ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৯ ১৪৩১

বাংলাদেশে এখন দূরবীন দিয়েও দুর্ভিক্ষ দেখা যায় না: আতিউর রহমান

প্রকাশিত : ০৯:১১ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১১:২৫ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ বুধবার

বাংলাদেশে এখন দূরবীন দিয়েও দুর্ভিক্ষ দেখা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।      

বুধবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) উদ্যোগে ‘তারুণ্যের শক্তি ও বাংলাদেশের সমৃদ্ধি শীর্ষক’ এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিনি এ মন্তব্য বলেন।  

আলোচক হিসেবে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক কর্মী ও রাজনীতিবিদ তারানা হালিম, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ হোসেন,ক্রিকেটার মেহেদি হাসান মিরাজ প্রমুখ।    

সারাদেশ থেকে আসা প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ও তরুণ উদ্যোক্তা এই মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়।

অনুষ্ঠানে আলোচক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিয়ার রহমান বলেন, বাংলাদেশ অর্থনীতিতে একটা সোনালি সময় পার করছে। এদেশে এক সময় দারিদ্র ছিল অভিশাপ। সেদেশে এখন দূরবীন দিয়েও দুর্ভিক্ষ দেখা যায় না। প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়েও তিনগুণ বেশি হারে আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। যা ২০২১ সালে ভারতকে অতিক্রম করবে। এদেশে এখন ভিক্ষুকরা্ও দু’বেলা ব্যাংকিং করে। এটা সম্ভবপর হয়েছে সরকারের ইনক্লোসিভ ভাবনার কারণে।     

সরকারের এত উন্নয়নের পরেও আগামি নির্বাচনে তরুণরা ভূমিকা রাখবে কি না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দেশে উন্নয়ন ও অগ্রগতির এক চলন্ত ট্রেনে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্বের চেতনায় বিশ্বাসী তরুনরা কখনও উন্নয়নের ট্রেনের চেইন টানবে না। বরং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও সামনে এগিয়ে যাবে।  

সরকারের দুই মেয়াদে নারীদের নিয়ে সরকার ব্যাপক কাজ করেছে উল্লেখ করে তারানা হালিম বলেন, ‘বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে এখন রোল মডেল। নারীরা এখন ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে সব ধরণের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সবখানে নারীর অবাধ অংশগ্রহণ বেড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার দিন বদলের সনদ দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর সারাদেশে সমাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি করেছে। যার ফলে নারীরা এখন স্বাধীনভাবে এগিয়ে আসতে পারছে।  

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ২৪ লক্ষ নারী গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পুলিশ সেক্টরে ১৪ জন নারী নিয়োগ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে পুলিশ সেক্টরে এখন ১১ হাজারের বেশি নারী এই খাতে কাজ করছে।  

এছাড়াও তৃণমূলে নারীর অংশগ্রহণ দিন দিন আশা জাগাচ্ছে। এবারে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে নারীদের জন্য উন্নত কর্ম-পরিবেশ, নারী উদ্যেক্তা সৃষ্টি, নারীর জন্যে ইনসেনটিভসহ আরও বৃহৎ উন্নয়নের সাথে নারীকে যুক্ত করা।  

শেখ হাসিনা বলেছিলেন আমার বর্তমান তরুন প্রজন্মকে উৎসর্গ করলাম। 

ইশতেহার আর প্রলোভন নয়, যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেটা আওয়ামী লীগ সম্পন্ন করবে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করবে বলেছে সেটা বাস্তবায়ন করেছে। 

শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ড. জাফর ইকবাল বলেন, অস্ট্রেলিয়ার জনগণ দুই কোটির একটু বেশি। অথচ এদেশে পাঁচ কোটির বেশি বাচ্চা লেখাপড়া করে। বছরের প্রথমদিন ৪০ কোটি নতুন বই দেয়া হচ্ছে।  

ইশতেহারে গবেষণার আর্থিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

পাকিস্তানে মেয়েদের লেখাপড়া করার পরিবেশ নেই। ওখানে লেখাপড়া করার অপরাধে মাথায় গুলি করেছে। পরে তাকে নোবেল দেয়া হয়েছে। 

দেশে শিক্ষিত বেকার বাড়ছে উল্লেখ করে এক শিক্ষার্থী সরকারের ভাবনা কি জানতে চাইলে ড. জাফর ইকবাল তরুণদের উদ্দেশে বলেন, পড়াশোনা শেষ করে তরুণদের বসে থাকাটা বোকামি। শুধুমাত্র চাকরির জন্যে বসে না থেকে নিজে নিজেই কাজ শুরু করা উচিত। তাহলে নিজে নিজেই উদ্যোক্তা হতে পারবে। বর্তমান সরকার তরুণদের কল্যাণে অনেকগুলি পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।     

বিজিএমই এর সাবেক সভাপতি শিল্প উদ্যেক্তা আতিকুর রহমান বলেন, ‘এক সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ছিলো কঠিন। প্রযুক্তি সুবিধার অভাবে আমরা অনেক কষ্ট করেছি। অথচ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছুই হাতের নাগালে ধরা দিয়েছে। শেখ হাসিনার ভিশনারী চিন্তার কারণে বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। এজন্য আগামি নির্বাচনেও শেখ হাসিনা উপর আস্থা রাখতে হবে।’  

প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বলেন, ‘আওয়ামীলীগের ইশতেহারে অটিজম যুক্ত করার মাধ্যমে প্রমাণ আমরা একটি মানবিক দেশের নাগরিক। সমাজে পিছিয়ে পরা অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য খুব কম সংখ্যক দেশ কাজ করে, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভাল কাজ করছে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনার মধ্য দিয়ে তরুণদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে।    

যাদের পরিবারে অটিজম শিশু রয়েছে তাদের সাথে নিয়ে সরকার কাজ করছে এটা একটা মানবিক পরিকল্পনার অংশ। এছাড়া সরকার শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।’

আগামি নির্বাচনে তরুণদের অংশগ্রহণ জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেকোনো জাতির কর্মযজ্ঞের সাথে যদি তরুণরা যুক্ত থাকে তবে সেই দেশ এগিয়ে যাবে। আমি বলবো আপনারা নিজেদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে  যুক্ত করুন ভাল কাজের সাথে। তাহলেই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।’    

এসি