ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে পারেন আপনিও

শামসুল হক

প্রকাশিত : ০৬:০০ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৬:১০ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার

(ফাইল ফটো)

(ফাইল ফটো)

আজ বৃহস্পতিবার পৌষ মাসের ২৭ তারিখ। শীত যেন বেকে বসেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শৈত্য প্রবাহ। দেশের সব বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ। বিশেষ করে রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে বলে আজকের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। আর আজকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২.৯ ডিগ্রি সে. আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রংপুর বিভাগে ৯.৬ ডিগ্রি সে.। ফলে দেশের উত্তর অঞ্চলে শীতে কাঁপছে সাধারণ মানুষ এমনটাই ধরে নেওয়া যায়। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষরা পড়েছেন দুর্ভোগে। ছিন্নমূল মানুষদের কষ্ট আরও বেড়েছে।

শৈত্য প্রবাহ এবং শীতে বিশেষ করে উত্তর অঞ্চলের মানুষ পড়েছেন বিপাকে। পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামরী, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরের খেটে খাওয়া মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। শীতজনিত রোগও বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি। শ্রমজীবী মানুষ কনকনে শীতে মাঠে কাজ করতে পারছেন না। কোনো কোনো দিন রোধের দেখাও পাচ্ছেন না এসব জেলার কোনো কোনো গ্রাম।

এদিকে তীব্র ঠাণ্ডায় কোথাও কোথাও কোল্ড ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর হয়েছে, তীব্র শীতের কারণে কাগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন পাঁচজন রংপুরে এক দিনেই। আর এই শীতের কারণে ভোগতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষদেরকে বেশি। কারণ নেই তাদের শীত রোধে গরম কাপড়। তাছাড়াও শীত উপেক্ষা করে পেটের তাগিদেই বের হয় কাজের সন্ধানে তাই তাদেরকেই বেশি ভোগতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই তীব্র শীত থেকে বাচার জন্য তাদের পর্যাপ্ত শীতের গরম কাপড় দরকার। কিন্তু সেই পরিমাণে শীতের পোশাক বা কম্বল পাচ্ছেন এসব মানুষ। ফলে তাদের ভোগান্তি আরও বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু পঞ্চগড়েই প্রয়োজন পাঁচ লাখ কম্বল। কিন্তু বিতরণ করা হচ্ছে খুবই কম। সিংহভাগ মানুষই এখনও কম্বল পাননি।
পঞ্চগড় ছাড়াও দেশের উত্তরের জেলা রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নিলফামারী, ঠাকুরগাও, বগুড়ায় একই অবস্থা৷ রংপুরে পাঁচ লাখ কম্বলের চাহিদার বিপরীতে সামান্য কিছু কম্বল পাঠানো হয়েছে৷

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের ২০ জেলায় নভেম্বরের শুরুতেই ৩২ লাখ কম্বল দিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে, এই কম্বল পর্যাপ্ত নয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। সিংহভাগ মানুষ এই কম্বল পাই নাই।

এই সব সাধারণ মানুষকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে পারেন অনেকেই। করপোরেট হাউজগুলো সিএসআর ফান্ড থেকে যে সাহায্য করে সেই ফান্ডটা আরও বাড়াতে পারে। এ ছাড়াও তারা বিজ্ঞাপন বা অন্যান্য খাতে অনেক খরচ করে থাকেন। সেই খরচ কমিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। এ জন্য জাতির জনকের কন্যা ও মাদার অব হিউমিনিটি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষভাবে নজর দিতে পারেন এই মানুষদের জন্য। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসা দরকার এই সব মানুষের কল্যাণে।

এছাড়াও অভিযোগ উঠে সাধারণ মানুষের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা সঠিকভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায় না। এই সব শীতের পোশাকও নিয়ে হয় নয়-ছয় এ ধরনের অভিযোগ উঠে প্রায় প্রতিবছর। এ বছর যাতে এমন না হয় সেদিকেও বিশেষভাবে নজর দেওয়া দরকার বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। যাতে এ ধরনের কোনো সংবাদ না শুনতে হয় এ জন্য কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন এমনটাই প্রত্যাশা।

এই শীতার্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে পারে- সরকার, বেসরকারি এনজিও, ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তাদের এক দিনের ব্যয় শীতার্ত এই মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতে পারেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এগিয়ে আসতে পারে এই সব অসহায় মানুষকে সাহায্যের জন্য। সব শেষে একটি কথা না বললেই নয়, আপনি, আমি, আমরা সবাই মিলে এগিয়ে আসলে এই সব শীতার্ত মানুষ জয় করতে পারে তীব্র শীতকে। বেঁচে যেতে পারেন এ বছরটা। আসুন না সবাই মিলে হাত বাড়িয়ে দেই শীতার্ত এই সব মানুষের জন্য এমনটা প্রত্যাশা থাকলো।

লেখক: সাংবাদিক।