ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১

বল-টেম্পারিং

বছরের সবচয়ে আলোচিত ঘটনা

প্রকাশিত : ০৩:০০ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

চলতি বছর ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিলো, অস্ট্রেলিয়া দলের বল টেম্পারিং। গত মার্চে কেপ টাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বল টেম্পারিং করে অস্ট্রেলিয়া। যার দায়ে দলটির তৎকালীন অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ, সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ও তরুণ খেলোয়াড় ক্যামেরন বেনক্রফট বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। বল টেম্পারিং পর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো নতুন দু’টি দেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়া। একদাশ ও দ্বাদশ দেশ হিসেবে যথাক্রমে আফগানিস্তান-আয়ারল্যান্ডকে টেস্ট মর্যাদা দেয় খেলাটির বিশ্ব নির্বাহী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)।
চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে গত মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায় অস্ট্রেলিয়া। ডারবান টেস্টে ১১৮ রানে বড় ব্যবধানে হেরে সিরিজ শুরু করে অসিরা। পোর্ট এলিজাবেথে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটিও ৬ উইকেটে হারতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে। তাই ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে কেপ টাউনে সিরিজে তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামে স্মিথ-ওয়ার্নাররা।
সিরিজের লড়াইয়ে টিকে থাকা ম্যাচটি কলঙ্কিত করে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের তৃতীয় দিন বল টে করেন টেম্পারিং বা বলের আকার পবির্তন স্মিথ-ওয়ার্নার ও বেনক্রফট। ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট ফুটে উঠে ক্রিকেট দুনিয়ায়। পরবর্তীতে দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে বল বিকৃতির ঘটনা অকপটে স্বীকার করেন স্মিথ। এটি চাউর হবার কিছুদিনের মধ্যে বড় ধরনের অ্যাকশন নেয় সিএ।
স্মিথ-ওয়ার্নারকে এক বছরের জন্য, বেনক্রফটকে নয় মাসের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিষিদ্ধ করে সিএ। ফলে গেল এপ্রিল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধই আছেন স্মিথ-ওয়ার্নার-বেনক্রফট।
তবে প্রায় নয় মাস পর বল বিকৃতির আসল ঘটনা তুলে ধরেন স্মিথ। বের হয় তাদের কুকীর্তির সকল ঘটনা। কিছুদিন আগে, বল বিকৃতি নিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন স্মিথ, ‘আমি পরিকল্পনাটা দেখেছি এবং বুঝেছিলামও যে কি হতে যাচ্ছে। কারন পরিকল্পনাটি হোটেলে আমার রুমেই হয়েছে। আমার ভুল ছিলো, যে আমি তা দেখেও তাদের থামাইনি। তখন যদি আমি তাদের এসব করা থেকে বিরত রাখতাম, তাহলে হয়তো ঘটনাটি অন্যরকমও হতে পারতো। চাইলেই আমি বল-টেম্পারিং পরিকল্পনা থামাতে পারতাম, কিন্তু করিনি। এটাই আমার ব্যর্থতা ছিলো।’
স্মিথের এমন মন্তব্য শুনে মুখ বন্ধ করে রাখতে পারেননি তরুন খেলোয়াড় বেনক্রফট। বল বিকৃতির মূল হোতার নাম ফাঁস করে দেন তিনি। বেনক্রফট বলেন, ‘ওয়ার্নার আমাকে ম্যাচের ঐ পরিস্থিতে বল টেম্পারিং করতে বলেছিলেন। এ ব্যাপারে আমার কোন ধারনা ছিলো না। আমি ভালোভাবে জানতামও না। আমি শুধু চেয়েছি দলে নিজেকে মানিয়ে নিতে, পরিস্থিতির মূল্য বুঝতে। সত্যি বলতে এটাই ছিল আমার মূল ভাবনা।’
বল বিকৃতির কারনে শুধুমাত্র স্মিথ-ওয়ার্নার বা বেনক্রফটই শাস্তি পাননি, বলির পাঠাঁ হতে হয়েছে কোচ ড্যারেন লেহম্যানকে। কোচের পদ থেকে নিজেই অব্যাহতি নেন লেহম্যান। তার জায়গায় দলের দায়িত্ব পান সাবেক ওপেনার জাস্টিন ল্যাঙ্গার। আর অধিনায়কের দায়িত্ব পান টিম পেইন।
ভারতের বিপক্ষে দেশের মাটিতে এখন টেস্ট সিরিজ নিয়ে ব্যস্ত পেইনের দল। দু’টি টেস্ট শেষে সিরিজে ১-১ সমতা বিরাজ করছে। এর মাঝেই পুরনো স্মৃতি নিয়ে কথা বলেন পেইন, ‘আমরা সত্যিই কঠোর যুদ্ধ করেছি এবং কখনোই হাল হছাড়িনি।’
অস্ট্রেলিয়ার জন্য বছরটি খারাপ হলেও ভারত এবং তাদের অধিনায়ক বিরাট কোহলির জন্য ২০১৮ ছিলো দুর্দান্ত। বিশেষভাবে কোহলির। এ বছর এখন পর্যন্ত কোহলিই একমাত্র ব্যাটসম্যান, যে-কিনা ১ হাজার রানের কোটা পূর্ণ করেছেন। এ বছর ১১টি সেঞ্চুরিও হাকিয়েছেন কোহলি। ৫টি টেস্টে, ৬টি ওয়ানডেতে।
টেস্ট ফরম্যাটে ইংল্যান্ডেরও জন্য বছরটি ভালো ছিলো। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অ্যাশেজ সিরিজ ৪-০ ব্যবধানে হারে তারা। এরপর চলতি বছর নিউজিল্যান্ডের কাছে হারলেও দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় জো রুটের দল। এছাড়া দীর্ঘ ১৭ বছর পর শ্রীলংকার মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়ে ইংল্যান্ড।
বছরের শেষ সময়ে এসে দুর্দান্তভাবে দলের চাহিদা মিটিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। আবু ধাবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে ১৩৯ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলে নিউজিল্যান্ডকে নাটকীয়ভাবে ১২৩ রানের জয়ের স্বাদ দেন উইলিয়ামসন। যার মাধ্যমে ৪৯ বছর পর বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ নেয় কিউইরা।
চলতি বছর তারকাদের মধ্যে অবসর নিয়েছেন ইংল্যান্ডের অ্যালিষ্টার কুক, দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স ও শ্রীলংকার রঙ্গনা হেরাথ। ১৬১ টেস্টে ১২,৪৭২ রান করেছেন কুক। ওভালে নিজের শেষ টেস্টের শেষ ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে ১৪৭ রান করেন কুক।
তিন ফরম্যাটেই বেশ সফল ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে ১১৪ টেস্টে ৮৭৬৫ রান, ২২৮ ওয়ানডেতে ৯৫৭৭ রান ও ৭৮টি টি-২০তে ১৬৭২ রান করেন ডি ভিলিয়ার্স।
১৯৯৯ সালে টেস্ট দিয়ে অভিষেক ঘটে হেরাথের। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। চলতি বছরের নভেম্বরে টেস্ট দিয়েই ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন হেরাথ। গল দিয়ে শুরু করে সেখানেই শেষ করেন ৯৩ টেস্টে ৪৩৩ উইকেট নেন হেরাথ।
টি-২০তে না পারলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বছরের শেষভাগে টেস্ট-ওয়ানডে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। তারপরও তাদের বেশ লড়াই করতে হয়েছে। চলতি বছর ৮ টেস্টে ৩টি জয়, ৪টি হার ও ১টি ড্র করে টাইগাররা। ৪টি টেস্ট সিরিজের মধ্যে ১টিতে জয়, ২টিতে হার ও ১টি ড্র করে। তবে ওয়ানডেতে বেশ চাঙ্গা ছিলো বাংলাদেশ। মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে ২০ ম্যাচে ১৩টি জয় ও ৭টি হারের স্বাদ নেয় টাইগাররা। তবে টি-২০ তে বেশ এলোমেলো ছিলো বাংলাদেশ। ১৬ ম্যাচে মাত্র ৫টিতে জিতে। বাকী ১১ ম্যাচে হারের লজ্জা পায় টাইগাররা।
এ বছরই টেস্ট আঙ্গিনায় পথ চলা শুরু হয় আফগানিস্তান-আয়ারল্যান্ডের। গত মে মাসে ডাবলিনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হয় আইরিশদের। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরও ৫ উইকেটে ম্যাচ হারে আয়ারল্যান্ড। এ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের পক্ষে সেঞ্চুরি করেন কেভিন ও’ব্রায়ান।
পরের মাসে টেস্ট আঙ্গিনায় অভিষেক ঘটে আফগানিস্তানের। বেঙ্গালুরুতে ভারতের কাছে ইনিংস ও ২৬২ রানে ম্যাচ হারে আফগানরা। আয়ারল্যান্ডের মত লড়াইয়ের ছিটেফটাও দেখাতে পারেনি আফগানিস্তান।
চলতি বছর টেস্ট ফরম্যাট নিয়ে একটি গবেষণায় করেছে দ্য টাইমস পত্রিকা। তারা জানায়, ১৯৫৯ সালের পর এ বছর প্রতি উইকেটে সবচেয়ে কম রান উঠেছে।
এ বছর ম্যাচ ফিক্সিং সর্ম্পকিত ঘটনাও ছিলো। ম্যাচ ফিক্সিং দুর্নীতিরও বিষয়ে আইসিসিকে সহযোগিতা না করায় শাস্তি পেতে হয় শ্রীলংকার সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক সনাথ জয়সুরিয়াকে।
নিজ দেশের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগের বছরে আইসিসি র‌্যাংকিং-এ শীর্ষে থেকে বছর শেষ করতে পারছে ইংল্যান্ড। এ বছর পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ জিতে ইংলিশরা। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো সফরকারী হিসেবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড-শ্রীলংকার মাটিতে সিরিজ জয়। তাই বিশ্বকাপের এমন অর্জন ইংলিশদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ে অনুপ্রাণিত করবে।
অস্ট্রেলিয়া পুরুষ দলের জন্য বছরটি কলঙ্কিত হলেও, নারী দলের সাফল্য ছিলো চোখে পড়ার মত। আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে অসি নারী দল। ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারায় অস্ট্রেলিয়া।
সূত্র : বাসস
এসএ/