ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বিনোদন জগত

বিদায়ী বছরে ভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশের দর্শক-শ্রোতা

প্রকাশিত : ০৪:০২ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৪:২১ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

২০১৮ সালে প্রেক্ষাগৃহ আর টেলিভিশন জগতে ঘটে গেছে নানা ঘটনা। ডিজিটাল প্লাটফর্মের কাছে ধরাশায়ী হয়ে পরে সিনেমা আর টেলিভিশন! বিদায়ী বছরে টেলিভিশন অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন ব্যবস্থাসহ নানা দিক বিশ্লেষণ করে এমন ফলাফলই পাওয়া গেছে।

১৯৮৫ সাল থেকে রাজশাহীর সিনেমাপ্রেমীদের বিনোদিত এবং সরকারি কোষাগারকে মজবুত করার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে অবদান রেখেছে ‘উপহার সিনেমা লিমিটেড’। অথচ নিজের দুর্দিনে দর্শকের সমবেদনা ছাড়া কোনও পক্ষ থেকেই কিছু পায়নি প্রেক্ষাগৃহটি। চলতি বছরের ১২ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণার পর ২০ নভেম্বর শুরু হয় চূড়ান্তভাবে ভেঙে ফেলার কাজ। চলতি বছরের শুরু থেকে সারা দেশে এভাবে আরও ৮০টি প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের তালিকা হয়েছে।

এভাবে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের মিছিলের পরিধি যত বাড়ছে, ততই কমছে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও মুক্তির সংখ্যা। ফলে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ছে গোটা ইন্ডাস্ট্রি। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ জানালেন, এখন পর্যন্ত এ বছর ৩৩টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। অথচ গত বছর মুক্তি পায় ৬৩টি ছবি। এবং তারও আগে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে যথাক্রমে ৬৭ ও ৫৬টি ছবি মুক্তি পায়।

অন্যদিকে, ইচ্ছামতো বিজ্ঞাপন প্রচারের আঁতুড়ঘর হিসেবে এদেশে বেশ পরিচিত মাধ্যম টেলিভিশন। ঘরে ঘরে যন্ত্রটি শোভা পাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু বেশির ভাগ দর্শকেরই চোখ এখন অন্যদিকে। কারণ ব্যস্ত জীবনে ৪৫ মিনিটের একটি নাটক দেখার জন্য গড়ে ২ ঘণ্টার অধিক সময় বরাদ্দ দেওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। আর চলতি বছরও এ চিত্রের খুব একটা বদল ঘটেনি। এছাড়া নির্দিষ্ট শ্রেণীকে টার্গেট করে নির্মিত নাটক, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত অনুষ্ঠান এবং ক্রমাগত বৈচিত্র্যহীন অনুষ্ঠান আয়োজনের তীব্রতাও মাধ্যমটিকে জনবিচ্ছিন্ন করে চলেছে।

এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বিরাট দূরত্ব তৈরি হয়েছে নাট্যনির্মাতা, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীর। এর মধ্যে একক কিংবা ধারাবাহিক নাটক নির্মাণে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা নিয়েও ঘোর আপত্তি নির্মাতাদের। অনেক নির্মাতা ও কলাকুশলী জানিয়েছেন, স্বল্প বাজেটের কারণে অতি দ্রুত নাটকের কাজ শেষ করতে গিয়ে কোনও কাজই তারা স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারেন না। ফলে দর্শকের সঙ্গেও তাদের ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে নিত্যনতুন প্রাযুক্তিক সুবিধা-সহজলভ্যতার কারণে দর্শক নিজেকে ভিন্ন কোনও মাধ্যমে যুক্ত করে নিচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সম্ভবত এ দুটি কারণই গতি ত্বরান্বিত করেছে নতুন মাধ্যম ডিজিটাল প্লাটফর্মের। ইউটিউব বা স্ট্রিমিং সাইটের মতো ইন্টারনেট-ভিত্তিক পরিসর এর বড় উদাহরণ। বাইরের দেশগুলোর মতোই চলতি বছরের শুরু থেকে এ দেশেও ডিজিটাল প্লাটফর্মে চলচ্চিত্র, নাটক, ওয়েব সিরিজ নির্মাণের ধুম পড়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করেছে মালয়েশিয়া-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইফ্লিক্স। এ পথ ধরে বঙ্গবিডি, বায়োস্কোপের মতো প্লাটফর্মও এগিয়ে চলছে সমানে।

এমন পরিস্থিতিতে বলা যায়, সিনেমা আর টেলিভিশনের শেষকৃত্যের ওপর দাঁড়িয়ে ডিজিটাল প্লাটফর্ম তার জয়রথের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। অবশ্য ডিজিটাল প্লাটফর্মের এ এগিয়ে চলাকে অনেক বেশি ইতিবাচক ও সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে দেখতে ইচ্ছুক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, গিয়াসউদ্দিন সেলিম, অমিতাভ রেজার মতো নির্মাতারা।