ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

‘আল্লামা শফীর বক্তব্য অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক’

প্রকাশিত : ০১:৪৮ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০২:১৯ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ রবিবার

মেয়েদের স্কুল-কলেজে পড়াবেন না হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমেদ শফীর বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, আল্লামা শফী নারী শিক্ষা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক।

মির্জা ফখরুল বলেন, মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পাঠানোর জন্য হেফাজতের আমিরের বক্তব্যে আমি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিব্রত করবে।

বিএনপির সহদফতর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন প্রেরিত ওই বিবৃতি বলা হয়, নারী শিক্ষার সঙ্গে ধর্মের কোনো বিরোধ নেই। বিএনপি মনে করে নারী সুশিক্ষায় আলোকিত না হলে তাদের বিকাশ ও প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে না।‘নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষিত হওয়া ছাড়া ইসলামে সমাজকল্যাণ, অর্থনেতিক ও মানবিক সাম্যসহ ইসলামের অন্তর্নিহিত মর্মবাণী বুঝতে সক্ষম হবে না।

সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষালাভ ঘটে মায়ের কাছ থেকেই। নৈতিক ও অক্ষর পরিচয়ের প্রথম পাঠশালাই হলো মায়ের সাহচার্য। সুতরাং মা সুশিক্ষিত না হলে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানটি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত হয় না।’

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য দূর করার জন্য অবশ্যই নারীর শিক্ষা অপরিহার্য। বাংলাদেশের মোট জনসমষ্টির অর্ধেকই নারী, প্রাচীন প্রথা ও কুসংস্কারের নিগড় থেকে বেরিয়ে এসে জাতি গঠনমূলক ও জাতীয় অর্থনীতিতে যথার্থ ভূমিকা পালনের প্রধান শর্ত হচ্ছে নারী শিক্ষা।

তিনি আরও বলেন, নারীরা শিক্ষিত না হলে তারা সমাজে অমানবিক নষ্টবুদ্ধির মানুষদের প্রতারণা, লাঞ্ছনা ও শোষণ-বঞ্চনা থেকে রক্ষা পাবে না। নিগ্রহ ও অসম্মানের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের অক্ষরহীন নারীদের অবশ্যই পড়ালেখা করতে হবে। তা না হলে আমাদের দেশ ও সমাজ অগ্রসরমান পৃথিবী থেকে অনেক পেছনে অবস্থান করবে।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার জুমআর নামাজের পর মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ১১৮তম মাহফিল ও দস্তারবন্দি সম্মেলনে বক্তব্য দেন হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

তিনি বলেন, আপনাদের মেয়েদেরকে স্কুল-কলেজে বেন না। বেশি হলে ক্লাস ফোর-ফাইভ পর্যন্ত পড়াতে পারবেন। আর বেশি যদি পড়ান পত্রপত্রিকায় দেখতেছেন আপনারা। ওই মাইয়া (মেয়ে) ক্লাস এইট, নাইন, টেন, এমএ ও বিএ পর্যন্ত পড়ালে কিছু দিন পর আপনার মেয়ে থাকবে না। তাই আপনারা আমার সঙ্গে ওয়াদা করেন। বেশি পড়ালে আপনার মেয়েকে টানাটানি করে অন্য পুরুষ নিয়ে যাবে। আমার এ ওয়াজটা মনে রাখবেন।

এর একদিন পর শনিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আল্লামা শফী দাবি করেন, মাহফিলে দেয়া তার বক্তব্যের একটি খণ্ডাংশ বিভিন্ন মিডিয়ায় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ওই বিবৃতিতে হেফাজত আমির বলেন, বক্তব্যে আমি মূলত বলতে চেয়েছি- ইসলামের মৌলিক বিধান পর্দার লঙ্ঘন হয়, এমন প্রতিষ্ঠানে নারীদের পড়াশোনা করানো উচিত হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এখানে শিক্ষা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনাসহ যাবতীয় সব কিছুই রয়েছে। ইসলামে নারীদের শিক্ষার বিষয় উৎসাহিত করা হয়েছে এবং সবাই অবগত যে, উম্মুল মুমিনিন হজরত মা আয়েশা (রা.) ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস। তিনি শিক্ষাগ্রহণ না করলে উম্মত অনেক হাদিস থেকে মাহরুম হয়ে যেত।

টিআর/