মানসিক অবসাদ-অ্যাংজাইটি দূর করবে ১০ খাবার
প্রকাশিত : ০৮:৩৩ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১০:৩৮ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার
অ্যাংজাইটি, স্টেস এবং মানসিক অবসাদের কারণে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। গবেষণা বলছে, মাত্রাতিরিক্ত ওজন এবং স্মোকিং-এর কারণে হার্টের যতটা ক্ষতি হয়, তার থেকেও বেশি মাত্রায় ক্ষতি হয় অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদের কারণে। তাই দীর্ঘ সময় ধরে কেউ চিন্তায় থাকলে বা ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হলে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে প্রায় ৬৪ শতাংশ, প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় ব্লাড প্রেসারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা এবং আর্থ্রাইটিসের মতো রোগ ঘাড়ে চেপে বলার সম্ভাবনা বাড়ে প্রায় ৮৭ শতাংশ। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি এবং ডিপ্রেশন শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকারক!
এমন পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকার উপায় কী? সত্যিই যদি ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটিকে জোড়া গোল দিতে চান, তাহলে এই প্রবন্ধে আলোচিত খাবারগুলোকে রোজের ডায়েটে জায়গায় করে দিতে হবে। তাহলেই দেখবেন কেল্লা ফতে! আসলে এই খাবারগুলোর শরীরে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে মানসিক অবসাদ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে অ্যাংজাইটির প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, যে যে খাবারগুলো এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলো হল-
অ্যাভোকাডো
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, এই ফলটিতে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৯, বি৬ এবং বি৫ শরীরে প্রবেশ করার পর মস্তিষ্ক যাতে যে কোনও পরিস্থিতিতে চাঙ্গা থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখতে শুরু করে। ফলে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গিয়ে ডিপ্রেশনে বা অ্যাংজাইটিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। তাই হার্টকে যদি দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে হয়, তাহলে প্রতিদিন একটা করে অ্যাভোকাডো খেতে ভুলবেন না যেন!
জাম
ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি এবং স্ট্রেসকে দূরে রাখতে বাস্তবিকই এই ফলটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে জামের ভিতরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, শরীরে প্রবেশ করা মাত্র টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে একদিকে যেমন ক্যানসারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে, তেমনি মন-মেজাজও এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না।
বাদাম
এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন বি২, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্ক। এই সবকটি উপাদান সেরাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বার করে দেয়। ফলে কোনওভাবেই স্ট্রেস ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
টমেটো
এতে উপস্থিত লাইকোপেন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর মন খারাপকে সমূলে উৎখাত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে মানসিক অবসাদের মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগে না। এই কারণেই তো যাদের খুব স্ট্রেসফুল কাজ করতে হয়, তাদের প্রতিদিন একটা করে কাঁচা টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
মাছ
প্রতিটি বাঙালি বাড়িতেই এখনও প্রতিদিন মাছ রান্নার রেওয়াজ রয়েছে, যে কারণে খেয়াল করে দেখবেন ব্রেন পাওয়ারের দিক থেকে বাঙালি অনেকের থেকেই বেশ এগিয়ে রয়েছে। আসলে মাছে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি, বি৬ এবং বি১২ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, এই উপাদানগুলো মানসিক অবসাদের মতো রোগের আক্রমণ থেকে বাচ্চাদের বাঁচাতেও নানাভাবে সাহায্য় করে থাকে।
দই
স্কুল থেকে ফেরার পর প্রতিদিন যদি আপনার বাচ্চাকে এক বাটি করে দই খাওয়াতে পারেন, তাহলে তাদের শরীরে সরোটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যা স্ট্রেস কমানোর পাশাপাশি ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার ব্রেন পাওয়ার বেড়ে গেলে অ্যাংজাইটির মতো সমস্যা তো কমেই, সেই সঙ্গে পড়াশোনাতেও উন্নতি ঘটে।
নারকেল
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নাককেলে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি ফ্যাট শরীরে প্রবেশ করার পর মস্তিষ্কের ভিতরে ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ব্রেন পাওয়ার এতটা বাড়িয়ে দেয় যে স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদের প্রকোপ তো কমেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তিরও উন্নতি ঘটে।
সাইট্রাস ফল
পাতি লেবু, কমলা লেবু এবং মৌসাম্বি লেবুর মত সাইট্রাস ফলের শরীরে মজুত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রকৃতিক সুগার, যা স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ তো কমায়ই, সেই সঙ্গে মানসিক অবসাদকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাই তো বাচ্চাদের প্রতিদিন এক বাটি করে ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
পালং শাক
বাঙালির প্রিয় এই শাকটি নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে শরীরে আয়রন, এবং ফলিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। যার প্রভাবে মস্তিষ্কের ভিতরে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমে। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে সার্বিকভাবে শারীরিক ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। তাই এবার থেকে যখনই মনটা বেশ খারাপ খারাপ লাগবে পালং শাক খাওয়া শুরু করবেন। দেখবেন উপকার মিলবে।
রসুন
এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ভিতরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, ছোট থেকেই নিয়মিত রসুন খাওয়ার অভ্যাস করলে হার্টের কর্মক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি ডায়াবেটিসের মোতে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
সূত্র: বোল্ডস্কাই
একে//