নির্বাচনী ইশতেহারে বিপুল সম্ভাবনা
মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন
প্রকাশিত : ০৯:৩২ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
নির্বাচনের মৌসুম। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ, বেশকিছু সহিংসতা ও আশা-নিরাশার দোলাচলে এগিয়ে চলেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জমজমাট প্রচারণা। বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমের শীর্ষ খবরে মনে হয় একতরফা প্রচারে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। তবে স্থানীয় সংবাদদাতার কণ্ঠে গাজীপুর, শেরপুর, ঢাকা, নোয়াখালীসহ বিনা বাধায় সব পক্ষের ভোটযুদ্ধ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানা যায়। আদালতে সাজাসহ বেশকিছু বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে বিরোধী দলের কয়েকটি প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। নির্বাচনী অফিস ভাংচুরে কেউ কারো চেয়ে কম নয়। হতের হিসাবে আওয়ামী ঘরানার দুজন আর আহতের দিকে বিএনপির বেশি। এশিয়ার অন্যান্য দেশ ফিলিপাইন, শ্রীলংকা, ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশে এবারের নির্বাচনে সহিংসতা এখনো কম। আর ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর প্রচণ্ড বর্বরতা ও নৃশংস সংখ্যালঘু হত্যাযজ্ঞ, ২০০৬ সালে নির্বাচন-পূর্ব নীলনকশার অত্যাচার-নির্মমতা এবং ২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিহতের বালখিল্য প্রচেষ্টায় আগুন ও গ্রেনেড, হত্যা এবং দোকানপাটসহ আর্থিক স্থাপনা পুড়িয়ে দেয়ার হঠকারিতার তুলনায় এবারের সংসদ নির্বাচনের সহিংসতা এখনো অকিঞ্চিত্কর।
নির্বাচনী ইশতেহার: গত কয়েক দিনে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার ঘটা করেই প্রকাশিত হয়েছে। সব কয়টিতেই বেশকিছু ইতিবাচকতা থাকলেও আওয়ামী লীগের ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ ভোটার মহলের নজর কেড়েছে। এর কয়েকটি মুখ্য বক্তব্য বর্তমান নিবন্ধের শিরোনামে আনা হয়েছে। তাছাড়া গ্রামবাংলায় নগরজীবনের সুবিধা বিস্তার, মেগা প্রকল্পে বিশেষ নজরদারি, নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা, সড়ক চলাচলে নিরাপত্তা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রাম এবং সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা বলা হয়েছে।
অর্জন সাফল্যের কিছু দৃষ্টান্ত: সরকারপ্রধান জনবন্ধু শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের দেশে বিদেশে নন্দিত কয়েকটি বিষয় হচ্ছে: ক. বহুল প্রশংসিত জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও সহিংসতা দমন করা। খ. অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ও সামাজিক অগ্রগতিতে দৃষ্টান্তমূলক সফলতায় কৃতিত্বের সঙ্গে জাতিসংঘের তিনটি শর্ত একযোগে পূরণ করে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার গৌরব অর্জন করা। গ. দারিদ্র্যের হার ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস করা। ঘ. শিশুমৃত্যুর হার হাজারে ২৯-এ হ্রাস করা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মেয়ে ও ছেলে শিক্ষার্থীর ভর্তি জনমিতির অনুপাতে উন্নীত করা, গড় আয়ু ৭২ বছরে উন্নীত করা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩-এ সীমাবদ্ধ করা, শিক্ষার হার ৬০ শতাংশের উপরে নেয়া, মাথাপিছু আয় ১৯৭২ সালের ৮৭২ টাকার বিপরীতে বর্তমান ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৫০ টাকায় উন্নীত করা, ৬৫ শতাংশ মানুষের স্বাস্থ্যকর পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা, ৭০ শতাংশ লোকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া, ১৯৭২ সালের উচ্চশিক্ষায় ভর্তি ৩০ হাজারের তুলনায় ২০১৭ সালে ৩৩ লাখে উন্নীত করা। ঙ. ২০০৮ সালে শুরু করা ডিজিটাল বাংলাদেশের অধীনে প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামবাংলার মানুষের ঘরে কৃষি সম্প্রসারণ ও গবাদি পশু হাঁস-মুরগির চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেয়া। চ. নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ। ছ. ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ৮৭ লাখ লোক অথবা জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষকে সামাজিক সুরক্ষাবলয়ে নিয়ে আসা। জ. অপ্রত্যাশিত রোহিঙ্গা সমস্যাটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান করে বিশ্ববাসীর সপ্রশংস নজর আকৃষ্ট করে ভবিষ্যতে স্থায়ী সমাধানে আশার সঞ্চার করা। ঝ. ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল অন দ্য ল অব দ্য সি, ইটলসের অসামান্য জয়লাভে বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ২৫৭ বর্গকিলোমিটার সাগর এলাকা, ২০০ নটিক্যাল মাইলে সার্বভৌম কর্তৃত্ব এবং মহীসোপানে মালিকানা লাভ করে ব্লু অর্থনীতির এক সুদূরপ্রসারী দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
কারা কী বলছেন: ১৯৭২ সালে নরওয়ের হিউস্ট ফাল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের জ্যাক আর এন্ডারসন কটাক্ষ করে বলেছিলেন, নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে টিকে থাকলেও একটি সার্বভৌম অর্থনীতি না-ও থাকতে পারে। সম্প্রতি তারাও বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।
নোবেল বিজয়ী প্রফেসর অমর্ত্য সেন প্রায়ই বলে থাকেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য, আর এর সামাজিক রূপান্তর চিত্তাকর্ষক। দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে। তিনি মনে করেন, মূলত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সেই ১৯৭২ থেকে সরকারি খাতের বিনিয়োগের ফলেই সেটি সম্ভব হয়েছে। অনুরূপভাবে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিতে মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকের যৌথ প্রণেতা পাকিস্তানের ড. মাহবুবুল হক প্রথম জীবনে কট্টর বাঙালিবিদ্বেষী ছিলেন, জীবনসায়াহ্নে মৃত্যুর আগে বিশেষ করে বাংলাদেশের মানব উন্নয়নের জোরদার প্রশংসা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেছে, দেশের অন্তত সোয়া কোটি লোকের গড় বার্ষিক আয় মার্কিন ডলারে ৪ হাজার আর বর্তমান বিনিময় হারে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
দি ইকোনমিস্ট ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সংখ্যায় উল্লেখ করে, (ক) মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ ৬৮ ডলারে এগিয়ে আছে পাকিস্তানের তুলনায় (খ) ১৯৭২ সালের সামষ্টিক আয়ে শিল্প খাতের অংশ ছিল ৭ শতাংশ, আর ২০১৬ সালে তা উন্নীত হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশে এবং (গ) বাংলাদেশ বছরে যে পরিমাণ তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যার রফতানি করে, তা ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ রফতানির চেয়ে বেশি।
২০১৮ সালের ৪ জুন করাচির ডন পত্রিকা বাংলাদেশের উন্নয়ন রহস্য নিয়ে উল্লেখ করেছে, ১৯৭২ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান এ দেশের একটি রুগ্ণ অ্যাপেন্ডিক্স ছিল, সেটিই এখন বাংলাদেশ হয়ে পাকিস্তানকে টপকে গেছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, সুষ্ঠু পরিকল্পনা হলে দেশটির অর্থনীতি সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতির সমকক্ষ হতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী মহোদয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন নীতি কৌশল প্রণয়নকারীদের তিরস্কারের সুরে বলেন, ‘হামে এক এয়সা দশ সালা মনসুবা চাহিয়ে কেউকে হাম আয়েন্দা দশ সালমে বাংলাদেশ কা বরাবর হো সাকে।’
অতিসম্প্রতি জাপানের প্রভাবশালী সাময়িকী এশিয়ান রিভিউর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক গাওয়ার রবিনসন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনবন্ধু শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বলেছেন, ‘উইথ রিমার্কেবলি লিটল ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটেনশন বাংলাদেশ হ্যাজ অলসো বিকাম ওয়ান অব দ্য ওয়ার্ল্ডস ইকোনমিক সাকসেস স্টোরিজ।’ দ্যা হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংক তাদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় অনুরূপভাবে বলেছে, কোনো মহলের উচ্চবাচ্য ছাড়াই বাংলাদেশ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সর্বশ্রেষ্ঠ আসন অর্জন করেছে। ফলে ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালে দেশটি পৃথিবীর ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতি হয়ে উঠবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি তাদের একটি গবেষণার ফল প্রকাশ করে বলেছে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশ পৃথিবীর ২৮তম বৃহৎ অর্থনীতি হয়ে উঠবে।
নারীর উত্থান: এদিকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কয়েক বছর ধরেই লিঙ্গসমতায় বাংলাদেশের চমত্কার অর্জনের স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। বর্তমান বছরে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১৪৯ দেশের মধ্যে ৪৮ সূচকে এশিয়ার দ্বিতীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের লিঙ্গসমতা সূচকের চারটি ক্ষেত্র যথা— প্রাথমিক ভর্তিতে বছরে ছেলে-মেয়ের সমতা, মাধ্যমিক ভর্তিতে ছেলে-মেয়ের সমতা, সরকারপ্রধান হিসেবে নারীর সময়কাল এবং জন্মকালে ছেলে ও মেয়ে নবজাতকের সংখ্যাগত সমতায় বাংলাদেশ পৃথিবীতে সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করছে। স্মর্তব্য যে, ২০০৬ সালে লিঙ্গ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১। বর্তমানে এ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। নিঃসন্দেহে গত ১০ বছরে হাসিনা সরকাররের নিরলস, উদ্ভাবনী ও সাহসী পদক্ষেপের ফলেই লিঙ্গবৈষম্যের ক্ষেত্রে এ রকম উজ্জ্বল ভাবমূর্তি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
আগামী পাঁচ বছরে করণীয়: দেশের সবচেয়ে পুরনো ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ও এর প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গৌরবে উজ্জ্বল স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অকুতোভয় ও চৌকস নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। সেই ঐতিহ্য অনুসরণ করে কল্যাণরাষ্ট্র বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি তথা জনকল্যাণে সুউচ্চ অর্জনে সদা তত্পর রয়েছে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ ও ২০১৪ সালে নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা প্রায় শতভাগ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই ১১তম সংসদ নির্বাচনে মনোগ্রাহী ও যুগোপযোগী ইশতেহারের মাধ্যমে আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখার সুযোগ পাবে, সে আশায় মোটাদাগে কয়েকটি করণীয় উল্লেখ করা জরুরি। এর অনেকগুলোই আওয়ামী লীগের সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রার ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
১. বছরে ২৫ লাখেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান করা হলে নতুন করে ২২ লাখ শ্রমজীবী শ্রমবাজারে প্রবেশ করা ছাড়াও চলমান বেকারদের তিন লক্ষাধিক চাকরি পাবেন। মূলত শিল্পায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বহুমুখিতা সৃষ্টি করেই কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার, দারিদ্র্য নিরসন, বৈষম্য হ্রাস ও জনকল্যাণ নিশ্চিত হবে। বৃহৎ শিল্প হিসেবে বস্ত্র উৎপাদনে কাঁচা তুলা আমদানি, সুতা কাটা, বস্ত্র বয়ন, স্থানীয় বাজারে বিক্রি ছাড়াও তৈরি পোশাকে ব্যবহার ও তৈরি পোশাক রফতানি করে বর্তমানে একটির জায়গায় অন্তত তিনটি রুলস অব অরিজিন মানা হবে। তাছাড়া পৃথিবীর সপ্তম বস্ত্র আমদানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আমদানি খরচে বছরে ৫০০ কোটি ডলারের সাশ্রয় হবে। তৈরি পোশাক খাত ৪২ দিনের ওয়েটিং পিরিয়ড থেকে পরিত্রাণ পাবে এবং সময়োচিত রফতানি জোগান দিতে বেশি পারঙ্গম হবে। ১০০টি ইকোনমিক জোন, বিশেষ করে ১০টি অগ্রাধিকার জোনে বেসরকারি খাতে কয়েকটি বৃহদাকার, আধুনিক ও দক্ষ বস্ত্র মিল স্থাপনে এবং যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যাপক শুল্কছাড়, ২২০ ভোল্টের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্প্রাপ্তি, এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট সার্ভিস প্রদান, এমনকি সাশ্রয়ী সুদের হারের ব্যবস্থা করে শিল্পায়নে অগ্র ও পশ্চাৎ সংযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। এতে তৈরি পোশাক রফতানিতে শক্তি যোগ হবে। বিনিময় হার নীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করে, প্রতিযোগী দেশগুলোর সমানে সমানে লড়াই করে তৈরি পোশাক খাতে গণচীনের ছেড়ে দেয়া বাজারের বৃহত্তর অংশ দখলে নেয়া সম্ভব হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ ৪ হাজার কোটি ডলারের অতিরিক্ত রফতানি আয়ের পথ সুগম হবে।
অতিক্ষুদ্র (মাইক্রো), ক্ষুদ্র (স্মল) ও মধ্যম (মিডিয়াম) শিল্প স্থাপনে সুস্পষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে পাঁচ বছরে অন্তত ২৫ লাখ নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে বিশেষ করে দেশজ প্রাথমিক উৎপাদন যথা দুধ, ফলমূল, সবজি, মাংস, মাছ, ভুট্টা, হ্যান্ডিক্রাফটস ইত্যাদি ব্যবহার করে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও রফতানি বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। রিফ্রিজারেটরসহ কয়েকটি বৈদ্যুতিক দ্রব্যের স্থানীয় উত্পদানের সাফল্যের পথ ধরে আসবাব নির্মাণ সামগ্রী, খেলাধুলার সরঞ্জাম, সিরামিকস, জাহাজ নির্মাণ, সাইকেল, সিএনজি, ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, কৃষি যন্ত্রপাতি, চামড়া শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিশেষ করে ভর্তুকি মূল্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, নগণ্য সুদে ঋণ সুবিধা দিয়ে কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য নিরসন, বৈষম্য হ্রাস, দেশজ সম্পদ সৃজনে বহুমাত্রিকতা এবং ব্যাপকভাবে রফতানি আয় বাড়ানো সম্ভব হবে। দক্ষ জনশক্তির তীব্র অভাব দূর করতে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার প্রয়োজন। দেশে-বিদেশে যে দক্ষতা ও পারদর্শিতার চাহিদা রয়েছে, সে অনুসারে চাকরিদাতা ও শিক্ষা প্রশিক্ষণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক ছাতার নিচে এনে কারিকুলাম, হাতে-কলমে শিক্ষা, কো-অপারেটিভ শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিপুল সরকারি বিনিয়োগ করা সমীচীন হবে। বিএসটিআইকে শীর্ষ বিশ্বমানে নিয়ে গেলে পণ্য ও জনসেবাসহ সব প্রকার সেবা রফতানিতে চলমান অসুবিধা দূর করা এবং খরচ বাঁচানো সম্ভব হবে। বাদারুবাদ-ফুলছড়ির হাটে একটি সেতু নির্মিত হলে উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। ভবিষ্যতে পরিবারে মা-বাবা উভয়ের চাকরি করার প্রবণতা বিপুলভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে তৈরি খাদ্যের চাহিদা বাড়বে। ঘটবে চাকরি সৃষ্টি। দেশে অত্যন্ত উন্নত মানের আলু রয়েছে। সেক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে কর্নফ্লেক্স, চিপস ও ফ্রাই তৈরিতে গবেষণা, বিনিয়োগ ও নীতি সুবিধা দিয়ে উদ্যোক্তা আকর্ষণ করতে হবে।
২. শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ঘাটতি ও রক্ষণাবেক্ষণে অনীহা দূরীকরণে লাগসই শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও প্রযুুক্তিকরণের চলমান প্রচেষ্টাকে বহুগুণে শক্তিশালী করতে হবে। বিশেষ করে ১৫-৩০ বছর বয়সী যুবক ও যুব নারীদের সর্বোত্কৃষ্ট এবং ক্ষেত্রবিশেষে বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানে প্রাইভেট-পাবলিক প্রকল্পায়নে উপযুক্ত পরিমাণ বিনিয়োগ করে জনমিতিক লভ্যাংশ ঘরে তোলা সম্ভব। প্রতি বছর শিক্ষা খাতে সামষ্টিক দেশজ উৎপাদনের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে ২০২৩ সালে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বর্তমানের ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে অতি প্রয়োজনীয় ৫ শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন। অনুরূপভাবে ২০২৩ সালে স্বাস্থ্য খাতেও জিডিপির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন। এসব উদ্যোগে ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিশেষ করে রফতানি খাতে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষা খাতে লিংক চেইনসহ অন্যান্য প্রক্রিয়ায় নকল বন্ধ করা এবং সব পরীক্ষায় এমসিকিউ বাদ দেয়া জরুরি। প্রজাতন্ত্রের প্রতিযোগিতামূলক চাকরি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ৮ শতাংশ আর শারীরিকভাবে হুমকিতে পড়াদের জন্য শূন্য ২ শতাংশ সংরক্ষণ করে সম্পূর্ণ মেধা ভিত্তিতে এবং এমসিকিউ বাদ দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চৌকস ব্যবস্থাপনার ভিত গড়তে হবে। শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দেশের শত্রু ছাড়া বাকি সবাইকে সমান সুযোগ দিয়ে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও গতিময় প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করা হলে আর্থসামাজিক অগ্রগতি আরো জোর কদমে অগ্রসর হবে।
৩. ওষুধ ও চামড়া শিল্পে বাংলাদেশ বিশ্বস্বীকৃতভাবেই অগ্রসর হচ্ছে। সেজন্য ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো এবং নীতি কৌশলে সহায়তা দিয়ে এ দুটো খাতে সম্পদ সৃষ্টি করা সম্ভব। ইটলস বিজয়-পরবর্তী সময়ে গ্যাস অনুসন্ধানে ১২ নম্বর ব্লকে যে পঞ্চম স্ট্রাকচার পাওয়া গেছে, তাতে বেশ বড় পরিমাণ গ্যাসপ্রাপ্তির আশা করা যাচ্ছে। সফলতা এলে এবং এরই মধ্যে আমদানি করা এলপিজি দিয়ে শিল্পায়নে গ্যাস সরবরাহে ফ্রন্টলোডিং করা সম্ভব হতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস ব্যবহার ও গৃহস্থালি কাজে পাইপে গ্যাস সরবরাহ ক্রমবর্ধমান হারে কমাতে হবে এবং শিল্পায়নে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে হবে। আণবিক শক্তিতে বিদ্যুৎ পেতে আরো বেশ দেরি আছে, তাই রংপুর-দিনাজপুরের ১০০ বর্গকিলোমিটার মাটির নিচে যে উন্নত মানের কয়লা সম্ভার জমে আছে, তা উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে। অত্যাধুনিক অথচ পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১০ থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াট সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় দামে জমি ক্রয়, ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণ সন্তোষে স্থানান্তর, কোম্পানিতে তাদের মালিকানা শেয়ার এবং কর্মযজ্ঞে তাদের সন্তান-সন্ততিদের চাকরিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে একটি মেগা উদ্যোগ নেয়ার সুযোগ ২০১৯ সালের শুরুতেই নিতে হবে। ২০২২ সালে ছয় হাজার মেগাওয়াট কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী পায়রা প্রকল্পে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা দিশারি হতে পারে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, পায়রাসহ সব গভীর সমুদ্রবন্দরের নাব্যতা বর্তমানের ৯-১০ ফুট থেকে ১৭-১৮ ফুট গভীরে নিয়ে যাওয়ার কাজে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে।
৪. সম্পদ ম্যাপিং, জাতীয় অগ্রাধিকার প্রণয়নে সহায়তা এবং গৃহীত অগ্রাধিকার সংরক্ষণ, সর্বোত্তম ফল লাভ করা সম্পদ নিয়োজন ফর্মুলা নিরূপণ ও প্রোগ্রাম তথা পরস্পর সম্পর্কিত প্রকল্প লহরী চিহ্নিতকরণ, প্রণয়নে সহায়তা এবং মনিটরিংয়ে সতর্ক দৃষ্টি রেখে বাস্তবায়ন নিশ্চিতে সক্ষম একটি পরিকল্পনা কমিশন সৃষ্টি করা যেতে পারে; যা সরাসরি সরকারপ্রধানের তত্ত্বাবধানে কাজ করবে। ব্লু ইকোনমির সৃষ্টি, বিকাশ ও বাস্তবায়ন এখানেই শুরু হতে পারে।
৫. পর্যটন ও বেসামরিক পরিবহন খাতটি হতে পারে আগামী পাঁচ বছরে সবচেয়ে লাভজনক শিল্প। প্রতিযোগী অনেক সংস্থা ঢাকায় ফ্লাইট যাতায়াতে বিশাল অংকের লাভ গুনে অথচ বিমান কেন জানি ধুঁকছে। অপ্রচলিত সমাধানে দক্ষতার সন্ধান ও প্রয়োজনবোধে কিছু কালের জন্য ইউনিয়ন বন্ধ করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের সৎ পরামর্শে বেসামরিক পরিবহনে দক্ষ জনশক্তি ও ব্যবস্থাপনা বৃদ্ধিতে দীর্ঘসূত্রতা হয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। আশু পদক্ষেপে বিমানবন্দর ও ফ্লাইট ব্যবস্থাপনায় ক্ষিপ্রতা আনা যেতে পারে। প্রয়োজনবোধে ২০০০ সালের মতো স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্ট অংশীদার খোঁজা যেতে পারে। পর্যটন খাত একটি ঐশ্বর্য, স্বর্ণের খনি হতে পারে। কক্সবাজারের ৮০ মাইল দীর্ঘ চমত্কার বিচে বেসরকারি খাতে অনেক কটেজ এবং বিত্তবান পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী গলফ কোর্স ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা লাভজনক হবে। তবে প্রথমেই কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ, বিশ্রাম, অফিস ও অন্যান্য অবকাঠামো বাড়ানো প্রয়োজন। অন্তত আঞ্চলিক সরাসরি ফ্লাইট, রেল ও সড়কপথে গতি বাড়ানোর চিন্তা করা যেতে পারে। অনুরূপভাবে বড় বড় চা বাগানে গলফ কোর্স নির্মাণ করা যায়। সিলেটে এরই মধ্যে সৃষ্ট বিশ্বমানের রিসোর্ট ছাড়াও টাংগুয়ার হাওড়ে চিত্তাকর্ষক পর্যটন অবকাঠামো ও যাতায়াত সুবিধা সৃষ্টি করা জরুরি। তাছাড়া সিলেটে দার্জিলিংয়ের মতো উন্নত মানের চা উৎপাদন এবং বেত শিল্পের আকর্ষণীয় পণ্যাদি পর্যটক আকর্ষণে সাহায্য করবে।
৬. ঢাকা মহানগরে ভবিষ্যতে একটি সিটি গভর্নমেন্ট হতে হবে, সে কথা স্মরণে রেখে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন ও ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিআইপিডিএ) ক্ষমতায়ন এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সেবা খাতে সিদ্ধান্ত দিতে পারা কর্তৃপক্ষের সমন্বয় অংশগ্রহণ জরুরি। মহানগরীর মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভার ট্রাফিক সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে জনবন্ধু শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত দোতলা আকাশ সড়ক, রিং রোড, জলপথ ও পাতাল রেলেই চূড়ান্ত সমাধান নিহিত। তবে ইশতেহারের স্পিরিট অনুসারে গ্রামগঞ্জে নগরজীবনের সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নগরে চলে আসার প্রবণতা কমানো যেতে পারে। গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী ও কেরানীগঞ্জে উপশহর নির্মাণ জরুরি। রেলপথ টঙ্গীতে থামিয়ে দেয়া এবং রাজধানীর খেলার মাঠ পূর্বাচলে সরিয়ে নেয়া যেতে পারে। ব্যাংকগুলোর হেড অফিস ডিভিশন হেড কোয়ার্টারে, রেলের সদর ঈশ্বরদীতে, নেভির মুখ্য অফিস চট্টগ্রামে এবং চায়ের প্রধান অফিস শ্রীমঙ্গলে সরিয়ে দেয়া যেতে পারে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পর্যায়ক্রমিক ভিন্ন ভিন্ন অফিস সময়, বাম লেনের যানকে বায়ে মোড় দেয়া বাধ্যতামূলক করা, রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় টোল মেশিন বসানো, সেবা খাতের বিল পরিশোধ চেকে, পোস্টাল সেবা বা ইন্টারনেট ছাড়া পরিশোধ করতে না পারা এবং সমবায়ী ও ফিসক্যাল ব্যবস্থাধীনে পুরনো গণযানকে বড় বড় আধুনিক দোতলা বাস দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
৭. প্রবীণের বয়সসীমা ৬৫ নির্ধারণ করে প্রবীণ নিবাস নির্মাণে সিএসআর ও অন্যান্য প্রণোদনা প্রদান, প্রবীণ নাগরিক নিবন্ধন কার্ড, সিকি ভাড়ায় প্রবীণদের সরকারি ও বেসরকারি যানবাহনে যাতায়াত সুবিধা, সিকি খরচে সব প্রকার হাসপাতালে প্রবীণদের চিকিৎসা প্রদানে অগ্রাধিকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৮. নারীর ক্ষমতায়নে ২০২৪ সালে ১২তম সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে ২০ শতাংশ মনোনয়ন নারীদের বাধ্যতামূলক করার বিধান খুবই সহায়ক হবে। সম্ভবত নারী কোটায় সংসদ সদস্য কোটা উঠিয়ে দেয়ার বিষয়টিতে নারী নেতৃত্ব অগ্রাধিকার দিতে পারেন। জিডিপি গণনায় গৃহস্থালি কর্মকাণ্ডে নারীদের অবদান সিংহভাগ অন্তর্ভুক্ত করার দুরূহ কাজটিতে মনোযোগ দেয়ার সুপারিশ করা হলো। এক্ষেত্রে ভারত ও মেক্সিকোতে যে কাজ হচ্ছে, তা বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।
৯. বিশ্বব্যাপী সিনথেটিক অনীহার সুযোগে সোনালি আঁশ উঠি উঠি করছে। একটি কৃত্রিম আঁশ সংযুক্ত করে আকর্ষণীয় পাটতন্তুর চাহিদা বাড়ছে বিশ্বব্যাপী। তবে দেশে পলিথিন ব্যবহারে যে আইনি নিষেধাজ্ঞা আছে তা কঠোরভাবে শতভাগ বাস্তবায়ন করা জরুরি। আর মোটরযানের অভ্যন্তরীণ সজ্জায় যে বস্ত্রজাতীয় জিনিস ব্যবহার হয়, সেখানে পাটতন্তুর প্রবেশে গবেষণা, বিনিয়োগ ও শুভেচ্ছা খরচের ব্যবস্থা নিলে অর্থসম্পদ ছাড়াও কর্মসংস্থানের বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে পাট শিল্প ক্ষেত্রে। পাটশলাকার আসবাব ও পাটের আঁশের নিত্যব্যবহার্য পণ্যসম্ভারও বিপুল সম্ভাবনাময়।
১০. অত্যন্ত দক্ষ কূটনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রী জনবন্ধু শেখ হাসিনা যেভাবে বিশ্বপরাশক্তির গণচীন এবং আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তি ভারত, রাশিয়া ও জাপানের পরস্পরবিরোধী স্বার্থের সমন্বয় সমঝোতা এনে বাংলাদেশের ভৌগোলিক কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগাচ্ছেন, তা অব্যাহত রাখতে না পারলে দেশ খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মুক্তিযুদ্ধে অমূল্য সহায়তা, সমর্থন ও অভয়দানকারী বৃহৎ ও মহৎ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গিবাদ দমন, ট্রানজিট করিডোর প্রদান এবং বন্দর সুবিধা ব্যবহারের সঙ্গে প্রতিবেশী নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে করিডোর ট্রানজিট, অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন ইত্যাকার বিষয়ে সহযোগিতার বিস্তার ও গভীরায়ন করা যেতে পারে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে গণচীনের দৃঢ় সমর্থন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ নিতে হবে পুরোপুরি। জাপান ও রাশিয়ার পাশে থাকাও খুবই মূল্যবান।
১১. আর্থিক, ব্যাংকিং ও বীমা খাতে বেশকিছু সমস্যা ও অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। তবে এতে কোনো সংকট নেই। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এখনো সমস্যা সমাধান আয়ত্তের মধ্যেই রয়েছে। ন্যূনতম রক্তক্ষরণে এক্ষেত্রে সব সমস্যা সমাধান করে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক, স্বচ্ছ, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক আর্থিক ও ব্যাংকিং, বীমা খাত সংস্কারকাজ হাতে নেয়া যেতে পারে।
যদি কেউ প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশ এই যে অসাধারণ অর্জনে আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অগ্রগতির মহাসড়কে দ্রুতবেগে ধাবমান জয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে, তার পেছনের রহস্য কী? উত্তরটি কঠিন নয়। বাংলাদেশের জনগণ সাধারণত অত্যন্ত সদাশয়। এখানে কিষাণ-কিষাণি ও সব প্রকার শ্রমজীবী মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম দেশের একটি বড় সম্পদ। ১৯৭২ সালে প্রায় শূন্যের কোটা থেকে উঠে আসা একটি উদ্যমী ও দক্ষ উদ্যোক্তা শ্রেণী বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিপুল ভূমিকা রাখছে। অবশ্য চলার পথে খেলাপি হয়ে যাওয়া ঋণের একটি অংশকে (ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতিকূলতায় সৃষ্ট) উদ্যোক্তা সৃজনে সামাজিক বিনিয়োগ হিসেবেও দেখা যেতে পারে। কিন্তু বিশ্বচরাচরে বাংলাদেশের চৌকস, উদ্ভাবনী, সাহসী, প্রযুক্তি ব্যবহারপ্রবণ, দক্ষ, কূটনীতিসফল, সংস্কৃতিমনা এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো সরকারপ্রধান জনবন্ধু শেখ হাসিনার নেতৃত্বই হচ্ছে বাংলাদেশের মুকুটে শ্রেষ্ঠ ভূষণ। অব্যাহত অগ্রগতিতে এর ধারাবাহিকতার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।