ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

ভারতের তৃতীয় ঋণের অর্থ ব্যয় হবে আগের প্রকল্পে

প্রকাশিত : ০৮:৩৩ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

ভারতের তৃতীয় ঋণের অর্থ খরচ করা হবে আগের প্রকল্পে। সঠিক সময়ে বাস্তাবায়ন না হওয়ায় এসব  প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের প্রথম লাইন অব ক্রেডিট বা এলওসির আওতায় থাকা দুটি প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে।  ২০১০ সালে রেলপথ নির্মাণের এ দুটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো জুন মাসে। তবে নানা জটিলতার কারণে এখনও শেষ হয়নি।

এমন অবস্থায় এই দুই প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আরও সময় লাগবে। এরকাজ শেষ করতে  অতিরিক্ত ২০ কোটি ডলার জোগান দিতে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের তৃতীয় এলওসির বরাদ্দ কাটছাঁট হচ্ছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় এলওসির তালিকাভুক্ত কিছু প্রকল্পেও অতিরিক্ত ২০ কোটি ডলার প্রয়োজন হচ্ছে। এই অর্থও দেওয়া হবে তৃতীয় এলওসি থেকে। এতে তৃতীয় এলওসির বরাদ্দ ৪৫০ কোটি ডলার থেকে ৪১০ কোটি ডলারে নেমে যাচ্ছে। গত ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ১০০ কোটি ডলারের প্রথম ঋণচুক্তি সই হয় ২০১০ সালের ৭ আগস্ট। পরে এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ থেকে ২০ কোটি ডলার অনুদানের ঘোষণা দেয় ভারত। প্রথম এলওসিতে অতিরিক্ত অর্থ হিসেবে আরও ছয় কোটি ২০ ডলার ঋণ দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় এলওসির ২০০ কোটি ডলারের জন্য ঋণ চুক্তি সই হয় ২০১৬ সালের ৮ মার্চ। সর্বশেষ ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের তৃতীয় এলওসি হয়।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম এলওসির অর্থায়নের ১৫ প্রকল্পের মধ্যে ১২টির কাজ শেষ হয়ছে। তিনটি প্রকল্পের কাজ এখনও চলছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম এলওসির অর্থ ছাড় হয়েছে ৪৪ কোটি ৮ লাখ ডলার, যা মোট ঋণের ৫১ শতাংশ।

শেষ হয়নি এমন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ। এ প্রকল্পে ভারতের ঋণের পরিমাণ ৩০ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আরও আট কোটি ডলার প্রয়োজন হবে। এ ঋণ দেওয়া হবে তৃতীয় এলওসি থেকে। অন্যদিকে প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্ব হওয়ার কারণে প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় বাড়ছে ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পে। এই প্রকল্পে ভারতীয় ঋণের পরিমাণ ১২ কোটি ৩১ লাখ ডলার। নতুন করে আরও ১২ কোটি ডলার প্রয়োজন হবে এ প্রকল্পে।

বাস্তবায়ন অগগতি বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন নির্মাণের জন্য ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টান্যাশনালের সঙ্গে চুক্তির পরও প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি প্রকল্প এলাকায় নিয়ে আসতে দেরি করে। এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তাগাদাও দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বিষয়টি ভারতীয় হাইকমিশনেও অভিযোগ আকারে উত্থাপন করা হয়।

এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কম খরচে অনভিজ্ঞ একাধিক সাব-ঠিকাদার নিয়োগ দেয়। এ কারণে নির্মাণ কাজ বিঘ্নিত হয়েছে। বাস্তবায়ন কাজের গতিহীনতায় কয়েক দফার মেয়াদ বাড়িয়ে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার রেলপথের নির্মাণ কাজ গত জুনে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্প দুই বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

২০১০ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির অগ্রগতি জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আফজাল হোসেন  জানান, এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে প্রকল্পের বিলম্বের কারণ সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। এর আগে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অতিরিক্ত প্রকৌশলী আহমেদ হোসেন মাসুম সমকালকে বলেন, যন্ত্রপাতি সাইটে আসতে কিছুটা বাড়তি সময় লেগেছে। এ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ সম্যস্যার কারণে প্রকল্প শুরু করা যায়নি।

জটিলতার কারণে ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণের ভৌত কাজও এখনও শুরু হয়নি। প্রকল্পের দরপত্র দলিলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতি এখনও পাওয়া যায়নি। এ জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিও বিলম্বিত হচ্ছে।