ঢাকা, শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১

মৃণাল সেনের সেরা ১০

প্রকাশিত : ১১:২৯ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার

মাটির মনীষা (১৯৬৬) : ওড়িয়া চলচ্চিত্র। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়কালের সামাজিক চিত্র, কৃষিজীবী সংস্কৃতি, গ্রামীণ জীবন ও ঐতিহ্যগত পারিবারিক মূল্যবোধ এখানে গান্ধীবাদী ও মার্ক্সবাদী আদর্শের আতশকাচের নিচে ছড়িয়েছে দ্বান্দ্বিক ডালপালা।

ভুবন সোম (১৯৬৯) : উচ্চপদস্থ এক রাগী ও নীরস বুড়ো কর্মকর্তা প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিকারে গিয়ে এক গ্রাম্য কিশোরীর সারল্যের কাছে পায় জীবনের নতুন পাঠ। ব্যক্তিজীবনে মৃণাল ছিলেন সচ্ছল পরিবারের সন্তান। অথচ চলচ্চিত্রে এঁকেছেন প্রান্তিক মানুষের মুখ; গেয়েছেন সাম্যবাদ। এই যে আপাতবিরোধিতা, সেটি যেন এই চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্র স্বয়ং ভুবনেরই প্রতিকৃতি! এই ছবিতেই প্রথমবার ভয়েস ওভার দেন অমিতাভ বচ্চন। হিন্দি চলচ্চিত্রে শৈল্পিক ধারার আবির্ভাবের মাইলস্টোন ছবি।

বাইশে শ্রাবণ (১৯৬০) : বাংলা চলচ্চিত্র। জমিদার পরিবারের বংশধর এক লোক কালের ছোবলে এখন ফতুরপ্রায়। ট্রেনে হকারি করে, ছোট্ট এক গ্রামে কোনোমতে বেঁচে থাকে সে ও তার পরিবার। বেঁচে থাকার এই লড়াই, তুচ্ছ আনন্দ থেকে বিধ্বংসী বেদনা—এই সব নিয়েই ‘বাইশে শ্রাবণ’। যদিও তেতাল্লিশের মন্বন্তরের প্রেক্ষাপটে কাহিনি, তবু তা ছাপিয়ে গেছে দেশ-কালের সীমানা; বাহ্যিক দুর্ভিক্ষের পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক নিঃস্বতাকেও করেছে প্রকাশ।

কলকাতা ৭১ (১৯৭২) : বাংলা চলচ্চিত্র। বিখ্যাত ‘কলকাতা ট্রিলজি’র দ্বিতীয় সিনেমা। নকশাল আন্দোলন, আমজনতার অনাহার, সামাজিক ও রাজনৈতিক দুর্নীতিগ্রস্ততার চারটি ভিন্ন গল্প এক সুতায় বেঁধেছেন মৃণাল।

একদিন প্রতিদিন (১৯৭৯) : বাংলা চলচ্চিত্র। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েটি এক রাতে ঘরে ফেরে না। তার নিরাপত্তা, পরিবারের মানসম্মান—সব ছাপিয়ে প্রবল হয়ে ওঠে যে দুশ্চিন্তা তা হলো, এই মেয়েটিই পরিবারের একমাত্র উপাজর্নকারী সদস্য!

আকালের সন্ধানে (১৯৮০) : বাংলা চলচ্চিত্র। দুর্ভিক্ষ নিয়ে সিনেমা বানাতে গ্রামে আসে একটি শুটিং ইউনিট। প্রথমে বেশ ফুরফুরে থাকলেও ধীরে ধীরে তারা জড়িয়ে পড়ে গ্রামের মানুষগুলোর বাস্তবতার সঙ্গে। দেখে, দুর্ভিক্ষ সেই ১৯৪৩ সালেই বিদায় নেয়নি, এখনো মারাত্মকভাবে বিদ্যমান।
ওকা উড়ি কথা (১৯৭৭) : তেলেগু চলচ্চিত্র। বিখ্যাত সাহিত্যিক মুন্সী প্রেমচাঁদের গল্প ‘কাফন’ অবলম্বনে নির্মিত। গ্রামীণ এক উদ্ভটস্বভাবী, গোঁয়ার পিতা এবং তার পুত্র ও পুত্রবধূর মর্মান্তিক মানসিক সংগ্রামের কাহিনি।

খারিজ (১৯৮২) : রমাপদ চৌধুরীর উপন্যাস অবলম্বনে বাংলা চলচ্চিত্র। এই ছবির জন্য পরিচালক কান ফিল্ম ফেস্টিভালের সর্বোচ্চ পদক ‘পাম ডি’অর’-এর মনোনয়ন পেয়েছিলেন; জিতেছেন জুরি প্রাইজ। শিশু গৃহকর্মীর মৃত্যুর পর তার পিতাকে এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার আড়ালে জীবনের আরেকটি রূঢ় চিত্র এঁকেছেন মৃণাল।

খন্ডহর (১৯৮৪) : হিন্দি চলচ্চিত্র। ঘুরতে গিয়ে তিন শহুরে বন্ধু দেখা পায় এক পরিত্যক্ত ভবনের ভগ্নাংশে জীবন কাটানো এক বুড়ি ও তার কিশোরী কন্যার। এই মা তার দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়র জন্য অপেক্ষারত, যে এসে বিয়ে করবে এই মেয়েকে। অথচ সেই লোকটি বিয়ে করে সংসার পেতেছে শহরে। এদিকে এই তিন বন্ধুর একজন সেই কাঙ্ক্ষিত লোকটির ছদ্মপরিচয় নিয়ে বুড়িকে সান্ত্বনা দেয়। নিশ্চিন্ত মনে বুড়িটি মরে গেলে তিন বন্ধু ফিরে আসে শহরে আবার। সেই ভগ্নবাড়িতে মেয়েটি একাই রয়ে যায়।

একদিন আচানক (১৯৮৯) : হিন্দি চলচ্চিত্র। এক সন্ধ্যায় মুষলধারা বৃষ্টির মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরে না এক অধ্যাপক। তার অপেক্ষায় কিছুদিন শোকস্তব্ধ থেকে পরিবারের সবাই নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে আবারও অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।