ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ভিনগ্রহীদের সংকেত আবিষ্কার?

প্রকাশিত : ০৯:২৮ এএম, ১১ জানুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৯:৪০ এএম, ১২ জানুয়ারি ২০১৯ শনিবার

‘ভিনগ্রহীদের আলো’কে এবার ব্রহ্মাণ্ডের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় দেখা গেল, জ্বলছে আর কিছুক্ষণ পর তা নিভে যাচ্ছে। আবার জ্বলছে। তার পর ফের নিভে যাচ্ছে। এক বার, দু’বার নয়, এই ঘটনা ঘটেছে বার বার। দুইমাসে অন্তত ১৩ বার

এবার কি তাহলে বলতে পারা যাবে ‘ভিনগ্রহীদের আলো’ আসছে ঠিক কোথা থেকে? ব্রহ্মাণ্ডে প্রায় অনবরতই সেই আলো জ্বলছে, নিভছে আমাদের চেয়ে কতটা দূরে, এবার কি তা জানা যাবে? তেমন সম্ভাবনাই জোরালো হয়ে উঠল একটি সাম্প্রতিক আবিষ্কারে।

দূর মহাকাশ থেকে পুনরাবৃত্ত বেতার তরঙ্গ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো এ ধরনের বেতার তরঙ্গ পেয়েছেন তারা। এবারের সংকেত পাওয়ায় রহস্য ‘আরও গভীর’ হয়েছে। পাশাপাশি, দেড়শ’ কোটি আলোকবর্ষ দূরের কোনও গ্যালাক্সি থেকে কে বা কারা এই তরঙ্গ পাঠাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।

আতসবাজির মতো সেই আলো যতই ক্ষণস্থায়ী হোক, কয়েক লহমায় তা যে পরিমাণ তাপশক্তি ছড়িয়ে দেয় মহাকাশে, বছরভর আমাদের সূর্যের ছড়ানো আলোর শক্তি (তাপ) তার কাছে নস্যি! এই ভিনগ্রহীদের আলোকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে, ‘ফাস্ট রেডিও বার্স্ট (এফআরবি)’।

এফআরবি আদতে একটা অত্যন্ত শক্তিশালী রেডিও তরঙ্গ। যা গোটা ব্রহ্মাণ্ডেই ছড়িয়ে রয়েছে। আতসবাজি ফাটানো হলে যেমন হয়, তেমনই খুব শক্তিশালী, অত্যন্ত উজ্জ্বল আলোর ঝলক। যাকে বলা হয়, ‘লাইট ফ্ল্যাশেস’। প্রতিদিন ব্রহ্মাণ্ডে এমন আলোর ঝলসানির ঘটনা ঘটে গড়ে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজারটি। কিন্তু ব্রহ্মাণ্ডের অনেক দূরের সেই আতসবাজির আলোর ঝলক আমাদের চোখে খুব একটা ধরা পড়ে না। ২০০৭ সালে তা প্রথম আমাদের নজরে আসে। এখনও এমন ধারণা রয়েছে অনেকেরই যে, ওই আলোর ঝলসানিগুলোর ‘কারিগর’ আসলে ভিনগ্রহীরা! তারাই বোধহয় বিশাল বিশাল আতসবাজি ফাটাচ্ছেন! আর সেটাই অত শক্তিশালী, অত উজ্জ্বল আলোর ঝলক তৈরি করছে ব্রহ্মাণ্ডে।

গত ১২ বছরে এমন এফআরবি বা ভিনগ্রহীদের আলো বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দেখা গেছে কম করে ৬০টি। যা হয়েছে ব্রহ্মাণ্ডের নানা মুলুকে। দেখা গেছে, তার পর তা উধাও হয়ে গেছে। তাই বোঝা যায়নি, ঠিক কোথা থেকে আসছে সেই আলো। কিন্তু এবার নতুন কী দেখলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা?

অন্যতম গবেষক কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শমী চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘এবার ‘কানাডিয়ান হাইড্রোজেন ইনটেনসিটি ম্যাপিং এক্সপেরিমেন্ট (কাইম)’ প্রকল্পের টেলিস্কোপের নজরে ধরা পড়া সেই আলোকে ব্রহ্মাণ্ডের একটি নির্দিষ্ট এলাকাতেই দুইমাসের মধ্যে অন্তত ১৩ বার জ্বলতে আর নিভতে দেখা গেছে। তার ফলে, ব্রহ্মাণ্ডের ঠিক কোথায় সেই আলো জ্বলছে-নিভছে, এবার তা জানতে সুবিধা হবে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর কোথাও এমন আলো জ্বলা, নেভার ঘটনা ঘটলে তাকে বলা হয়, ‘রিপিটে়ড ফাস্ট রেডিও বার্স্ট’। যা এর আগে এক বারই দেখা গিয়েছিল। তবে এবার সেই আলোকে একই জায়গায় অন্তত ৬ বার ঝলসে উঠতে দেখা গেছে। খুব সামান্য সময়ের ব্যবধানে। ফলে তা ঠিক কোথায় হচ্ছে, সেই এলাকা খুঁজে বের করার কাজটা সহজতর হল বিজ্ঞানীদের কাছে।’

শমীর আশা, আগামী কয়েক সপ্তাহে এমন অন্তত ১০০টি রিপিটেড ফাস্ট রেডিও বার্স্ট দেখা যাবে।

শমীর কথায়, ‘আলোর ঝলসানিটা যখন ‘রিপিটেড’ হচ্ছে, তখন আমরা নিশ্চিত হই, এটা কোনও বিস্ফোরণ থেকে হচ্ছে না। কারণ কোনও বিস্ফোরণ থেকে আলোর ঝলসানি হলে তা কখনও ‘রিপিটেড’ হতে পারে না। একবার সেই আলোর ঝলসানি দেখতে পাওয়ার পরেই তা হারিয়ে যাবে। উধাও, হাপিস হয়ে যাবে। আর সেই আলোর প্রতিটি ঝলসানিই খুব বেশি হলে এক মিলি-সেকেন্ডের চেয়ে স্থায়ী হয় না। অত কম সময় স্থায়ী হয় বলেই এই রেডিও বার্স্ট বা রেডিও তরঙ্গকে খুব সহজে আমরা দেখতে পাই না।’

তার কথায়, ‘ওই রেডিও তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১ থেকে ২ গিগাহার্ৎজ বা ২ থেকে ৪ গিগাহার্ৎজ। আর তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য ২০ সেন্টিমিটার থেকে ১০ সেন্টিমিটারের মধ্যে। একেবারে আলোর গতিতেই ছোটে এই তরঙ্গ। আর মূলত তা আলোক-কণা ‘ফোটন’ দিয়েই তৈরি। একটা সূর্যের মোট আয়ুষ্কালে যতটা শক্তির নিঃসরণ হয়, তাকে ১০-এর পিঠে ৩৮টা শূন্য বসিয়ে যে সংখ্যাটা হয়, তা দিয়ে গুণ করলে শক্তির যে পরিমাণ হয়, ওই আলোর ঝলসানি থেকে প্রতি মিলি-সেকেন্ডে তৈরি হয় সেই বিপুল পরিমাণ শক্তি। না হলে ৩০০ কোটি বছর ধরে জ্বলতে পারে ওই আলোর ঝলসানি! আর তা ব্রহ্মাণ্ডে কি এতটা পথ পেরিয়ে এসে এখনও অতটা উজ্জ্বলতা ঘরে রাখতে পারে!’

নক্ষত্র বিস্ম্ফোরণ থেকে শুরু করে এলিয়েনের পাঠানো সংকেত- অনেক কিছুই হতে পারে এই তরঙ্গ। এগুলো আসলে কোথা থেকে আসছে, সে বিষয়ে খুব বেশি তথ্য না থাকায় আপাতত এটি রহস্য হয়েই থেকে যাচ্ছে।

সূত্র: আনন্দবাজার

একে//