ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

আফরোজাকে হারিয়ে দিশেহারা তার পরিবার

প্রকাশিত : ০৬:৩০ পিএম, ৭ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার

একটি দুর্ঘটনায় থমকে যেতে পারে পুরো একটি পরিবার। হয়ে যেতে পারে নিঃশ্ব। যদি ওই পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র হন ওই ব্যক্তি। দুর্ঘটনার কারণেই পরিবারে নেমে আসতে পারে অন্ধকার। তেমনি শনিবার রাজধানীতে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আফরোজা নামে এক শিক্ষার্থী।

জানা যায়, বাসার খাওয়া, কাপড় চোপড়, ছোট দুই ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ সবই চলত আফরোজার টিউশনির টাকায়। কিন্তু আফরোজাকে হারিয়ে এখন দিশাহারা তার পরিবার। কিভাবে চলবে তাদের দিন এ নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়েছে পরিবারটি।

নিহত ওই শিক্ষার্থীর মা নাসিমা বেগম জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাসা থেকে শ্যামপুর থানার পোস্তগোলার আলম মার্কেটের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা খবর পান পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা ব্রিজের পাশে তার মেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। আফরোজাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ১০টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আফরোজা পরিবারের সঙ্গে শ্যামপুর থানার পশ্চিম জুরাইনের জয়নাল আবেদীন রোডের ৪৭/১ নম্বর নিজেদের সেমিপাকা বাড়িতে বসবাস করতেন। তার বাবা মীর আকবর আলী প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। সুস্থ হলে ঘুরে ঘুরে সিরামিকের ব্যবসা করেন। আফরোজার ছোট বোন মৌসুমী অনার্সে পড়েন। ছোট ভাই ফয়সাল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে এবার। অভাবের সংসারে কিছুটা আর্থিক সহযোগিতার জন্য আফরোজা ২০১০ সালে এসএসসি পাস করার পর থেকেই টিউশনিতে নেমে যান। আইজি গেট এলাকায় একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতাও করতেন। সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছিলেন পড়ালেখা।

নাসিমা বেগম বলেন, সে এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ-তে চান্স পাওয়ার পর থাইকা বেশ আনন্দে আছিল। সে প্রস্তুতি নেয় রোববার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হইবো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য সে এক জোড়া নতুন জুতো কিনতে চায়। এই কারণে শনিবার সন্ধ্যার পর বাড়ি থাইকা বের হয় আলম মার্কেটে যাওয়ার জন্য। আমারে কইয়া যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই জুতো কিনে বাড়ি ফিরবো আমার মা। কিন্তু সেই জুতা কিইনা আর সে বাড়ি আসে নাই। চইলা গেছে পরপারে।

আফরোজার সহপাঠীরা জানান, আফরোজা মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। ২০১০ সালে ব্যাংক কলোনি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে মাধ্যমিক এবং ২০১২ সালে যাত্রাবাড়ীর মেট্রোপলিটন কলেজ থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আফরোজা পুরান ঢাকার ফজলুল হক মহিলা কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্স করেন। এরপর নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ-তে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এসএইচ/