দিক বদলাচ্ছে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র, দিশাহারা বিজ্ঞানীরা! [ভিডিও]
প্রকাশিত : ০৯:৩৯ এএম, ১২ জানুয়ারি ২০১৯ শনিবার
পৃথিবীর ভিতরে থাকা বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্রের ‘মাথা বিগড়েছে’! সব হিসাব ওলটপালট করে দিয়ে তা অত্যন্ত দ্রুত দিক বদলাচ্ছে। তার ফলে, গভীর সমুদ্র, অতলান্ত মহাসাগরে দিগভ্রান্ত হয়ে পড়ছে জাহাজ। গভীর সমুদ্রে জাহাজের ক্যাপ্টেন, নাবিক আর আকাশে বিমানচালকদের দিশা দেখাতে গিয়ে ভুল হয়ে যাচ্ছে বিলকুল। ভুলভ্রান্তি হয়ে যাচ্ছে স্মার্টফোনে দেখানো গুগলের ম্যাপেও। দিশাহারা হয়ে পড়েছেন বিজ্ঞানীরাও।
পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের উত্তর মেরুটা ছিল কানাডার দিকে। কিন্তু হিসাব কষতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন দেখছেন সেই উত্তর মেরু কানাডা থেকে অনেকটা সরে গিয়ে চলে গেছে সাইবেরিয়ায়। আর সেটা ঘটেছে অত্যন্ত দ্রুত হারে।
গত ডিসেম্বরে ওয়াশিংটনে, আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের বৈঠকে এ কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি আন্তর্জাতিক গবেষকদল। যে দলে রয়েছেন অনাবাসী ভারতীয় ভূপদার্থবিদ অর্জুন রঙ্গনাথন। রয়েছেন প্রবাসী বাঙালি ভূতত্ত্ববিদ অর্ণব দাঁ-ও।
দিশাহারা বিজ্ঞানীরা!
তারা জানিয়েছেন, পৃথিবীর পেটের সেই বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্রের এত দ্রুত দিক বদলানোয় কার্যত দিশাহারা হয়ে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। পার্থিব চৌম্বক ক্ষেত্রের ‘মতিভ্রম’-এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না ভূপদার্থবিদরা। ভূচুম্বক বিশেষজ্ঞরা। পৃথিবীর পেটে (কোর) থাকা ফুটন্ত তরল লোহার স্রোত দিক বদলানোর ফলেই পার্থিব চুম্বক দিক বদলাচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছেন না, কেন তা উত্তর মেরু অত দ্রুত গতিতে সরে গিয়েছে কানাডা থেকে সাইবেরিয়ায়।
ওয়াশিংটন থেকে ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’-কে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্ণব বলেছেন, ‘এভাবে চললে বিপদ অবশ্যম্ভাবী বুঝে আগামী ১৫ জানুয়ারি জরুরি বৈঠকে বসছেন বিশ্বের নতুন চৌম্বক মডেল তৈরি করতে। যাতে যাবতীয় দিক নির্ণয় বা নেভিগেশনের সমস্যা দূর করা যায়, অনতিবিলম্বে।’
তিনি জানিয়েছেন, পার্থিব চৌম্বক ক্ষেত্রের উপর নজর রাখার জন্য ৫ বছর অন্তর বানানো হয় নতুন চৌম্বক মডেল। চলতি মডেলটি চালু হয় ২০১৫-য়। তার মেয়াদ ফুরনোর কথা ছিল ২০২০ সালে।
কেন দিক বদলায় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের?
অর্ণব জানাচ্ছেন, পৃথিবীর পেটের ওই চৌম্বক ক্ষেত্রটা তৈরি হয় মূলত তার (পৃথিবী) ভিতরে থাকা গনগনে তরল লোহার স্রোতের জন্য। সেই লোহার সঙ্গে রয়েছে আরও কিছু পদার্থ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই স্রোত কখনও যায় এ দিকে। কখনও-বা ও দিকে। তার ফলে, সময়ান্তরে পার্থিব চৌম্বক ক্ষেত্রের দিক বদলায়। তা এক জায়গা থেকে অন্যত্র সরে যায়। ২০১৬ সালে এমন ঘটনা ঘটেছিল। দক্ষিণ আমেরিকার (লাতিন আমেরিকা) উত্তর দিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব দিকে আচমকা সাময়িকভাবে খুব দ্রুত গতিতে সরে গিয়েছিল পৃথিবীর সেই চৌম্বক ক্ষেত্র। তা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ বা ‘এসা’) ‘সোয়ার্ম’ উপগ্রহের নজরে ধরা পড়েছিল।
অর্ণবের কথায়, কিন্তু গত বছর থেকেই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছিলেন, পৃথিবীর পেটে থাকা বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্রটি তাদের হিসাব মেনে চলছে না। তা অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক বেশি দ্রুত গতিতে দিক বদলাচ্ছে। তাই আরও এক বছরের জন্য অপেক্ষায় না থেকে, এখনই নতুন চৌম্বক মডেল বানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এটাও ঠিক হয়েছে, এবার ফি-বছরই মূল্যায়ন করা হবে পার্থিব চৌম্বক ক্ষেত্রের গতিবিধির।
গত মাসের শেষাশেষি ওয়াশিংটনে, আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের বৈঠকে আন্তর্জাতিক গবেষকদলের তরফে তাদের দু’টি পর্যবেক্ষণের কথা জানানো হয়েছে।
কোথায় কোথায় হিসাব মিলছে না বিজ্ঞানীদের?
এক. ২০১৫-য় তাদের বানানো নতুন চৌম্বক মডেলে যে হিসাব কষা হয়েছিল, তাকে অনেক বেশি ভুল প্রমাণ করে অনেক বেশি পরিমাণে ও দ্রুততর দিক বদলেছিল পার্থিব চৌম্বক ক্ষেত্র। অথচ, তার এক বছর আগে (২০১৫) নতুন মডেল বানাতে গিয়ে ভূপদার্থবিদরা পার্থিব চৌম্বক ক্ষেত্রের সেই ‘মাথা বিগড়ে যাওয়া’র ব্যাপারটা মোটেই আঁচ করতে পারেননি।
দুই. সেই চৌম্বক ক্ষেত্রের উত্তর মেরুর দিক-বদলের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে অনেক বেশি। ১৮৩১ সালে সেই দিক-বদলের যে পরিমাপ করেছিলেন ভূপদার্থবিদ জেমস ক্লার্ক রস, গত শতাব্দীর নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে তা আচমকাই অনেকটা বেড়ে যায়। বছরে ১৫ কিলোমিটার থেকে বেড়ে হয় ৫৫ কিলোমিটার। ২০০১ সালে তা সরে চলে যায় আর্কটিক সাগরে। ২০১৮ সালে তা আন্তর্জাতিক সময় রেখা (ইন্টারন্যাশনাল ডেট লাইন) অতিক্রম করে ঢুকে পড়ে পূর্ব গোলার্ধে। এখন সেই পার্থিব চৌম্বক ক্ষেত্রের উত্তর মেরুটা রয়েছে সাইবেরিয়ায়।
কেন এত দ্রুত মাথা বিগড়োচ্ছে পার্থিব চৌম্বক ক্ষেত্রের?
অর্ণব বলছেন, ‘সত্যি বলতে কি, সেটা আমরাও এখনও পর্যন্ত সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারিনি। অনুমান, পৃথিবীর ভিতরে থাকা তরল লোহা ও তরল অবস্থায় থাকা অন্যান্য পদার্থের স্রোতের ভারসাম্যে অদলবদল হওয়ার জন্যই এটা হচ্ছে। তবে এটা শুধুই অনুমান। সেটাই বা কেন হচ্ছে, সেটাও এখনও পর্যন্ত অজানা।’
ভিডিও…
সূত্র: আনন্দবাজার
একে//