ঢাকা, শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৭ ১৪৩১

নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮

প্রবৃদ্ধির জন্য অবকাঠামো

প্রকাশিত : ০৪:৪৭ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:০১ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

দেশের উন্নয়নের মুল শর্ত হলো সুপরিকল্পিত, টেকসই অবকাঠামো এবং নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানী সরবরাহ সুবিধা। গত দশ বছরে আওয়ামী লীগ বিদ্যুৎ, জ্বালানী, যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন সাধন করেছে তা নজিরবিহীন। আগামী ৫ বছরেও এই অগ্রগতি চলমান রাখার পরিকল্পনা আছে উন্নয়নমুখী দলটির।  

প্রতিটি মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা, ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন, এলিভেটেড হাইওয়ে, আন্তজেলা এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন বিমানবন্দর, নতুন নৌ পথ তৈরি ইত্যাদি পরিকল্পনা আবাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই পূরণ হবে উন্নত দেশের লক্ষ্য।

অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্প (মেগা প্রজেক্ট)  

দেশের উন্নয়নে নতুন গতি সঞ্চারের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রকল্পের প্রয়োজন অপরিহার্য। মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ফলে অবকাঠামো খাতে বাঁধা দূর হবে এবং সার্বিক অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হবে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মেগা প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা দ্রুত গণপরিবহনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ, এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট, মহেষখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মাসেতু রেল সংযোগ এবং চট্রগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৯.৫ কিমি রেললাইন স্থাপন। আওয়ামী লীগ এ সকল মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ ও ভূমিকা পালনে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধিত হবে এবং সেই সাথে মানুষের কর্মসংস্থান, আয় ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে বহুগুণ।

লক্ষ্য ও পরিকল্পনা

  • অবকাঠামো রূপান্তরের লক্ষ্যে বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরিকল্পনা অব্যাহত রাখা হবে।
  • পদ্মা রেল সেতু সংযোগ এবং কক্সবাজার-দোহাজারী-রামু-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্বিত করা হবে।    
  • মাতারবাড়ী কয়লা বন্দর, ভোলা গ্যাস পাইপ লাইন ও উপকূলীয় অঞ্চলে একটি পেট্রোকেমিক্যালস কারখানা স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।   

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুৎ ও জ্বালানী যে কোনো দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রার একটি অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। বঙ্গবন্ধু সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ সমুন্নত রেখে রাষ্ট্রের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশীয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন। পঁচাত্তরের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শক্তি ক্ষমতাসীন হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী নিরাপত্তা অবহেলার শিকার হয়। ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যুগান্তকারী  পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। পরবর্তীতে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় লুটপাটের ফলে আবারও মুখ থুবড়ে পড়ে। দেশ এখন আবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে।

লক্ষ্য ও পরিকল্পনা

  • ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং প্রায় ২৩,০০০ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে সকলের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে।
  • ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
  • মহেশখালী ও মাতারবাড়ী অঞ্চলে ১টি এবং পায়রাতে ১টি করে ‘এনার্জি হাব’ গড়ে তোলা হবে।
  • ২০২৩ সালের মধ্যে মোট ৫,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমপরিমাণ এলএনজি সরবরাহ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
  • বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের অধিকতর কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
  • জ্বালানি সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে ভারতের শিলিগুড়ি টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ পাইপলাইন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ৩০৫ কিলোমিটার পাইপলাইন, গভীর সমুদ্র থেকে চট্টগ্রামে তেল আনার লক্ষ্যে পাইপ লাইনসহ ইতোপূর্বে গৃহীত অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
  • ইস্টার্ণ রিফাইনারীর (ERL) জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে রিফাইনারী প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
  • দেশের কয়লা সম্পদের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।

যোগাযোগ

উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে, উন্নত দক্ষ ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা। যোগাযোগ খাতে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে, তা এখন সর্বমহলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত। গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার খাত হিসাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, সুগম ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে সড়ক, রেল ও নৌপথের সম্প্রসারণ ও সংস্কার বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে ৪৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক দল সড়কপথ, রেলপথ, বিমানপথ ও জলপথ যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মসূচি (রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১) সামনে রেখে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। ইতোমধ্যে দেশবাসী এর সুফল পেতে শুরু করেছে। 

সড়কপথ, রেলপথ ও বিমানপথ

লক্ষ্য ও পরিকল্পনা

  • মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ১৬,৩৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৯.২৪ কিমি বিস্তৃত ঢাকা পূর্ব-পশ্চিম এলিভেটেড হাইওয়ে নির্মাণ করা হবে।  
  • ঢাকাকে ঘিরে একটি এলিভেটেড রিংরোড এবং ইস্টার্ন বাইপাস নির্মাণেরও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
  • ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে এবং এক্সপ্রেস রেলওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
  • মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে যাতে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যায় সেজন্য বুলেট ট্রেন (দ্রুতগামী ট্রেন) চালু করা হবে। ক্রমে বুলেট ট্রেন সিলেট, রাজশাহী,দিনাজপুর, পটুয়াখালি, খুলনা এবং কলকাতা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে।
  • রাজশাহী, সিলেট,চট্টগ্রাম, বরিশাল বিমানবন্দরকে উন্নত করা হবে। ঢাকা শাহজালাল বিমান বন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ, নতুন রাডার স্থাপন ও জেট ফুয়েল সরবরাহ করার জন্য পাইপলাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
  • কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠা করা হবে সুপিরিয়র বিমান অবতরণে সক্ষম দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দর। বাগেরহাটে খান জাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
  • ইতোমধ্যে ‘নিরাপদ সড়ক আইন-২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইনটি প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্ঘটনা ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আগামীতে সময়ের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ধারা পরিবর্তন-পরিবর্ধনের মাধ্যমে এটাকে আরো যুগোপযোগী ও কার্যকর করা হবে।
  • বেসরকারি বিমান পরিবহনকে আরো উৎসাহিত করা হবে।  
  • স্বল্প খরচে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
  • রাজধানী ঢাকার জনপরিবহন সমস্যার সমাধান ও যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে পাতাল রেল, মেট্রোরেল অথবা সার্কুলার রেলপথ এবং রাজধানীতে নাব্য ও প্রশস্থ নৌপথ নির্মাণ করা হবে।
  • সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে উন্নত করে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যাতে আমাদের সীমান্তবর্তী ভারতের ৭টি প্রদেশ এবং নেপাল ও ভুটান এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে।
  • ট্রান্স এসিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে, বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল এবং বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক জোটের যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত হওয়ার ফলে অঅন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।

নৌপথ ও বন্দর

লক্ষ্য ও পরিকল্পনা

ব্যাপক খননের পরিকল্পনা হিসাবে আগামী মেয়াদে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হবে। আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরের সাথে আভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোর সংযোগ স্থাপন করার মাধ্যম আমদানি-রপ্তানি সুগম করা হবে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাণিজ্যকে সহজতর করার লক্ষ্যে ভারতের সাথে নৌপথ বাণিজ্য আরো বাড়িয়ে একে নেপাল-ভুটান পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে ।

২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বে-টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে বন্দরের সক্ষমতা ৪ গুণ বৃদ্ধি পাবে।

ঢাকার চারপাশের ৪টি নদী-খালগুলোকে দূষণ ও দখলমুক্ত করে খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নদী তীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

এসি