ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

যে অ্যাপ দিয়ে বানানো হয়েছিল ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিও 

প্রকাশিত : ০৫:৪৩ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৫:৪৩ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার

"এই মনে করেন ভাল্লাগে, খুশিতে ঠ্যালায়, ঘোরতে..." এই কথাগুলোর আবির্ভাব বেশ কয়েকবছর আগে হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে আপলোড হওয়া একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর।   

দুই বোন অর্শিয়া সিদ্দিকা রোদসী ও আসনা সিদ্দিকার শখের বশে বানানো ভিডিও যে এতটা জনপ্রিয়তা পাবে - তা তারা চিন্তাও করেননি।

একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের রিপোর্টের একটি অংশকে ব্যাঙ্গাত্মকভাবে পুনরায় নির্মাণ করে চীনা মিউজিক্যাল ডাবিং অ্যাপ টিকটকে আপলোড করার পর রাতারাতি তা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে।

যে অ্যাপ দিয়ে দুই বোন শখের বশে ভিডিওটি বানিয়েছিলেন, সেই অ্যাপটির নাম টিকটক যা খুব দ্রুতই অতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সারা বিশ্বে।

টিকটক অ্যাপটি কী?

চীনে তৈরি সামাজিক মাধ্যমের এই অ্যাপটি দিয়ে অর্শিয়া আর তার বোন আসনার মতো অল্পবয়সী লক্ষ লক্ষ ছেলে-মেয়ে পরিচিত ফিল্মী ডায়লগ বা গানের সঙ্গে নিজেরা অভিনয় করে মজার মজার ভিডিও বানাচ্ছেন।

তবে ১৫ সেকেন্ডের থেকে বড় ভিডিও বানানো যায় না এই অ্যাপে, আর নিজের স্বর ব্যবহার করতে পারবেন না। যাকে বলা হয় `লিপ সিঙ্ক`, অর্থাৎ ঠোঁট নাড়া।

২০১৬ সালে টিকটকের যাত্রা শুরু হয়েছিল, আর দুবছরের মধ্যেই এর জনপ্রিয়তা হু হু করে বেড়ে যায়।

২০১৮-র অক্টোবরে আমেরিকায় সব থেকে বেশি ডাউনলোড করা অ্যাপ ছিল এই টিকটক। ভারতে দশ কোটিরও বেশি মানুষ টিকটক ডাউনলোড করেছেন ইতিমধ্যেই।

ইকোনমিক টাইমস পত্রিকা লিখছে, প্রতিমাসে গড়ে প্রায় দুই কোটি মানুষ টিকটক ব্যবহার করছেন । গুগল প্লে স্টোরে আশি লক্ষেরও বেশি ভারতীয় এই অ্যাপটির রিভিউ করেছেন।

বলিউড স্টারেদের অনেকেই এই অ্যাপটিকে নিজেদের পছন্দের তালিকায় রেখেছেন।

তবে টিকটক ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটা বড় অংশের মানুষই ভারতের গ্রামগঞ্জ আর ছোট শহরের বাসিন্দা।

যারা কিছুটা অভিনয় করেন বা কমেডি করতে পারেন, তাদের নিজেদের প্রতিভা সবার সামনে তুলে ধরার জন্য ওই সব গ্রাম বা ছোট শহরের বাসিন্দাদের কাছে টিকটক একটা নতুন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উঠে এসেছে।

রোজগারের মাধ্যমও হয়ে উঠছে টিকটক

বেশ কিছু মানুষের কাছে টিকটক আবার রোজগারেরও মাধ্যম হয়ে উঠেছে। যেমন ভারতের হরিয়াণার বাসিন্দা সাহিল। তার তিন লক্ষেরও বেশি ফলোয়ার আছে টিকটকে।

বিবিসিকে তিনি বলেন, "নিজের ভিডিও আপলোড করে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্তও পেয়েছি আমি।"

তার একাউন্ট এখনও `কমলা` চিহ্ন পায় নি, সেটা পাওয়া গেলে ফলোয়ারের সংখ্যা লাখ-দশেক হয়ে যাবে বলেই সাহিলের আশা।

ফেসবুক বা টুইটারে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টগুলোতে যেমন নীল টিক চিহ্ন দেওয়া থাকে, টিকটকের ক্ষেত্রে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টগুলিতে কমলা চিহ্ন দেওয়া হয়।

নিয়মিত হাস্যকৌতুক রেকর্ড করে উইগো অ্যাপে আপলোড করেন বিহারের বাসিন্দা উমেশ। মাসে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা রোজগার হয় তা থেকে।

"আমার মতো গরীব মানুষের কাছে মাসে দশ হাজার অনেক টাকা। আমি ভাবছি টিকটক অ্যাপটাও ব্যবহার করা শুরু করব," উমেশ জানান।

এই অ্যাপে অভিনয় বা নাচ করে আপনার রোজগার কত হবে তা নির্ভর করবে আপনি কত লাইক বা কমেন্ট পেলেন কিংবা আপনার ভিডিও কত মানুষ শেয়ার করল তার ওপর ।

টিকটক: গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ

তবে টিকটকের সবকিছুই যে ভাল, কোনও মন্দ দিক নেই - তেমনটি নয়।

যদিও ১৩ বছরের বেশি বয়সীদেরই এই অ্যাপ ব্যবহার করার কথা, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ১৩র থেকে কমবয়সীরাও টিকটক ব্যবহার করছে এবং তাদের সংখ্যাটা বেশ বড়।

`প্রাইভেসী`রও একটা সমস্যা রয়েছে এই অ্যাপে। মাত্র দুই ধরণের প্রাইভেসী সেটিং আছে - একটা হচ্ছে `ওনলি` আর `পাবলিক`।

অর্থাৎ আপনার বানানো ভিডিও হয় শুধু আপনি দেখতে পাবেন, অথবা তা সব অ্যাপ ব্যবহারকারীর জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে। মাঝামাঝি কোনও জায়গা নেই।

এই অ্যাপটির মাধ্যমে যে কেউ আপনাকে ফলো করতে বা মেসেজ করতে পারে।

অসামাজিক মনোবৃত্তির মানুষরা তাই সহজেই কমবয়সী ব্যবহারকারী, বিশেষ করে ছোট মেয়েদের প্রলোভন দেখাতে পারে।

তথ্য-প্রযুক্তি পত্রিকা `গ্যজেট ব্রীজ`এর সম্পাদক সুলভ পুরির কথায়, "অ্যাপটি তো অন্তত এটুকু করাই উচিত, যাতে ১৬ বছরের কম বয়সী কেউ টিকটক ব্যবহার না করতে পারে, তা সুনিশ্চিত করা।"

এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তি ও গ্যাজেট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই ধরণের বেশিরভাগ অ্যাপই আজকাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে কাজ করে। তাই একবার এইসব অ্যাপে নিজের যে কোনও তথ্য আপনি দেবেন, সেগুলো চিরকালের মতো তাদের কাছে থেকে যাবে।

যে অ্যাপ হাস্যকৌতুকের জন্য ব্যবহার করছেন, তা যেন কোনও বড় বিপদ ডেকে না আনে, সতর্কতা বিশেষজ্ঞদের।

এসি