ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

কোটি প্রাণের আবেগ ও অনুভূতির নাম সৈয়দ আশরাফ

প্রকাশিত : ০৫:১৭ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সদ্য প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কোটি প্রাণের আবেগ ও অনুভূমির নাম। জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বাংলাদেশের মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

আশরাফুল ইসলাম ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একটি নাম, একটি ইতিহাস। জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।

কিশোরগঞ্জ-১(সদর-হোসেনপুর) আসনে ১৯৯৬ সাল থেকে টানা চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দলের কেন্দ্র, তৃণমূল ও ভোটারদের তাঁর প্রতি আস্থা থাকায় ওই চারটি নির্বাচনে এই আসনে অন্য কেউ আওয়ামী লীগের মনোনয়নও চাননি। আর মৃত্যুর পর এই আসনে সৈয়দ আশরাফের বিকল্প নেই— এমনটাই মনে করেন আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।তিনি ছিলেন উদার মনের মানুষ। কিছু দিনের আগের কথা।

কিছু দিন আগের কথা সৈয়দ আশরাফের স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য টাকার দরকার। উত্তারাধিকার সুত্রে বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলামের কাছ থেকে পাওয়া জমি বিক্রি করে স্ত্রীর চিকিৎসা করালেন। জনগণ আঁতকে উঠলাম জনপ্রশাসন মন্ত্রীর স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য বাড়ি বিক্রি করতে হয়!

 এই ঘটনাটা পত্রপত্রিকায় আসার কয়েক মাস পরে। কিশোরগঞ্জে এক ঘরোয়া সামাজিক রাজনৈতিক আড্ডায় দেশের রাজনীতির হালচাল ঘুরে এলো সৈয়দ আশরাফের স্ত্রীর চিকিৎসার কথা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জেলা পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা। একজন বললেন এগুলো লোক দেখানো। তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন। সাথে সাথে অপর বিএনপির নেতারা প্রতিবাদ করলেন, একজন প্রায় রাগত স্বরেই বললেন বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করা ঠিক না। সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ কেউ করতে পারবেনা যে ওনি কোনদিন কারো কাছ থেকে বা সরকারের এক পয়সা অবৈধভাবে নিয়েছেন। উপস্থিত প্রায় সবাই একবাক্যে মেনে নিয়েছিলেন ব্যাপারটা।

পারভিন খায়ের তার ফেইসবুকে লিখেছেন,  বয়সে সবার ছোট এই আমি শুধু ভাবলাম একজন প্রকৃত নেতা কিভাবে বিরোধীদলের মানুষের কাছেও শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারে। গত দুই বছর কিশোরগঞ্জ সদরে চাকুরীর সুবাদে ছিলাম। দেখেছি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে তার এলাকার মানুষের বিস্তর অভিযোগ ছিলো, তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রী হয়েও কারো চাকরীর সুপারিশ করেন না। দলীয় কোন নেতাকে অবৈধ সুবিধা দেন না। কি এক বিরল ধাতুতে গড়া মানুষ ওনি!

তার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম গত বছর। ভেবেছিলাম পাঁচিল ঘেরা কোন রাজপ্রাসাদসম বাড়ি দেখবো। কিন্ত বিকেলের শেষ আলোয় দেখলাম এক সাদামাটা মধ্যবিত্তের বাড়ি। যেখানটায় তার বাবা বাংলার বুলবুল সৈয়দ নজরুলও থেকেছেন। বাবা ছিলেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, ছেলে হলেন তিন বারের মন্ত্রী। আর তাদের গ্রামের বাড়ির নাকি এই হাল! কি আজব মানুষ এরা!

সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, এল জি আর ডি মন্ত্রী ছিলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ছিলেন। এসব মন্ত্রনালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কোন ঝাড়ুদারদের ঢাকায় ফ্লাট দেখে যেমন আঁতকে উঠি, তার দলের কোন সাধারণ গোবেচারা সদস্যের ব্যাংক ব্যালেন্স দেখে যেমন আঁতকে উঠি তেমনি আঁতকে উঠি তার ঢাকায় ফ্লাট নাই জেনে, ব্যাংক ভর্তি ব্যালেন্স নাই জেনে। অবাক হতে গিয়ে ভাবি এ আর এমন কি, মোশতাকের বন্দুকের নলের সামনে দাড়িয়ে যে মানুষ বলেছিল আমি বংগন্ধুর রক্তের উপর দিয়ে, ত্রিশ লক্ষ্য শহীদের রক্তের উপর দিয়ে মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করতে পারিনা, তার ছেলে এমন হবে এটাইতো স্বাভাবিক। সৈয়দ আশরাফরা মরে না, শুধু আদর্শ হয়ে থাকে পিতা থেকে পুত্রে....

 

টিআর/