ঢাকা পুলিশের গৌরবময় স্বাধীনতা : ইতিহাসের দেদীপ্যমান স্রোত
ইমদাদ হক
প্রকাশিত : ০৬:০৮ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ১০:০৫ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার
(ঢাকা জেলা পুলিশের প্রকাশিত বই থেকে সংগৃহীত )
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান তখন মৃত্যু শয্যায় শায়িত। অসুস্থতার কারণে কথা বন্ধ দীর্ঘ চার ঘণ্টার মতো (বাকহীন)। পাশে আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই। তার নাতি মহাত্মা গান্ধীর একটি বই নিয়ে পাতা উল্টাচ্ছিলো। সে রাষ্ট্রপতির শয্যার পাশে বসা এক আত্মীয়কে মহাত্মা গান্ধীর ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো, `Who is the Mahatma Gandhi?’ উত্তরে সেই আত্মীয় বললেন, `He is the greatest leader in the world’. উত্তর শুনে সবাইকে অবাক করে দিয়ে কথা বলে উঠলেন বাকহীন জিল্লুর রহমান। জোর দিয়ে বলে উঠলেন, ‘এই বিশ্বে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বড় এবং মহৎ কোনো নেতা নাই (BangaBandhu is the greatest leader in the world’).
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের দুর্লভ একটি ছবির নিচের ক্যাপশন এটি। মুক্তিযুদ্ধের অজানা ইতিহাস তরুণপ্রজন্মসহ দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে ঢাকা জেলা পুলিশ ‘গৌরবময় স্বাধীনতা’ নামে একটি প্রকাশনা বের করেছে। এর লক্ষ্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও নবপ্রজন্মের মাঝে এ চেতনা জাগ্রত করা। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের প্রতিটি পরতের আদর্শ ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ের বড় অংশ জুড়ে। চাররঙা ছাপার আর্টপেপারে প্রকাশিত বইটিতে নজর পড়া মাত্রই চোখ আটকে যায়। গুণগতমান ও ঝকঝকে ছাপার এমন বই সচারচর কমই দেখতে পাওয়া যায়। প্রচ্ছদ ও বাহ্যিক অলংকরণ দেখে যেমন পাতা উল্টাতে ইচ্ছে করে, তেমনি ভেতরের প্রতি পৃষ্ঠায় মনোযোগও দৃঢ় হয়।
এই গ্রন্থের আলোচনার শুরুতেই উল্লেখ করা যাক, অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের প্রবন্ধের একটি অংশ। যেখানে তিনি জাতির পিতা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘পৃথিবীতে খুব কম দেশই আছে যেখানে দেশ ও একজন নেতা সমার্থক। আমরা সেই সৌভাগ্যবান জাতি যেখানে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক। আমাদের সৌভাগ্য বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন।’
উদ্ধৃত কথাগুলো যে কত দূর সত্য, এই গ্রন্থের প্রতিটি পরতে পরতে তার সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়। ঢাকা জেলা পুলিশের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে, সন্দেহ নেই। কেননা এত দুর্লভ, এত তথ্যবহুল ছবি এই বইয়ে প্রকাশ পেয়েছে, তা অন্য কোথাও ছাপা হয়েছে, অন্য কোথাও সংরক্ষিত আছে, বলা যাবে না হলফ করে। বই থেকেই মোটামুটি একটি ধারণা পাই পুলিশ জাদুঘর সম্পর্কেও। বইটির পাঠ থেকে মনে হলো, বাংলাদেশের ইতিহাসের পূর্ণ অবয়ব, ইতিহাসের পুরো চালচিত্র জানার জন্য পুলিশ জাদুঘর ঘুরে দেখা উচিৎ। বিশেষত, শিক্ষার্থী, গবেষক, রাজনীতিক, উন্নয়ন ও গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য তা অপরিহার্যই বটে।
একালে ‘স্বাধীনতার গৌরবগাঁথা’ যে সংকলন, আমরা যদি বলি, ইতিহাস বোদ্ধাদের অন্তরঙ্গ আত্মভাষ্যে প্রতিফলিত ও পরিষ্ফুটিত ইতিহাসের পূর্ণাঙ্গ সংযোজক বা পরিপূরক বিবরণ, সঙ্গে তা আমাদের সামনে মূর্তমান হয়ে উঠেছে দুর্লভ, বঙ্গবন্ধুর জীবনকালের প্রতিটি অধ্যায়ের আলোকচিত্রের মাধ্যমে- যা হয়ে উঠেছে আমাদের শিক্ষণীয় ভাষ্য, তাহলে অত্যুক্তি করা হবে বলে মনে হয় না। অথবা যদি বলা হয় আলোচ্য গ্রন্থ তার আপন মহিমায় স্বয়ংসম্পূর্ণ একটা গ্রন্থ হয়ে উঠেছে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখকদের অভিজ্ঞতা, কাছ থেকে দেখা বঙ্গবন্ধুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন, দারিদ্র্যের শেকল ভেঙে উন্নয়নশীল দেশের পথে পদার্পণ, স্বাধীনতার চেতনা দেশবাসীর মনে জাগ্রত করার উদ্যোগ- সবমিলিয়ে এই গ্রন্থ যে ভিন্নতর একটা বৈশিষ্ট্যসূচক কিছু বা গবেষণার উজ্জ্বলতম তথ্যসূত্র হয়ে উঠেছে এবং বঙ্গবন্ধুকে অন্তরঙ্গ আলোকে আমাদের সমীপবর্তী করেছে, মনে হয়, তাতেও অত্যুক্তি করা হবে না। কেননা, বাংলাদেশের চার যুগের ইতিহাস আলোকচিত্রের মাধ্যমেই তো সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, আদর্শ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ছোঁয়া পাওয়া যায় তাঁর সময়ের নানা আলোকচিত্রের মাধ্যমে।
ইতিহাস রচনা ও সংরক্ষণের অন্য বহুবিধ মাধ্যম ও উপকরণের মধ্যে বাস্তবা অভিজ্ঞতা থেকে লেখা বড় সহায়ক উপকরণ। সঙ্গে আলোকচিত্রের সমুজ্জল উপস্থাপনা। সে বিচারে ১৯২০ সারল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইতিহাসের অববাহিকা অংকন করা হয়েছে ‘গৌরবময় স্বাধীনতা’য়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- বাঙালি জাতির অস্তিত্বের স্বপ্নের পুরোধা প্রবাদ পুরুষ। তিনি বাঙালির স্বপ্নের মানব। পারিবারিকভাবেই দেশের নিপীড়িত মানুষের মুক্তি ও দেশের স্বাধীকারের স্বপ্ন রোপিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর কচি মনে। কিশোর বয়স থেকেই পারিবারিক লাইব্রেরিতে সমসাময়িক বই-পুস্তক ও পত্রিকা পড়ে জ্ঞানের সাম্রাজ্য বৃদ্ধি করেন। ম্যাট্রিক পাসের পর ইসলামীয়া কলেজে ভর্তি হন। মূলত সে সময়েই প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। রাজনৈতিক নানা ঘটনাপ্রবাহে চলতে থাকে তাঁর দৈনন্দিন রাজনৈতিক ধারা। গেল শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে শুরু করে অষ্টম দশকে অন্তিম পর্যায় পর্যন্ত সম্পূর্ণ বৈরী রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশে একজন বাঙালি মুসলমান, একজন স্বাধীনচেতা তেজদীপ্ত পুরুষ, স্বাধীনতাকামী ছোট কিশোর থেকে স্বাধীনতার স্থপতি কিংবা খোকাবাবু থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠার দেদীপ্যমান ইতিহাসের অন্তরঙ্গ বিবরণঠাসা গ্রন্থ হয়ে উঠেছে এই সমৃদ্ধ সংকলন। এই সংকলন কেবল বঙ্গবন্ধুর জেগে ওঠার কাহিনী নয়, সামগ্রিকভাবে পুরো এক দশকের সময়পরিসরে বাঙালি জাতির জেগে ওঠার, বঙ্গবন্ধুর সামাজিক ও রাজনৈতিক অনিঃশেষ সংগ্রাম, যুগপ্রাচীন সংস্কার ভেঙে স্বাধীকারের প্রতিযোগিতায় নেমে তাঁর বিজয় অর্জনেরও ইতিহাসও হয়ে উঠেছে এতে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ‘আমার নেতা বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের লেখনীতে শিহরণীয় এক ঘটনার উল্লেখ করেছেন। তাঁর ভাষায়, ... ১৯৬৬ সালে মে মাসের সম্ভবত প্রথম সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের কিছু নেতৃবৃন্দকে রাতে বিচারপতি ইব্রাহিম সাহেবের আম বাগানে আমাদের সাথে সাক্ষাৎ দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে ৬ দফা দিয়েছি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান কোন অবস্থায় ৬ দফা মেনে নেবে না। আইয়ুব খানের কাছে ২টি পথ খোলা আছে, হয় ৬ দফা মেনে নেওয়া; না হয় আমাকে ফাঁসিকাষ্টে ঝুলানো। আমি প্রস্তুত কাউকে না কাউকে তো জীবন বিসর্জন দিতেই হবে। আমিই প্রথম স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে চাই। কিন্তু তোদের আমার সামনে মাটি নিয়ে শপথ করতে হবে যে, আমার ফাঁসির পর আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। অনেক বেশি বেগবান হবে। আমরা উপস্থিত থেকে সকলেই ক্রন্দনরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সাথে মাটি নিয়ে শপথ করেছিলাম, যে কোন মূল্যে আমরা দেশকে স্বাধীন করবোই করবো।’’
(ইমদাদ হক ফাইল ফটো)
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ শিরোনামে তত্ত্বীয় আলোচনা করেছেন, আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘... ১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানি শাসকেরা যদি পূর্ব বাংলার মানুষের অভিপ্রায় মেনে নিয়ে তাদের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগকে ছয় দফার ভিত্তিতে দেশের সংবিধান প্রণয়নের অধিকার ছেড়ে দিতেন, তাহলে সেদিন হয়তো মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হতো না, তবে ওই চেতনা অমলিন থাকতো। আর তা অমলিন থাকতো বলে পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে পূর্ব বাংলাকে ধরে রাখা যেতো না। পাক্সিতানি শাসকদের চণ্ডনীতি সেই অনিবার্য সংঘাত ও বিচ্ছেদকে বাস্তবায়িত করে তুলেছিল ১৯৭১ সালে। তাই পূর্ববর্তী চব্বিশ বছরের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রবণতার সঙ্গে সেদিনকার স্বাধীনতার স্পৃহা মিলে বিকাশলাভ করেছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।’
জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম লিখেছেন স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরার বর্ণনা। ‘...বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়’ শিরোনামে লিখেছেন, ‘নয়াদিল্লী থেকে রাজকীয় বিমানবাহিনীর যে বিশেষ বিমানটি বঙ্গবন্ধুকে বহন করে নিয়ে আসছিল, ঢাকার আকাশে তা দৃশ্যমান হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় অপেক্ষমান বিশাল জনসমুদ্র উল্লাসে ফেটে পড়ে। কারণ এবার সত্য সত্যই রূপকথার মহানায়কের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রাণপ্রিয় স্বদেশভূমিক স্বাধীন বাংলাদেশে বিজয়ীর বেশে ফিরে আসছেন। তার পরের দৃশ্যগুলো বর্ণনার ভাষা আমাদের নেই। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে তিনি তাঁর পরিবারের কাছে না গিয়ে সোজা এলেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাঁর প্রিয় স্বদেশবাসীর কাছে। রমনা ময়দানের যে স্থান থেকে তিনি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, ঘোষণা করেছিলেন মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামের।’
বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান তাঁর লিখনীতে তুলে ধরেছেন বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের আদ্যোপান্ত। গিমাডাঙ্গার কচি কিশোর থেকে স্বাধীনতার মহান পুরুষে রূপান্তরের মোটামুটি চিত্রটি অংকিত হয়েছে তাঁর সাবলীল উপস্থাপনায়। ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ শিরোনামে কিশোর বঙ্গবন্ধুর মধ্যে দেদীপ্যমান নেতৃত্বের সম্ভাবনা ফুটে উঠেছে এভাবে, ‘... মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে বিপ্লবী রাজনীতির ধারায় কিশোর মুজিবের ইনডকট্রিনেইশনের পর ১৯৩৮ সালে শেখ মুজিবের জীবনে আর একটা টার্নিং পয়েন্ট লক্ষ্য করা যায়। ওই বছরে গোপালগঞ্জে সফরে আসেন বাংলার হক-লীগ কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক ও তাঁর বাণিজ্য ও শ্রমমন্ত্রী এবং মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এই সফরে শেখ মুজিবের সাহস ও সপ্রতিভবতার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী সম্ভাবনাময় এক নতুন রাজনৈতিক প্রতিভার সন্ধান পান। এই প্রতিভাবান তরুণকে তিনি বাংলায় মুসলিম লীগ গড়ে তোলা এবং পাকিস্তান আন্দোলনে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে তাঁর সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলেন। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হোসেন সোহরাওয়ার্দী ১৯৪০-৪১ সালের মধ্যেই শেখ মুজিবের রাজনৈতিক গুরুতে (Mentor) পরিণত হন।’
আরেকটি তথ্যবহুল লেখা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঝিনাইদহ মহকুমার (বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা) পুলিশ প্রশাসক (SDPO) মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রমের লেখাটি। স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের গৌরব গাঁথা’ প্রবন্ধটি। অর্থনৈতিক প্রতিবেদক হওয়ায় সংবাদ বা প্রবন্ধের ক্ষেত্রে অর্থনীতির বিষয়টিই প্রাধান্য থাকে। তবে, ব্যতিক্রম হলো এই প্রবন্ধের ক্ষেত্রে। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা নয় শুধু, আত্মস্থ করার মতো লেখা তাঁর। তিনি লিখেছেন, ‘...১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের রক্তিম ঐতিহাসিক সংগ্রামমুখর দিনগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে রাজারবাগে পুলিশের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ ও প্রথম বুলেট ছোড়ার অনবদ্য ইতিহাস রজনীতে অত্যাধুনিক মারনাস্ত্র সজ্জিত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অগ্রসরমান কলামকে থ্রি নট থ্রির অভেদ্য বুলেট ছুড়ে পিছু হঠতে বাধ্য করেছিল রাজারবাগের অকুতোভয় পুলিশ সদস্যরা। শুধু তাই নয়, পুলিশের ওয়ারলেস সেদিন সারাদেশে অগ্রসরমান অপারেশন সার্চ লাইটের খবর ছড়িয়ে পড়তে উৎসাহিত করেছিল। ১ মার্চ থেকে ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও যুদ্ধমুখর দিনগুলোর সঙ্গে পুলিশ অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ ও উন্মাতাল করে তোলে। ফলে মুক্তিযুদ্ধেও ইতিহাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, পাবনা, যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোলান্দ, মাগুড়া, নড়াইল, পিরোজপুর এলাকাসমূহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর-বন্দর, খাল-বিল, নদী-নালা, ময়দান, বাজার সর্বত্র অবস্থানরত পুলিশ বাহিনী পাকিস্তানী বাহিনীর মতো একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে সম্মিলিতভাবে প্রথম ধাক্কায় রুখে দিয়েছিল- জনগণের সম্মিলিত শক্তিকে গুছিয়ে ও কাজে লাগিয়ে।
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পূর্ব পাকিস্তানের সাকুল্যে ৩২ হাজার পুলিশ সদস্যের মধ্যে ১৩ হাজার সরাসরি নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। বেশিরভাগই যার যার পূর্ব পুরুষের বসতে ফিরে গিয়ে স্থানীয় কমান্ডারদের সঙ্গে মিলে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিশেষ বিশেষ সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ লড়াই করেছে। স্থানীয় যুবকদের ট্রেনিং দিয়েছে। অন্তত সাতশত পুলিশ সদস্য শহীদ হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডে চাকরিরত পুলিশ বাহিনী ব্যতীত আর কোনো সংবিধিবদ্ধ বাহিনী এত অধিক সংখ্যায় মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেনি কিংবা আহত/নিহত হয়নি।’
‘গৌরবময় স্বাধীনতা’র সার্বিক তত্ত্বাবধান করেছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান। তাঁর সব সময়ের খোঁজখবর আর নির্দেশনায় মানসম্মত ও রুচিশীল একটি প্রকাশনা বের হয়েছে বলা যেতে পারে। পেশাগত ব্যস্ততার মাঝে এমন সৃজনশীল কাজে সময় বের করা কঠিন কাজ বটে। শক্ত এই কাজটিই তিনি করেছেন অত্যন্ত সাবলীলভাবে, দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে। এর মাধ্যমে তাঁর ব্যক্তিগত রুচিবোধ, সৌন্দর্যের পূজারী, সৃষ্টিশীলতার ধারক- পরিচয় ফুটে উঠে সুন্দরের ক্যানভাসে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে। ‘গৌরবময় বিজয় ও গৌরবময় স্বাধীনতা অনুষ্ঠানের প্রাসঙ্গিকতা’ শিরোনামে তিনি তুলে ধরেছেন আয়োজনের প্রেক্ষাপট। তিনি লিখেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনাদর্শ সর্বস্তরের জনসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ঢাকা জেলা পুলিশ কর্তৃক ২০১৭ ও ২০১৮ সালে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং গৌরবময় স্বাধীনতা নামে দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিকশিত এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমুজ্জলকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযুদ্ধেও দুর্লভ প্রামাণ্যচিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শন, গৌরবময় স্বাধীনতা মঞ্চে দেশাত্মবোধক সংগীতসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান পরিবেশন নিঃসন্দেহে নতুন প্রজন্মসহ সাধারণ জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের অজানা ইতিহাসকে জানতে সহযোগিতা করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার ধারাবাহিক কর্মসূচি হিসেবে ‘গৌরবম স্বাধীনতা’ সংকলনটি বের করার উদ্যোগ। দেশবরেণ্য লেখকদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ লেখা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ আলোকচিত্রের একটি প্রামাণ্য সংকলন। এই স্মারক গ্রন্থটি মহান মুক্তিযুদ্ধেও দুর্লভ ইতিহাস, অজানা ঘটনাচিত্র ও আলোকচিত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনাকে প্রজন্ম হতে প্রজন্মে সমুজ্জলকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
একটা বিষয় বিস্ময়কর, অবাক করার মতোই। বঙ্গবন্ধু বিশ্বসেরা ভাষণটি দিয়েছিলেন, ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে। তাও প্রায় চার যুগ আগে। এর মধ্যে পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় কত জল ঘোলা হলো। পঁচাত্তরের কালো আগস্টে আমরা জাতির জনককে হারালাম, দুর্ভাগ্য আমাদের। ক্ষমতার কত পালাবদল হলো। সবশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই আবার নিরাপদ হলো দেশ, বাংলাদেশ। শান্তির এই দেশটির দারিদ্র্যপীড়িত পরিচয়ের অবসান হলো। উন্নয়নশীল দেশের নতুন মর্যাদায় বিশ্বব্যাপী অভিসিক্ত হলো লাল সবুজের পতাকাটি। কিন্তু দীর্ঘ এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার প্রয়াস খুব একটা ছিল না বললে ভুল হবে না। অবশেষে এক নারীর মহান উদ্যোগে ভাষণটি ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের অন্তর্ভূক্ত হয়। তিনি বর্তমানে বদরুননেছা সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে সহকারী অধ্যাপক রোকেয়া খাতুন।
ইউনেস্কোর একটি উপদেষ্টা কমিটি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে দেওয়া বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামান্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ ধরনের দলিলগুলো যে `মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে` অন্তর্ভুুক্ত করা হয়, সে তালিকায় এ ভাষণটিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সারা বিশ্ব থেকে আসা প্রস্তাবগুলো দুবছর ধরে নানা পর্যাালোচনার পর উপদেষ্টা কমিটি তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে। মূলত এর মাধ্যমে বিশ্ব জুড়ে যেসব তথ্যভিত্তিক ঐতিহ্য রয়েছে সেগুলোকে সংরক্ষণ এবং পরবর্তী প্রজন্মের যাতে তা থেকে উপকৃত হতে পারে সে লক্ষ্যেই এ তালিকা প্রণয়ন করে ইউনেস্কো। ইউনেস্কোর তথ্য বলছে, তাদের মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড (এমওডব্লিউ) কর্মসূচির উপদেষ্টা কমিটি ৭ মার্চের ভাষণসহ মোট ৭৮টি দলিলকে `মেমোরি অর দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে` যুক্ত করার সুপারিশ করে।
৪৭ বছর আগে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ এসেছিল এক ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলনের পটভূমিতে। সেদিনের ১৮ মিনিটের ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন `এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ওই ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকো।’ ভাষণ শেষে আবার স্বাধীনতার পক্ষে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছিল ঢাকার রাস্তাগুলো।
কিন্তু এর প্রেক্ষাপট কি। খুব একটা জানা ছিল না আমারও। জ্ঞানের এই অপূর্ণতা দূর হলো রোকেয়া খাতুনের লেখাটি পড়ে, যিনিই জাতিরজনকের মহান এই ভাষণটিকে বিশ্বদরবারে নতুন মর্যাদার পরিচিতি এনে দেবার ক্ষেত্রে অনন্য উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। এই অর্ন্তভূক্তকরণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেছেন তিনি। তাঁর লেখা থেকে সারমর্মটা লিখছি নিজের মতো করেই। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রোকেয়া খাতুনের স্বামী ঢাকা জেলার বর্তমান পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান। স্বামীর কর্মসূত্রের সুবাদে রোকেয়া খাতুনকেও ঘুরে বেড়াতে হয়েছে নানা স্থানে, করে নিতে হয়েছে নিজের বদলীও।
কর্মজীবনের এক পর্যায়ে রোকেয়া খাতুন ২০০৭ সালে প্রেষণে বদলি হয়ে ‘প্রোগ্রাম অফিসার’ হিসেবে যোগ দেন ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কো’ তে। এর বছর চারেক পর ২০১১ সালে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় কোরিয়ান ইউনেস্কো আয়োজন করে ‘সেকেন্ড রিজিওনাল ট্রেনিং ওয়ার্কশপে অন দ্য ইউনেস্কো’ প্রোগ্রামের। এই প্রোগ্রামে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এ বাংলাদেশের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন রোকেয়া খাতুন। দায়িত্ব পান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ঐতিহ্যগত গুরুত্ব আছে এমন কিছুর দলিল ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে উপস্থাপনের।
কাজ শুরু করেন শুরু থেকেই। প্রথম দিকে স্থানীয় পর্যায়ে বাংলা ভাষার প্রাচীনতম কাব্য সাহিত্য নিদর্শন হিসেবে ‘চর্যাপদ’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেন। পরে ভাবনা পরিবর্তন করে কাজ শুরু করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে। কেননা, একটি দেশের স্বাধীনতা অর্জনের মতো ঘটনা একটা ভাষণ দ্বারা আলোড়িত হয় কেবল একাত্তরেই, লাল সবুজের বাংলাদেশেই। একমাত্র বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ভাষণটিই আমাদের স্বাধীনতার বীজ রোপন করে দেয়। এ কাজে তাকে পরামর্শ, অনুপ্রেরণাসহ সার্বিক সহযোগিতা করেন স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা শাহ মিজান শাফিউর রহমান। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, পৃথিবীর বুকে একমাত্র একজন নেতার এই একটি ভাষণই গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলো। যা আজও ব্যতিক্রম, অনন্য ও অনুকরণীয় উদাহরণ।’
বাঙালির মুক্তির অনন্য সনদ ৭ মার্চের ভাষণ। দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে নেতা এগিয়ে এলেন রেসকোর্স ময়দানে, জগতে এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশে, দশ লক্ষ মানুষের এই ঐতিহাসিক জমায়েতে বাঙালির হাজার বছরের নিপীড়ন-নির্যাতনের শৃঙ্খল ছিঁড়ে ফেলে জলদগম্ভীর কণ্ঠে নেতা ঘোষণা করেন... এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবুর রহমান এভাবেই হয়ে উঠলেন বাঙালি জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধের মহান স্থপতি এবং রাজনীতির এক মহান কবি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস আর বঙ্গবন্ধু নামটি অবিচ্ছেদ্য। এই ভাষণে বিশ্ব ঐতিহ্যে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার মতো সব উপাদানই ছিল। যার রয়েছে পর্যাপ্ত গ্রহণযোগ্যতা ও ঐতিহাসিক প্রভাব।
রোকেয়ার এই প্রচেষ্টায় যথেষ্ট উৎসাহ দেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর সে সময়ের সচিব আব্দুল খালেক। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরে অবিরত ছুটতে হয়েছে রোকেয়াকে। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে তিনি যোগ দেন ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় কোরিয়ান ইউনেস্কো আয়োজিত ‘সেকেন্ড রিজিওনাল ট্রেনিং ওয়ার্কশপ অন দ্য ইউনেস্কো মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ডে’। ২০১১ সালের ১১ থেকে ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত ওই কর্মশালায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভুটান, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মিয়ানমার, পালাও, পাপুয়ানিউগিনি, ফিজি, সলেমন দ্বীপপুঞ্জ, পূর্ব তিমুরসহ ১১ দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ৭ মার্চেও ভাষণ বেশ প্রশংসিত হয়। এর মধ্যে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের চেয়ারপারসন রে অ্যাডমন্ডসন রোকেয়ার উপস্থাপনের ভূয়সী প্রশংসা করে কিছু মতামত ও পর্যবেক্ষণ দেন। থাইল্যান্ডের আবহাকর্ন মনোনয়ন আরও শক্তিশালী করতে ভাষণের পিছনের ব্যক্তি- ক্যামেরা, শব্দগ্রহণ প্রভৃতি কাজে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের যুক্ত করার পরামর্শ দেন। বিশ্বব্যাপী আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা, যুদ্ধের হুংকার, প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানে ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে এমন সম্পদ যখন বিনষ্টের পথে, গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক অনেক দলিল যখন নষ্টের ঝুঁকিতে, সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৯২ সালে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম চালু করে ইউনেস্কো। সেই ফোরামে বিষয়টি প্রথম উপস্থাপনের ছয় বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর মেলে বিশ্ব স্বীকৃতি।
‘গৌরবময় স্বাধীনতা’তে আরও লিখেছেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বাণী রয়েছে মাদার অব হিউম্যানিটি, বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (অ্যাডমিন অ্যান্ড ডিসিপ্লিন) হাবিবুর রহমান, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞার।
এ রকমের অনেক ঘটনার বিবরণ এই স্মরণিকার দৌলতে পাওয়া যাবে। অমূল্য এই গ্রন্থের তাৎপর্য বুঝতে হলে এর পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। শিক্ষার্থী ও গবেষকদের কাজে লাগবে সহায়ক গ্রন্থপুঞ্জি হিসেবে। আমার মনে হলো, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের জন্য পড়ার জন্য এই বইটি বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
লেখক# বিজনেস রিপোর্টার, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর।
এসএইচ/