ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের পরিবার পেল নতুন বাড়ি

প্রকাশিত : ১১:২৯ পিএম, ১১ জানুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের পরিবারের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে নতুন বাড়ী। হস্তান্তরের আগে বাড়িটির উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম নৌ আঞ্চলিক কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আবু আশরাফ বিএসপি, এনসিসি, পিএসসি। শুক্রবার বাড়িটি বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার রুহুল আমিন নগরে (সাবেক বাগ পাঁচরা) একটি বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ করে নৌবাহিনী। বাড়ি হস্তান্তর উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিনাপালের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আবু আশরাফ।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌবাহিনীর কমডোর নিজামুল হক, নোয়াখালী জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মাহে আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু ইউসুপ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসা, নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম শাহাজাহান মজুমদার, বীরশ্রেষ্ঠের বড় মেয়ে নূরজাহান বেগম নার্গিস, ছোট ছেলে শওকত আলী, সোনাইমুড়ী অন্ধ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া প্রমুখ।

সভায় প্রধান অতিথি আবু আশরাফ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ সন্তান এই বীরের প্রতি শুধু বাসভবন নয়, ভবিষ্যতে তাদের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাসহ ছেলে শওকতের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের বড় মেয়ে নূরজাহান বেগম নার্গিস বলেন, তার মায়ের মৃত্যুর মাত্র তিন দিন পর তিন মেয়ে ও দুই ছেলেকে বাড়িতে রেখে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন রুহুল আমিন। তিনি নতুন বাড়ির জন্য সরকার ও নৌবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের পরিবারের জন্য যা করেছে, অতীতে কোনো সরকার তা করেনি।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আজহার পাটোয়ারী ও মা জুলেখা খাতুন। ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেই তিনি নৌবাহিনীতে যোগ দেন। করাচিতে প্রশিক্ষণ শেষে প্রবেশনারি হিসেবে করাচির পিএনএস কারসাজে কাজ শুরু করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে রুহুল আমিন পাকিস্তান নৌবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে আসেন। এলাকার কয়েকশ` তরুণ যুবককে নিয়ে একটি মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করেন তিনি। ১৯৭১ সালের মে মাসে প্রথম সপ্তাহে ৫০০ প্রশিক্ষিত যুবক নিয়ে তিনি ৩নং সেক্টর কমান্ডার মেজর কেএম সফিউল্লাহর অধীনে যুদ্ধে যোগ দেন। পরে তাকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সময় তিনি যুদ্ধজাহাজ পলাশ ও পদ্মার স্কোয়াড্রন লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর খুলনার রূপসা নদীতে মুক্তিযোদ্ধাদের বহনকারী যুদ্ধজাহাজ পলাশের ইঞ্জিন রুমের দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তানি সেনারা বোমাবর্ষণ শুরু করে। বোমার আঘাতে জাহাজে আগুন ধরে গেলে তাতে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন রুহুল আমিন।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের তিন মেয়ে জাকিয়া খাতুন, নুরজাহান বেগম ও ফাতেমা বেগম। মোহাম্মদ আলী বাহার ও শওকত আলী নামে তার দুই ছেলেও আছেন। তাদের মধ্যে বড় ছেলে মোহাম্মদ আলী বাহার মারা গেছেন। আর শওকত আলী একসময় অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় দিন পার করেছেন। তবে বর্তমান সরকার শওকত আলীকে প্রতি মাসে ৩৫ হাজার টাকা করে ভাতার ব্যবস্থা করেছে।

আরকে//