ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বিজ্ঞানের চোখে মেডিটেশন

প্রকাশিত : ০২:১২ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

মেডিটেশন অলৌকিক কিছু নয়। এটি হচ্ছে বিজ্ঞান। এটি হলো এক সার্বজনীন কল্যাণ প্রক্রিয়া। মেডিটেশন চর্চা করে নারী-পুরুষ, কিশোর-বৃদ্ধ, পাপী-পুণ্যাত্মা নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ শারীরিক মানসিক সামাজিক ও আত্মিক কল্যাণ লাভ করতে পারেন। অসংখ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার মধ্য দিয়ে এটা এখন এক প্রমাণিত সত্য। আসলে মেডিটেশন করলে যে সব উপকার পাওয়া যায়, সেগুলো হলো-

মনোযোগ বাড়ায়

মেডিটেশন যে মনোযোগ বাড়ায় তা বেশ কয়েকটি গবেষণা থেকে প্রমাণিত। উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের পরীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত মেডিটেশন করে স্বেচ্ছাসেবীরা বিভিন্ন স্বরের পার্থক্যকে খুব সহজে বুঝতে পারছে।

মানসিক প্রতিক্রিয়ার প্রবণতা কমায়

ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মেডিটেশন ব্রেনের এমিগডালা অংশের তৎপরতাকে নিয়ন্ত্রণ করে ব্যক্তির আবেগকে সংহত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এটি প্রকাশিত হয় ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের জার্নালে।

শারীরিক-মানসিক সুস্থতা আনে

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মেডিটেশনের ফলে সবচেয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে মানুষের শারীরিক-মানসিক সুস্থতায়। কিছু অসুস্থতা যেমন- ক্ষুধামান্দ্য, বদহজম, মাদকাসক্তি, দুরারোগ্য চর্মরোগ সোরিয়াসিস, ডিপ্রেশন এবং ক্রনিক ব্যথা সারাতে মেডিটেশনের কার্যকর ভূমিকা দেখা গেছে।

বার্ধক্যকে নিয়ন্ত্রণ করে

মেডিটেশন বার্ধক্যকেও নিয়ন্ত্রণ করে। সামাথা প্রকল্পের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মেডিটেশনের ফলে দেহে টেলোমেরেজ নামে একটি এনজাইমের উৎপাদন বেড়ে যায়, যা কোষের বুড়িয়ে যাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ সংক্রান্ত লেখাটি এসেছে জার্নাল ‘সাইকো-নিউরো-এনডোক্রাইনোলজি’-তে।

আবেগ-অনুভূতি বাড়ায়

সামাথা প্রকল্পের সবচেয়ে আলোচিত গবেষণাটি হচ্ছে, মেডিটেশন অন্যের প্রতি আবেগ-অনুভূতিকে বাড়ায় কি-না। দীর্ঘদিন মেডিটেশন করেছেন এমন ব্যক্তিদের ব্রেনের ফাংশনাল এমআরআই করে গবেষক লাজ এবং তার সহযোগীরা দেখেন, ইনসুলা বা এন্টেরিওর সিংগুলেট করটেক্সের মতো মস্তিষ্কের যে অংশগুলো মমতা, অন্যদের প্রতি ভালবাসা ইত্যাদি অনুভূতিকে জাগ্রত করে, তাদের মস্তিষ্কে তা অনেক বেশি সক্রিয়। নিউরো-ইমেজ জার্নালে এটি প্রকাশিত হয়েছে।

আসলে এ সব গবেষণার মধ্য দিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সত্যটি বেরিয়ে এসেছে তা হলো, আপনি যে-ই হোন বা যেখানেই থাকুন, মেডিটেশন থেকে আপনি উপকৃত হবেনই। আপনাকে এ জন্যে মেডিটেশনে বিশেষজ্ঞ হতে হবে না, দিনে পাঁচ ঘণ্টা করে অনুশীলন করতে হবে না, ঘরবাড়ি ছেড়ে জঙ্গলেও যেতে হবে না।

প্রখ্যাত মেডিটেশন গবেষক রিচার্ড ডেভিডসন এ জন্যেই বলেন, দেহ-মনের ওপর মেডিটেশনের প্রভাব এত তাড়াতাড়ি পড়ে যে, আমরা আমাদের গবেষণায় দেখেছি, একদল নতুন মানুষ মেডিটেশন শেখার পর মাত্র দুই সপ্তাহ প্রতিদিন ৩০ মিনিট অনুশীলন করেই তার মস্তিষ্কের কর্মকাঠামোয় ঘটাতে পেরেছে দৃশ্যমান পরিবর্তন।

তাই বলা যায়, মন ও মস্তিষ্কের বিশাল কর্মক্ষমতা নিয়ে এখন যে লাগাতার গবেষণা চলছে, তা থেকে প্রতিনিয়তই বেরিয়ে আসছে মেডিটেশনের ইতিবাচক ফলাফলের নতুন নতুন তথ্য।

শরীর-মনকে শিথিলায়নের মাধ্যমে ব্রেন ওয়েভকে আলফা লেভেলে নিয়ে মনের ধ্যানাবস্থা সৃষ্টিই হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন, মন নিয়ন্ত্রণ, মেডিটেশন বা পরিকল্পিত ধ্যানের প্রথম ধাপ। আর ধ্যান বা মেডিটেশনের প্রয়োজনীয়তাও এখানেই।