ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ও সম্ভাবনাময় তারুণ্য

নাজমুল আলম টিপু

প্রকাশিত : ১০:৫৯ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

বিভিন্ন ধরণের সামাজিক, রাজনৈতিক প্লাটফর্মে তরুণদের ভূমিকা সর্বাগ্রে রাখা হয়। দেশের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি, দেশ পরিচালনার হাতিয়ার হিসেবে তাদেরকে প্রস্তুত হবার আহ্বান জানানো হয়। হ্যাঁ, আমাদের তরুণদের মধ্যে এ সব সম্ভাবনা রয়েছে।

শুধু আমাদের কেন? প্রত্যেক দেশেরই ভবিষ্যৎ ধরা হয় চলমান তরুণ জনগোষ্ঠীকে। তাদের হাতেই ভবিষ্যতের শিখা তুলে দিতে চায়। এই দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু অন্যান্য রাষ্ট্র তার এই ভবিষ্যৎ নেতাদেরকে প্রস্তুত করার জন্য যা করছে, আমরা তার কতটুকু করছি? আমরা কি পারছি তাদেরকে সেই সুযোগ করে দিতে? আমরা কি পারছি তাদের চিন্তার জগতটাকে প্রসারিত করে দিতে?

আমরা কি তাদেরকে সেই নেতৃত্বের জায়গা করে দিচ্ছে? আমরা কি তাদের কথাকে, মতামতকে সম্মান এবং সবিনয়ে গ্রহণ করছি? এই প্রত্যেকটা প্রশ্ন, প্রশ্নই থেকে যায়। কারণ আমরা জানি, তারা এই সুযোগ পাচ্ছে না। আমি অবাক হই, যখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিন্টন (সাবেক) আমাদের দেশে আসেন রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মুখোমুখি হন তাদের স্বপ্নের কথা শুনতে, তাদের পরিকল্পনা কিভাবে সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতির হালছাল বিশ বছর পর কেমন হবে, কেমন হওয়া উচিৎ, কি বাঁধা আছে- থাকবে, সেটা উত্তরণে কি করা প্রয়োজন হতে পারে। ভারতের রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম (সাবেক) তিনি বাংলাদেশ সফর করেন তরুণদের সঙ্গে কথা বলতে। তিনি তাদের সঙ্গে স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেন। কিভাবে স্বপ্ন দেখতে হয়, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। কিভাবে স্বপ্ন দেখাতে হয় তাও বলেন।

আমি সেই তরুণদের স্পৃহা, তাদের চোখে জেগে থাকা স্বপ্নের কথা চিন্তা করি। আর ভাবি, এরাই তো বাংলাদেশ। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সব তরুণ শিক্ষার্থীদের বাচনভঙ্গিতে দেখতে পাই ভবিষ্যৎ সোনার বাংলা। কিন্তু আমরা কি কখনও কোন রাজনৈতিক নেতা, দল, সঙ্গগঠনকে দেখেছি তাদের কথা শুনতে, বুঝতে? আমরা কি কখনো তাদের মনের কথা জানতে চেয়েছি? আমরা কি জানতে চেয়েছি দেশ নিয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনা কী? পঞ্চাশ বছর পর তারা কেমন বাংলাদেশ দেখতে চায়? বিভিন্ন সভা, সম্মেলনে, সেমিনারে শুধু আশার বাণি শুনতে পাই। কিন্তু কখনও তাদের কাছ থেকে জানতে চাইনি এই তরুণরা কিভাবে দেশটাকে এগিয়ে নিতে চায়! বাংলাদেশে বর্তমানে তরুণদের বিশাল একটা সংখ্যা রয়েছে।

কবি হেলাল হাফিজ বলেছেন, ‘যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ট সময়’। অথচ সেই মহামূল্যবান যৌবনকে আমরা হেলায় নষ্ট করছি। ‘জ্বলে পুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’ - কবি সুকান্তের স্বপ্ন মাখা সেই তরুণদের আমরা এখনও চিনতে পারি না। আমরা সেই স্বপ্ন দেখি যেখানে তরুণদের শুধু স্বপ্ন দেখানো হবে না, তরণদের ব্যবহার করা হবে স্বপ্ন বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে। আমরা সেই তরুণ সমাজের স্বপ্ন দেখি, যে সমাজে তরুণরা প্রজ্জ্বলিত অগ্নি-শিখার সামনে দাঁড়িয়ে জাতির ভবিষ্যৎ রচনা করবে। সব বাঁধা উপেক্ষা করে অন্ধকার জাতিকে আলোর মুখ দেখাবে। কিন্তু এই অদম্য তরুণরা দেখিয়ে দিচ্ছে, আমরা তাদের নিয়ে চিন্তা না করলেও, তারা তাদের কাজ করে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডই তার প্রমাণ। এই তরুণরা আর কিছু চায় না, তারা চায় কাজ করার সুযোগ। এই টগবগে তরুণ সমাজ যে জ্ঞানে-গুনে কতটা এগিয়ে, সেটা আমরা প্রতিবছর দেখতে পাই হাজার হাজার তরুণ যখন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেয়। এই তরুণ মেধাবিরা দেশ-বিদেশে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে।

কিন্তু এই মেধাকে আমরা আমাদের দেশের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারছি না-সেটা দুঃখজনক। সরকারের উদাসীনতা, মেধাকে অবমূল্যায়ন, দুর্নীতি এই মেধাকে দেশ হতে বিতাড়িত করছে। না হলে হয়ত-আমরা দশটি বছর এগিয়ে যেতাম। তবে বর্তমানে দেশে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ দিয়ে কথা বলার মানুষ পাওয়া কষ্টসাধ্য। স্বার্থহীন জনগোষ্ঠী যদি না থাকে তবে- নৈরাজ্য সেখানে বিস্তার করবেই। অথচ, প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক কর্মীরা ঠিকই পৃষ্টপোষকতা পাচ্ছে। অথচ সেই সহযোগিতা প্রতিটি ক্যাম্পাসে অশান্তি নিয়ে আসছে। কিন্তু কোনভাবেই সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীকে সহযোগিতার মনোভাব কেই দেখাচ্ছে না। কারণ সেখানেও স্বার্থ বিদ্যমান। একটি পরিপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনে সবই প্রয়োজন, কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে প্রাধাণ্য দিয়ে কাজ করতে হবে। আর প্রাধাণ্য পাবার ক্ষেত্রে তরুণ সমাজ থাকবে সর্বাগ্রে। এটা হলো বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদী-যার ফলাফল হবে অচিন্তনীয় ।

লেখক: প্রভাষক, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

এসএইচ/