ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৪ ১৪৩১

প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে যাবেন নওফেল

আলী আদনান

প্রকাশিত : ১০:৩৪ পিএম, ৬ জানুয়ারি ২০১৯ রবিবার

মন্ত্রী পরিষদে চমক থাকবে - এমন আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল। তবে সেই আভাস যে এভাবে বাস্তবে রূপ নিবে তা হয়তো কেউ ভাবেনি। সেই চমকের নাম মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নতুন মন্ত্রী পরিষদে শিক্ষা উপ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ডা. দীপু মণি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম ৯ ( কোতয়ালী- বাকলিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

যদিও বা রাজনীতি ও সরকারে মহিবুল হাসান চৌধুরী নতুন মুখ তথাপি তার বাবা প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন কিংবদন্তী তুল্য রাজনীতিবিদ। যিনি ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে টানা সাড়ে ১৬ বছর চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন।

পেশায় আইনজীবী মহিবুল হাসান চৌধুরীর রাজনৈতিক বিচরণ শুরু হয় কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে। সেসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসেন।

১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। পারিবারিক ও স্থানীয় জনগণের কাছে তিনি নওফেল নামে পরিচিত। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাবার পক্ষে কাজ করে আলোচনায় আসেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারনায় জনসম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারে অধিক জোর দিয়ে বিএনপি শাসনামলে ঐতিহাসিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে চসিক পরিচালনায় পিতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর পেছনে উৎসাহদাতা হিসেবে কাজ করতেন তিনি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে জনবান্ধব করার ব্যাপারে তার উৎসাহ স্থানীয় নেতা কর্মীদের দৃষ্টি কেড়েছিল।

চট্টগ্রামের রাজনীতিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। কর্মীভিত্তিক রাজনীতিতে তার প্রভাব অতুলনীয়। পড়াশুনা শেষ করার পর মহিবুল হাসান চৌধুরী হয়ে উঠেন তার যোগ্য উত্তরাধিকার। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মনোনয়ন না দিয়ে দেওয়া হয় বর্তমান মেয়র আজম নাছির উদ্দিনকে। তখন মহিউদ্দিন অনুসারীরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠে। ঢাকায় বসেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন রাজনীতির প্রয়োজনেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর মূল্যায়ন দরকার। ফলে দলীয় কাউন্সিলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় সন্তান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিভাগ বন্টন হলে তার উপর বর্তায় ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব।

দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথেই বাজিমাৎ করেন তিনি। নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী জিতিয়ে আনার ক্ষেত্রে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর ভূমিকা তখন বেশ প্রশংসা পায়। 

বাংলাদেশ অাওয়ামীলীগের সিনিয়র অনেক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায় দলের ভেতরে মহিবুল হাসান চৌধুরী তার মেধা, ফ্রেস ইমেজ, বিচক্ষণতা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনজরে আছেন। ফলে তিনি চান মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান করে নিক।   

চট্টগ্রাম ৯ অাসনে ব্যারিস্টার নওফেল নির্বাচন করবেন কিনা এমন প্রশ্ন এলে তখন তিনি বলেছিলেন, নেত্রী যা আদেশ করবেন আমি তাই করব। পরবর্তীতে নেত্রীর নির্দেশে চট্টগ্রাম ৯ আসন থেকে নির্বাচন করেন তিনি এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রেসিডিয়াম সদস্য হোক। কিন্তু চট্টগ্রামের মানুষের প্রতি ভালবাসার তাগিদ থেকে তিনি চট্টগ্রাম ছাড়তে রাজী হননি। এমনকি মহিউদ্দিন চৌধুরী মন্ত্রী হচ্ছেন এমন খবরও গণমাধ্যমে এসেছিল বেশ কয়েকবার।

ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন এমন খবরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সহ একদিকে যেমন খুশীর আমেজ, অন্যদিকে অনেকে এটাও বলছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী হয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেন ব্যারিস্টার নওফেল। একই মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ডা. দীপু মনি আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীত্বের অভিজ্ঞতা থাকলেও মহিবুল হাসান চৌধুরী মন্ত্রীপরিষদে একেবারে ফ্রেস ও নতুন মুখ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তার চ্যালেঞ্জটা বেশী। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিনি কতোটুকু সফল হবেন তার উত্তর পাওয়া যাবে সময়ের ব্যবধানে।   

আআ/এসি