ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

ফেইসবুক জুড়ে শুধুই সৈয়দ আশরাফ

প্রকাশিত : ০২:৫৭ পিএম, ৪ জানুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা। তার এমন চলে যাওয়া সহজে মেনে নিতে পাচ্ছেন না, সহকর্মী ও ভক্তরা। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা বাংলাদেশে।

বেশি প্রভাব পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। এই মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক যেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের শোকগাঁথা লেখার খাতা। তার মৃত্যুর খরব ছড়িয়ে পড়ার কয়েক মিনিটের মাথায় ভক্তরা নিজেদের ফেইসবুক আশরাফের ছবি দিয়ে লিখেছেন নিজের সাথে বিভিন্ন স্মৃতি শোকগাঁথা ইতিহাস। ফেইসবুকের টাইমলাইনে ঘুরে ফিরে এসেছেন তিনি। তিনি শুধু আওয়ামী লীগের নেতা  না। তিনি একজন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার দক্ষ রাজনীতি চর্চায় জয় করে নিয়েছেন মনের মন।

এমন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদকে দেশে খুব পয়োজন ছিলো উল্লেখ্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক লিখেছেন, একজন ভালো ‘রাজনীতিবিদ-এর প্রস্থান। তাঁর মতো রাজনীতিবিদের বেশি বেশি দরকার ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে। শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করতে জাতি তাকে।

সন্মান আর ভালবাসায় নিজেকে পরিপূর্ণ করে অকালে চলে গেলেন না পেরার দেশে, প্রীয় রাজনীতিবিদ সততার স্বপ্ন দ্রুত সৈয়দ আশরাফ ভাই, ভাল থাকবেন পরপারে। আমরা খুবই মর্মাহত শোকাহত। আল্লাহ আপনাকে বেহেশতে নচিব করুক আমিন, লিখেছেন আবুল বাসার।

তার মৃত্যুতে লেখক দেবাশীষ রয়, ফেইসবুকে লিখেছেন, প্রচার-গলাবাজি না করেও নীরবে-নিভৃতে আপনি স্বচ্ছ আর শুদ্ধ রাজনীতির যে আলো ছড়িয়েছেন; সেই আলোর ঐশ্বরিক ব্যাপ্তিতে আপনি অমর থাকবেন, নেতা। স্বর্গপ্রাপ্তি হোক আপনার…।

একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল নিজের ফেইসবুকে একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিকের বিদায় শিরোনাম দিয়ে লিখেছেন, সৈয়দ আশরাফ মারা গেছেন ( ইন্নানিল্লাহে ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজিউন) । তিনি ছিলেন একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক। তার বয়স হয়েছিলো ৬৭ বছর। বৃহস্পতিবার (০৩ জানুয়ারি) রাতে ব্যাংককের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সৈয়দ আশরাফ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অসুস্থতার কারণে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন তিনি। দেশে না থেকেও গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ আশরাফ কিশোরগঞ্জ-১ (সদর ও হোসেনপুর) আসনে জয়ী হন। গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এক ছোট ভাই আমার সহপাঠী জানার পর তিনি আমাকে ছোট ভাইয়ের মতই স্নেহ করতেন । তাঁর চলে যাওয়া আমার ব্যক্তিগত ক্ষতিও।

সাংবাদিক কুদ্দুস আশরাফ লিখেছেন, সততা ও নিষ্ঠা একজন মানুষকে কতটা উচ্চতায় পৌছে দেয়, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ মাত্র। মাত্র কয়েক বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি দলের নেতা কর্মিসহ গণ মানুষের মনে কতটা গভীর রেখাপাত করে গিয়েছিলেন, তার অবর্তমানে আজ সর্বত্র উচ্চারিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে সৈয়দ আশরাফের হাতটি ছিল বড় আস্থা ও বিশ্বাসের। জননেত্রী আজ যাঁকে হারিয়েছেন, তিনি তাঁর একজন সহযোদ্ধাই ছিলেন না, ছিলেন আপন ভাইয়ের চেয়ে আপনতর। আজ রাতে সেই আস্থার মানুষটি একান্ত নিরবে চলে গেলেন অজানা আশ্রয়ে। রাজনীতিতে বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে এই মহান মানুষটি গণমানুষের মনে বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ, চিরদিন। যেখানে থাকুন, ভালো থাকবেন গণমানুষের প্রিয় নেতা আশরাফ ভাই। বিনম্র শ্রদ্ধা আপনার রেখে যাওয়া আদর্শের প্রতি।

আর এক সাংবাদিক মীর মুসতাফিজুর রহমান তার ফেসবুকে লিখেছেন, আদর্শহীন, অবলীলায় মিথ্যা বলা, অর্থ আর যশ এর পেছনে ছুটে চলা রাজনীতিবিদদের শ্রদ্ধা করা যখন ভুলতে বসেছে আমাদের প্রজন্ম তখন ৯০ দশকে একজন আশরাফ আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছিলেন এই দুখী বাংলায়। সততা, মেধা, ভদ্রতা, আর আনুগত্যের এক প্রায় অসম্ভব এবং মহাকাব্যিক সন্মিলন! বাংলার রাজনীতির ধুসর আকাশে আরেকজন আশরাফ কত যুগ পর নক্ষত্র।

ফেইসবুকে শায়রুল কবির খান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সুস্থধারার দুই রাজনীতিক মির্জা ফখরুল ও সৈয়দ আশরাফ ২০১৪ সালে রাজনৈতিক সংকটে ভূমিকা রেখেছিলেন। আজকে তাদের একজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শূন্যতা সৃষ্টি হলো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন সৈয়দ আশরাফ।

সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১০টি পোস্টের মধ্যে গড়ে আটটি পোষ্ট এই রাজনৈতিক নেতারা নিয়ে।নিখিলেশ ঘোষ লিখেছেন, একজন নক্ষত্রের প্রয়াণ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাতায় এই নক্ষত্রের নামটি জুড়ে থাকবে ইতিহাসের খাতায়।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সাংসদ হিসেবে শপথের কথাও ছিল। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি সংসদ থেকে ছুটি নিয়ে চিকিৎসা করাতে থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারিতে ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।

 

টিআর/