়ে থাকে। তাছাড়া ডা. হাবিবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য সকলের কাছে তিনি একজন গ্রহণযোগ্য মানুষ হিসেবে পরিচিত হয়েছেন।
এছাড়াও সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য এই ফাউন্ডেশনের অধীনে সৈয়দ রশিদ আহমদ মিশন বিদ্যালয়ে পাঠ দান করা হচ্ছে।
এছাড়া মসজিদের অতি সন্নিকটে রয়েছে এই ফাউন্ডেশনের আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৈয়দ রশিদ আহমদ মিশন বিদ্যালয়। এটি ১০৫৫, পূর্ব মনিপুর, মিরপুর-২ এ অবস্থিত। বিদ্যালয়টি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে। এই সময় চলছে এর ভর্তি কার্যক্রম। বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিশুদের পাঠদান করা হয়। আগামী বছর থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান উন্নীত করা হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই স্কুলে বর্তমানে পঞ্চাশের অধিক সুবিধা বঞ্চিত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তাদেরকে বিনামূল্যে বইখাতা দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতিদিন টিফিন এবং সপ্তাহে রয়েছে উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও ধর্মীয় দিবসগুলো জাঁকজমকভাবে পালন করা হয়। এবং প্রতিবছর এসব শিশুদের শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেগম কুলসুম রশীদ এবং শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে স্কুলটির ছাত্রসংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। রাজধানীর মিরপুরের মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠানটি অনন্য উদাহরণ হয়ে ওঠেছে।
উল্লেখ্য, সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরি (রহ.) এদেশের একজন প্রখ্যাত সুফি সাধক। তিনি ১৮৮৯ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর ভারতের জৌনপুরি অর্ন্তগত মোল্লাটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন।
উনবিংশ শতাব্দীতে বাঙলা এবং আসামে ইসলামের প্রচার প্রসারে কাজ করেছেন। তিনি ১৯৬৩ সালের ১ এপ্রিল বাংলাদেশে আসেন। রাজধানীর মিরপুর-১২ সেকশনে কিছুদিন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করেন। একজন ভালো হোমিও চিকিৎসক হিসেবে তার পরিচিতি বাড়তে থাকে।
১৯৬২ সালে রাজধানীর পূর্ব মনিপুরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘বায়তুর রহিম জামে মসজিদ। এটি মূলত বাবা হুজুরের মসজিদ নামে পরিচিত। এই সুফি সাধক জিবৎদশায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় মোট ৯৭টি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। যা এদেশে ইসলামের প্রচার প্রসারে একটি অনন্য অবদান রেখেছেন।
প্রসঙ্গত, তিনি বিশ বছর বয়সে সৈয়দ শাহনাজ বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর ১৯৬৪ সালে মিরপুরে তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করেন। হাওড়া জেলার ঘোষ পুরের অধিবাসী হজরত রাবেয়া খাতুনকে নিয়ে মিরপুরে বসবাস শুরু করেন।
২০০১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বরেণ্য এই সুফি সাধক ১১২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে এই মসজিদের পাশেই সমাহিত করা হয়।
এদেশে ইসলামের প্রচার প্রসারে এই সুফি সাধক অবিসংবাদিত ভূমিকা পালন করে গেছেন। তার কর্ম গুণে মধ্য দিয়ে সমাজে অনন্য অসাধারণ পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এই ফাউন্ডেশনের মধ্য দিয়ে সমাজকে আরও বহুদিন আলোর পথ দেখাবে এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।