১৯ হাজার কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে ৯ ব্যাংক
প্রকাশিত : ১১:৪২ এএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ রবিবার
খেলাপি ঋণের লাগামহীন বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়েছে সরকারি-বেসরকারি নয়টি ব্যাংকের মূলধনে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ব্যাংকগুলো ১৯ হাজার ৬২ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এক বছর আগে একই সময়ে আট ব্যাংকে ১৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
যথাযথ ডাউন পেমেন্ট ছাড়া ঋণ নবায়ন, ঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও খেলাপি ঋণের উচ্চ হার কমছে না। বরং দিন দিন তা বেড়ে যাচ্ছে। দেশে প্রথমবারের মতো অবলোপন ছাড়াই গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এর প্রভাবে মূলধন ঘাটতি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে ৯টি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে খেলাপি হয়ে যাওয়া ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তিন মাস আগে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫২২ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি ছিল ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে মোট ঋণ স্থিতি ছিল ৭ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। যার বিপরীতে খেলাপি ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, যা ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। খেলাপি ঋণ বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই মূলধন ঘাটতি বাড়ে। ৯টি ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের মূলধন ঘাটতি থাকলেও কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাখতে সক্ষম হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডার বা মালিকদের জোগান দেয়া অর্থই মূলধন হিসেবে বিবেচিত। সারাবিশ্বে বাসেল কমিটি প্রণীত আন্তর্জাতিক নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মূলধন ঘাটতির তালিকায় থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ছয়টি সরকারি মালিকানার। বাকি তিনটি বেসরকারি খাতের। সরকারি ছয় ব্যাংকে ঘাটতি রয়েছে ১৭ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। এক বছর আগে সরকারি ছয় ব্যাংকে ১৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকার ঘাটতি ছিল। এসব ব্যাংকের দক্ষতা না বাড়িয়ে জনগণের করের টাকায় বারবার মূলধন জোগান নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা রয়েছে। কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারি ব্যাংকের জন্য দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সেপ্টেম্বরে জনতা ব্যাংকের সর্বোচ্চ মূলধন ঘাটতি ৩ হাজার ৯৩২ কোটি। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল মাত্র ১ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। একইভাবে বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। গত বছর ছিল ২ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের ৬৯০ থেকে কমে মূলধন ঘাটতি নেমে এসেছে ২৮৬ কোটি টাকায়। অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি আগে না থাকলেও এবার ৬৬২ কোটি টাকায় পড়েছে। বরাবরের মতো এসব ব্যাংকের মধ্যে মূলধন ঘাটতির শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। এক বছর আগে যা সাত হাজার ৫৪০ কোটি টাকা ছিল। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ৭৪৩ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ৬৬৯ কোটি টাকা। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ১৪০ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি পড়লেও এবার পুরোপরি বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকটির কোনো মূলধন ঘাটতি নেই।
বেসরকারি খাতের আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২৩১ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০৮ কোটি টাকা। এছাড়া এসআইবিএলের ঘাটতি ৩৫ কোটি টাকা।
আরকে//