কুষ্টিয়া মেডিকেলের ছাদ ধসে নিহত ১
প্রকাশিত : ০৯:৪০ এএম, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৯:৪৭ এএম, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার
কুষ্টিয়া মেডিকেলের নির্মাণাধীন হাসপাতালের মূল ভবন ধসে পড়ে মারা গেছেন বজলুর রহমান নামের এক শ্রমিক। ভবন ধসে চাপা পড়ে আরো চার শ্রমিক আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে।
গতবছর নির্মাণাধীন হাসপতালটি নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। তবে এমন অভিযোগের তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ঘটনাটি দক্ষিণের জনপদ কুষ্টিয়ার। কুষ্টিয়া শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের হাউজিংয়ের বিপরীতে নির্মাণ করা হচ্ছে কুষ্টিয়াবাসীর বহু প্রত্যাশিত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই নির্মাণ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কম খরচে সঠিক ও উন্নত সেবা নিশ্চিত করা।
একই সঙ্গেওই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। উল্টো হাসপাতাল ভবনের তৃতীয় তলার ছাদ ধসে কংক্রিটের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন শ্রমিক বজলুর রহমান।
যে হাসপাতাল থেকে কম খরচে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছিলেন বজলুর রহমান, সে হাসপাতালের ভবন ধসেই মর্মান্তিক মৃত্য হলো তাঁর। ঠিকাদারের খামখেয়ালি ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ল এই দিনমজুরের পরিবার।
২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদনের পর কেন প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি তা দেখতে গত বছর মাঠপর্যায়ে সরেজমিন পরিদর্শনে যায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ওই সময়কার পরিচালক ডা. আখতারুজ্জামানসহ একটি প্রতিনিধিদল। পরিদর্শন শেষে তিনি এই প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠান।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা একনেকে অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো ভবন নির্মাণ করছে। একই সঙ্গে দর বাড়িয়ে কার্যাদেশ নেওয়া হয়েছে। সব কটি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেই নকশা পরিবর্তনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে আইএমইডি বলেছে, বেঁধে দেওয়া ব্যয়ের সীমা লঙ্ঘন করে অনুমোদন না নিয়েই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, যা ক্রয় আইনের ‘গুরুতর লঙ্ঘন’। অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় মাঝখানে কিছু সময় বরাদ্দও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। গতকাল যে ভবনটি ধসে পড়ে, সে ভবন নির্মাণেও অনিয়ম খুঁজে পায় আইএমইডি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, হাসপাতাল ভবনের এক লাখ ৫৫ হাজার বর্গফুট ভিত্তির পরিবর্তে করা হয়েছে এক লাখ ৩৮ হাজার বর্গফুট, যা অনুমোদিত নকশার চেয়ে ১৭ হাজার বর্গফুট কম। নকশায় হাসপাতাল ভবনটি ১০ তলা ভিত্তির ওপর সাততলা নির্মাণের কথা থাকলেও তা করা হয়েছে ১০ তলা ভিত্তির ওপর তিনতলা। গতকাল তৃতীয় তলার ছাদই ধসে পড়ে। এ ভবনের জন্য ১১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৯২ কোটি টাকার চুক্তি হয়।
জানতে চাইলে গতকাল রাতে ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমি সরেজমিন গিয়ে প্রকল্পটিতে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র দেখতে পাই। ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছিল নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। আমি আমার প্রতিবেদনে সেসব কথা উল্লেখ করেছি। তখন যদি ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে আজ এত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটত না।
আইএমইডির ভারপ্রাপ্ত সচিব আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়েজুল্লাহ বলেন, ‘যেকোনো প্রকল্পের গুণগত মান নিশ্চিত করা হচ্ছে কি না তা দেখার দায়িত্ব আইএমইডির। কুষ্টিয়ায় যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, তা সরেজমিন দেখতে আমি আমার সংশ্লিষ্ট শাখার মহাপরিচালককে দ্রুত পাঠাব। তারপর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
এলাকাবাসী জানিয়েছে, নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট উদ্ধার অভিযান শুরু করে। এক ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে বজলুর মৃহদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর বাড়ি কুমারখালী উপজেলার চড়াইকোল গ্রামে।
টিআর/