ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

পাটকাঠির চারকোল রফতানিতে আড়াই হাজার কোটি টাকার সম্ভাবনা

প্রকাশিত : ০৭:১১ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার

পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত অ্যাক্টিভেটেড চারকোল রফতানির মাধ্যমে বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে দাবি করছেন খাতসংশ্লিষ্ট মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে পণ্যটির উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধির জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে সরকার। গতকাল এক মতবিনিময় সভায় এসব আলোচনা হয়।

গতকাল বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, দেশে ২০১২ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে পাটকাঠি থেকে অ্যাক্টিভেটেড চারকোল উৎপাদন শুরু হয়। ওই বছরই চীনে পণ্যটি রফতানি করা হয়। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চারকোলের চাহিদা রয়েছে। দেশে পণ্যটির উৎপাদন বাড়লে ভবিষ্যতে জাপান, ব্রাজিল, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, কানাডা, মেক্সিকোসহ বিভিন্ন দেশে চারকোল রফতানি সম্ভব হবে।

সভায় আরো জানানো হয়, বর্তমানে বিদেশে চারকোল দিয়ে ফেসওয়াশ, ফটোকপি মেশিনের কালি, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে এ অ্যাক্টিভেটেড কার্বন ব্যবহূত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান চারকোল উৎপাদন করছে। জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চারকোল উৎপাদন শুরু হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়।

চারকোল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ টন পাটকাঠি উৎপাদন হয়। এর ৫০ শতাংশ যদি চারকোল উৎপাদনে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টন চারকোল উৎপাদন সম্ভব হবে। এ পরিমাণ চারকোল বিদেশে রফতানির মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। পাশাপাশি সারা দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানও তৈরি হবে।

চারকোল শিল্পকে একটি উদীয়মান শিল্প হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মির্জা জিল্লুর রহমান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও পাটজাত পণ্য হিসেবে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ শিল্পের বিকাশে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত বা সহযোগী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের সুযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি এ শিল্পের জন্য দ্রুত পৃথক নীতিমালা তৈরি করতে হবে এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা ও ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, পাটকাঠি থেকে অ্যাক্টিভেটেড চারকোল উৎপাদন বাংলাদেশের রফতানি খাতের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। কৃষকরা পাট উৎপাদন করে আগের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন। ফলে দিন দিন পাট চাষ ও উৎপাদন বাড়ছে। চারকোল উৎপাদন ও রফতানি বাড়াতে সরকার সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবে। পাট থেকে যত বেশি বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করা যাবে, সোনালি আঁশের হারানো ঐতিহ্য তত দ্রুত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

মন্ত্রী আরো বলেন, নতুন হওয়ায় এ খাতে কিছু সমস্যা রয়েছে। সরকার এসব বিষয়ে অবগত। সমস্যা দূরীকরণে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহায়তা দেবে। এ বিষয়ে শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।